ফিচারবিখ্যাত ব্যক্তিবিনোদন জগৎ

৭৯ বসন্তে আবুল হায়াত

৭৯ বসন্তে পা রেখেছেন শক্তিমান অভিনেতা আবুল হায়াত। আজ জন্মদিন এই দেশবরেণ্য অভিনেতার। অভিনেতার পাশাপাশি গুণী এই মানুষটি নাট্যকার এবং নির্দেশকও।

আজকের এই দিনটি কীভাবে উদযাপন করবেন তিনি?

জানালেন জন্মদিন বিশেষভাবে উদযাপনের কোনো পরিকল্পনা নেই এই অভিনেতার। তবে নিজের ৭৯ তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে তিনি আজ দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে থেকে ‘তারকা কথন’ শিরোনামের একটি অনুষ্ঠানে দেখা গেছে তাকে। চ্যালেন আইতে অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হয়েছে।

নিজের জন্মদিন নিয়ে আবুল হায়াত বলেছেন, জন্মদিনে একটাই চাওয়া তার, তিনি যেন তার অসমাপ্ত কাজগুলো সঠিকভাবে সম্পন্ন করে যেতে পারেন। জানালেন আজকাল অভিনয়ের চেয়ে তিনি লেখালেখির দিকে মনোযোগ বেশি বাড়াচ্ছেন। হাত দিয়েছেন নিজের আত্মজীবনীতে। জন্মদিনে তিনি তার দুই মেয়ে এবং পরিবারের সবাইকে মিস করছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। নিজের জন্য দেশের সবার কাছে দোয়া চেয়ে তিনি আরও বলেন তিনি যেন নিজের স্ত্রী শিরীন ও সন্তান, নাতি নাতনীদের নিয়ে যেন ভালো থাকতে পারেন। নিজের জীবন নিয়ে কৃতজ্ঞ হয়ে তিনি আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জ্ঞাপন করে বলেছেন, ‘জীবনে অনেক প্রাপ্তি। মহান আল্লাহর কাছে কোটি কোটি শুকরিয়া।’

বরেণ্য এই অভিনেতার জন্ম পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে। ১৯৪৪ সালের আজকের এই দিনে পৃথিবীতে এসেছিলেন তিনি। তবে তার জন্ম ভারতের পশ্চিমবঙ্গে হলেও তার পরিবার দেশ বিভাগের পর চলে এসেছিলেন এদেশে। বসবাস করতেন চট্টগ্রামে। গুণী এই অভিনেতা পড়াশোনার দিক থেকেও ছিলেন যথেস্ট মেধাবী। তিনি বুয়েট থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়াশোনা শেষ করেন। এরপর প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করেছেন ওয়াসায়। সেদিনের সেই ইঞ্জিনিয়ারই নিজের ভালো লাগার জায়গা অভিনয় শুরু করেন। আর হয়ে ওঠেন দেশের টিভি নাটকের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রিয় ‘বাবা’ চরিত্রটি।

আরও পড়ুন# চিত্রনায়িকা শিমুকে হ’ত্যার ভয়াবহ বর্ণনা দিলেন স্বামী!

খ্যাতিমান এই অভিনেতার অভিনয়ের পথচলা কিন্তু শুরু হয়েছিল থিয়েটারের মাধ্যমে। বর্তমানে আবুল হায়াত দেশের অন্যতম নাট্যদল নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের সাথে একসাথে কাজ করছেন। এই দলের সাথে সর্বশেষ ‘দেওয়ান গাজীর কিসসা’ নাটকে মঞ্চে অভিনয় করেছেন তিনি। এই নাটকটির নির্দেশক ছিলেন আরেকজন খ্যাতিমান অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূর।

থিয়েটারে অভিনয় শুরু করা এই অভিনেতা পরবর্তীতে বিভিন্নত টেলিভিশন নাটক ও সিনেমায় অভিনয় করেছে। তার প্রতিটি নাটক, সিনেমা দর্শকনন্দিত হয়েছে। দর্শকদের প্রবল ভালোবাসা ও দুর্দান্ত অভিনয় তাকে এনে দিয়েছে তারকাখ্যাতি। ৭৯ বছর বয়সে এসেও এখনো সমানভাবে সফলতার সাথে অভিনয় করে যাচ্ছেন তিনি। অভিনয়জীবনের পাশাপাশি বিবাহিত জীবনেও অনেক সুখী তিনি।

বরেণ্য এই অভিনেতা দীর্ঘ বছর ধরে যুক্ত আছেন টিভি নাটক, সিনেমা আর বিজ্ঞাপনের সাথে। তার প্রথম নাটক প্রচার হয় ১৯৬৯ সালে। নাটকটির নাম ‘ইডিপাস’। এরপর একে একে ৫০০ এর বেশী নাটকে তিনি কাজ করেছেন।

প্রতিটি কাজেই তিনি সফলতার সাথে অভিনয় করেছেন এবং করে যাচ্ছেন। বিখ্যাত লেখক হুমায়ূন আহমেদ লেখালেখির পাশাপাশি নাটকেও সমানভাবে জনপ্রিয় ছিলেন। আবুল হায়াত হূমায়ুন আহমেদের প্রচুর নাটকে অভিনয় করেছেন। ‘মিসির আলি’ তার একটি অতি জনপ্রিয়  চরিত্র।

অসাধারন অভিনয়ের জন্য তিনি সারাজীবনে নানা পুরষ্কার অর্জন করেছেন। হূমায়ুন আহমেদের দারুচিনী দ্বীপ (২০০৭) সিনেমায় অভিনয়ের জন্য পেয়েছেন জাতীয় পুরষ্কার।  ২০১ সালে অভিনয়ে তার বিশেষ ভূমিকার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে একুশে পদকে ভূষিত করেন।

অভিনয়ের পাশাপাশি গুণী এই শিল্পীর লেখালিখিতেও বেশ সুনাম রয়েছে। অভিনেতার বাইরে লেখক হিসেবেও একজন সফল লেখক তিনি। তার লেখা প্রথম উপন্যাস ‘আপ্লুত মরু’। এটি প্রকাশিত হয় ১৯৯১ সালের বই মেলায়। এরপর ‘নির্ঝর সন্নিকট’, ‘এসো নীপ বনে’, ‘অচেনা তারা’, ‘জীবন খাতার ফুট নোট’ ও ‘জিম্মি’ ইত্যাদি বইগুলো লিখেছেন আবুল হায়াত।

আরও পড়ুন# সালমান শাহ: বাংলার চিরসবুজ নায়ক!

এই অভিনেতা ব্যক্তিগত জীবনে ১৯৭০ সালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ে করেন মাহফুজা খাতুন শিরিনকে। ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ তাদের প্রথম সন্তান বিপাশা হায়াত পৃথিবীতে আসেন। তার ছয় বছর পর জন্ম হয় দ্বিতীয় মেয়ে নাতাশার। তার বড় মেয়ে বিপাশার বিয়ে হয় অভিনেতা-নির্মাতা তৌকীর আহমেদের সাথে। আরেক মেয়ে নাতাশার বিয়ে হয় অভিনেতা শাহেদের সঙ্গে। তার দুই মেয়ে সংসার জীবনে সফল ও সুখী মানুষ হিসেবে পরিচিত। বাবার মতোন তারাও বেশ গুণী।

এদিকে নিজের জন্মদিনে ভক্ত অনুরাগীদের বিশেষ কিছু উপহার দেওয়ার লক্ষ্যে আগে থেকেই পরিকল্পনা করে রেখেছিলেন আবুল হায়াত। সেজন্য লিখেছেন ‘শোধ’ শিরোনামের নতুন মঞ্চ নাটক। নাটকটি আগামী ১০ সেপ্টেম্বর সেগুনবাগিচার শিল্পকলা একাডেমির মূল মিলনায়তন মঞ্চে মঞ্চায়িত হবে। নাটকটি প্রযোজনা করছে স্টেজ ওয়ান ঢাকা এবং নির্দেশনা দিচ্ছেন ডমিনিক গোমেজ।

একুশে পদকপ্রাপ্ত ও জাতীয় পুরষ্কার পাওয়া বরেণ্য এই অভিনেতা বাংলাদেশের নাট্যজগতকে দিয়েছেন সমৃদ্ধি। দেশে বিদেশে বাংলা নাটককে এনে দিয়েছেন পরিচিতি।

জন্মদিনে অসংখ্য শুভেচ্ছা তাকে। তিনি সুস্থ ও দীর্ঘজীবী হোন এই কামনা থাকল।

Back to top button

Opps, You are using ads blocker!

প্রিয় পাঠক, আপনি অ্যাড ব্লকার ব্যবহার করছেন, যার ফলে আমরা রেভেনিউ হারাচ্ছি, দয়া করে অ্যাড ব্লকারটি বন্ধ করুন।