আবারও বাড়ছে চালের দাম!

প্রায় ১৯ লাখ টন চাল মজুদ থাকলেও সন্তুষ্ট ছিল না সরকার। সরকার এবং ব্যবসায়ী দু’পক্ষ থেকেই এসেছিল পাল্টাপাল্টি অভিযোগ। সেই শঙ্কাই যেন সত্যি হচ্ছে। চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকার আমদানি শুল্ক কমালেও এতে কাজ হচ্ছে না। শুল্ক কমানোর এক সপ্তাহের মাথায় দাম কিছুটা কমলেও এখন আবার বাড়তে শুরু করেছে। চাল রপ্তানিতে ভারত সরকারের ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রভাবে বাংলাদেশের বাজারে চালের দাম আবার বাড়ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
চট্টগ্রামের পাহাড়তলী, দেশে চালের অন্যতম বড় পাইকারি বাজার। সেখানে খোঁজ করলে দেখা যায়, গত সপ্তাহের তুলনায় এই সপ্তাহে ৫০ কেজির এক বস্তা চালের দাম ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেড়েছে।
দাম বাড়ার বিষয়ে বাজারের জিসান রাইস এজেন্সির পরিচালক শুধাংশু সাহা জানান, ‘গত সপ্তাহের মাঝামাঝি থেকে চালের বাজার আবার বাড়তির দিকে। এখন বস্তায় ৫০ টাকার মতো বাড়ছে। গতকাল আমি চালের জন্য উত্তরবঙ্গের এক ব্যবসায়ীকে ফোন করেছিলাম। তিনি গত সপ্তাহে আমাকে যে দামে চাল দিয়েছেন, এখন এর চেয়ে ৫০ টাকা বেশি চাইছেন প্রতি বস্তায়।’
এদিকে চট্টগ্রামের চাক্তাই ও পাহাড়তলী বাজারে খোঁজ নিয়েও দেখা যায়, সেখানে ৫০ কেজির প্রতি বস্তা জিরাশাইল বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৪০০ থেকে ৩ হাজার ৪৫০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগেও এই চাল বিক্রি হয় ৩ হাজার ৩৫০ থেকে ৩ হাজার ৪০০ টাকায়।
আরও পড়ুন: চালের যথেষ্ট মজুত আছে, তবুও শঙ্কায় সরকার!
আশঙ্কার বিষয়, শুধু জিরাশাইল নয়, বাজারে এখন সব ধরনের চালের দাম ৫০ কেজির বস্তায় গড়ে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বাড়ছে। প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) মোটা সিদ্ধ চাল বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ১৫০ টাকায়। স্বর্ণা সিদ্ধ প্রতি বস্তা ২ হাজার ৩৫০, পাইজাম সিদ্ধ ২ হাজার ৭০০, বালাম সিদ্ধ ২ হাজার ৫০০, বাসমতী সিদ্ধ ৩ হাজার ৪৫০, কাটারি সিদ্ধ ৩ হাজার ৮৫০, নাজিরশাইল প্রতি বস্তা ৩ হাজার ৮৫০ থেকে ৩ হাজার ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া, ইরি আতপ প্রতি বস্তা ২ হাজার ১০০ টাকা, বেতি আতপ ২ হাজার ৪০০ টাকা, মিনিকেট আতপ ২ হাজার ৭০০ টাকা, পাইজাম আতপ ২ হাজার ৫৫০ টাকা, কাটারি আতপ ৩ হাজার ৮৫০ টাকা এবং চিনিগুড়া প্রতি বস্তা ৬ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা ভাষ্যমতে, চাল আমদানিতে ভারত সরকার শুল্কারোপ করার পর চাল আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন আমদানিকারকেরা। যে কারণে দেশীয় চালের বাজারে চাপ বাড়ছে। এ সুযোগে মিলাররাও দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন।
তবে কমতির দিকে থাকা চালের দাম বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি মানতে পারছেন না ক্রেতারা। তাঁরা বলছেন, এত দ্রুত দাম বাড়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। আগের এলসি করা চাল তো এখনো আসছে। তাহলে এখন আবার দাম বাড়বে কেন? দেশে উৎপাদিত চালের মজুতও এখনো শেষ হয়নি।
এ প্রসঙ্গে পাহাড়তলী বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন বলেন, চাল রপ্তানিতে ভারত সরকার ২০ শতাংশ কর আরোপ করেছে। এ কারণেই এখন আবার চালের দাম বাড়তে শুরু করেছে।
এদিকে ভারত আতপ চালের ওপর শুল্কারোপ করলেও সিদ্ধ চালের দাম বাড়ছে কেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখানে তো একটা কারসাজি আছেই। ভারতের করারোপের বিষয়টি সামনে এনে মধ্যস্বত্বভোগী ও মিলাররা দেশে চালের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। না হলে তো সিদ্ধ চালের দাম বাড়ার কথা না। এখন মিলাররা দাম বেশি নেওয়ায় আমাদেরও বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।’