কাশ্মীর আসলে কার?

বর্তমান পৃথিবীতে যুদ্ধ আর সংঘাত যে কয়েকটি অঞ্চল রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম একটি অঞ্চল হল কাশ্মীর। শুধু যুদ্ধ আর সংঘাতে আজ এক অলিখিত দোজকে পরিণত হয়েছে কাশ্মীর। পাকিস্তানিদের দাবি যে কাশ্মীর তাদের, ওদিকে ভারতীয়রা বলে কাশ্মীর তাদের! আবার চীনও মাঝে মাঝে কাশ্মীর দাবি করে! আর তাদের নিয়ে এই টানাটানিতে আজ কাশ্মীর আসলে কারওই হতে চায় না। প্রকৃত অর্থে ওরা মুক্তি চায়, স্বাধীন ভাবে একটু বাঁচতে চায়। প্রকৃত অর্থে ওরা আজাদি চায়। তো চলুন, কাশ্মীর আসলে কার, সে বিষয়ে জানা যাক!
কাশ্মীর আসলে কার?
কাশ্মীরের এই দুরাবস্থার মূলে রয়েছে ব্রিটিশরা। ব্রিটিশদেরকে মানুষ আসলে এমনিতেই গালমন্দ করে না। গাল মন্দ করার যথেষ্ট কারণও রয়েছে। কারণ তাদের কূট চালের কারণে প্রায় সব স্থানেই কম বেশি সমস্যা হওয়ার মতো অবস্থান রেখে গিয়েছে।যার জ্বলন্ত একটা উদাহরণ হিসেবে কাশ্মীরকে বলতে পারি। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে যখন ভারত এবং পাকিস্তান ভাগ হয়। তখন তৃতীয় প্রতিদ্বন্দ্বী অঞ্চল হিসেবে ছিল কাশ্মীর। কাশ্মীরের অন্যতম জম্মু এবং কাশ্মীর অঞ্চল ভূরাজনৈতিক হটস্পট। কারণ এই এ অঞ্চলে রয়েছে অনেক জাতি এবং পুরোনো কিছু সংস্কৃতি। এই অঞ্চলটিতে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ এবং অসংখ্য দেশীয় আধ্যাত্মিক ঐতিহ্য রয়েছে। এই দেশটিতে প্রবাহিত হয়েছে শান্তির স্রোতধারা নদ “ছিলাম নদ”।
কিন্তু বর্তমানে এ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যময় স্থানটি যুদ্ধ সংঘাতের এক ভিন্ন গ্রহের মতো অন্যতম বিপজ্জনক স্থান হিসেবে গড়ে তুলেছে ভারত ও পাকিস্তান। কাশ্মীরের পরিচয় এবং সার্বভৌমত্ব সম্পর্কে নির্যাতনমূলক প্রশ্ন বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে।ভারতের মুসলমানদের গঠিত জাতি হিসেবে পাকিস্তান দীর্ঘকাল ধরে বিশ্বাস করছে যে কাশ্মীর তাদেরই অন্তর্গত কারণ সামাজিক ও ধর্মীয় সংস্কৃতির দিক থেকে কাশ্মীর পাকিস্তানিদের মতোই। কিন্তু এই ক্ষেত্রে ভারত ধর্মনিরপেক্ষতার পরিচয় দিচ্ছে এবং তারা আবার দাবি করতেছে কাশ্মীর তাদের।
১৯৪৭ সালে কাশ্মীর কয়েক মাস স্বাধীন ছিল। কারণ কি জানেন? ওই সময়ে ভারত ও পাকিস্তান আলাদা রাষ্ট্র হয় আর ওই দিকে কাশ্মীর একটি খণ্ড যার দিকে কোনো দেশেই এত আগ্রহ ছিল না। কিন্তু দিন যত যায় কাশ্মীর তত ভারত ও পাকিস্তানিদের নজরে আসতে থাকে। আর এ নজরে আসার কারণ হলো- কাশ্মীর হতে পারতো পর্যটন এলাকা! কারণ কাশ্মীর প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এবং সবুজ পাহাড়ের রূপ পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করত।
আর এসব দিক থেকে জম্মু ও কাশ্মীর অঞ্চলে ভূরাজনৈতিক হটস্পট হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত ৭০ বছরে এ পার্বত্য অঞ্চলের জন্য পর্যায়ক্রমে যুদ্ধ লেগে রয়েছে ভারত পাকিস্তান এর। ১৯৪৭ থেকে ১৯৯৯ সালের মধ্যে ভারত এবং পাকিস্তান অন্তত তিনবার যুদ্ধে জড়িয়েছে। এ ছাড়াও ছোটো খাটো যুদ্ধ তো আছেই। আর এ সকল দ্বন্দ্ব বা যুদ্ধ কি শুধু তাদের নিজেদের ক্ষতি করছে কিংবা কাশ্মীরের ক্ষতি করছে? উত্তরটা হবে না! কারণ এসব যুদ্ধ সংঘাত যদি না থাকত তাহলে নিজেদের পারস্পারিক কল্যানেও কাজ করতে পারতো। শুধু তাই নয় সে সম্পর্কের প্রভাবটা আর্ন্তজাতিক ভাবেও সুন্দর একটা প্রভাব ফেলত।
আরও পড়ুন: বই এবং বই পড়া!
আর এখন আন্তর্জাতিক উদ্বিগ্নের একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছ কাশ্মীর। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক এলাকায় ভারতবর্ষ ভাগের সময় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠের রাষ্ট্রগুলি পাকিস্তানে গিয়েছে এবং হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্রগুলি গিয়েছিল ভারতে। আর এ দিকে কাশ্মীরে ঘটেছিল এক বিচিত্র ঘটনা। জনসংখ্যার বেশির ভাগ মুসলিম হলেও শাসক ছিলেন একজন হিন্দু মহারাজা যার নাম ছিল “হরি শিং”। তিনি নিজের ইচ্ছায় ভারতকে বেছে নিয়েছিলেন! কিন্তু মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বেশিরভাগ মানুষ ভারতের সঙ্গে থাকতে চায় না।তারা পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত হতে চায় অথবা নিজের স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন করতে চায়।
সেই অতীত কাল থেকেই দেখা যায়, কাশ্মীরকে নিয়ে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনায় বিশ্বজুড়ে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ দুদিন পর পর এদিক ওদিক দিয়ে বন্দুকের আওয়াজ পাওয়া যায়। কাশ্মীরের জনগণ স্বাধীনতার জন্য কান্নাকাটি করলেও এর উত্তর এখন পর্যন্তও অস্পষ্ট। বিশ্বজুড়ে এখন এমন একটা শঙ্কা হয়ে দাড়িয়েছে যে, “একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে কাশ্মীর কখনো স্থায়ী হবে না”। বর্তমানে কাশ্মীর ৩ টি পারমাণবিক রাষ্ট্র দ্বারা আবিষ্ঠিত। এবং একাদিক সংঘাতে জর্জরিত আর সে জর্জরিতের বিচার কার কাছে চাইবে ভারত না পাকিস্তান? আন্তর্জাতিক গবেষকরা পূর্বাভাস দিয়েছেন যে, একদিন স্বাধীন কাশ্মীর নৈরাজ্য এবং সন্ত্রাসবাদের আঘাতে দ্রুত চূর্ণ-বিচূর্ণ হবে। আশঙ্কা রয়েছে যে, এই জাতীয় জাতি এবং কেবল অন্য একটি সন্ত্রাসী শাসিত রাজ্যে পরিণত হবে। কারণ সব সময় অন্যায় অত্যাচারিত জাতির এমন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রাচীন মহারাজা “মহারাজা হরি সিং” স্বাক্ষরিত কাশ্মীর ন্যায্যভাবে ভারতকে দিয়েছিল, আবার অন্যদিকে ঐতিহাসিকভাবে পাকিস্তান বিশ্বাস করে যে, ভারতের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল এমন একজন শাসকের হাত থেকে যিনি জনগণের প্রতিনিধিত্ব করেননি। তারা বিশ্বাস করে যে, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীর তাদের সাথে এক হওয়া উচিত। এ ছাড়াও কাশ্মীরের কৌশলগত অবস্থান ও অন্যান্য দিক বিবেচনায় পাকিস্তান গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা অবশ্যই ভোগ করতে চাইবে। কারণ পাকিস্তান মূলত কাশ্মীরি নদীর উপর নির্ভরশীল। কাশ্মীরের ওপর যদি ভারতের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকে তবে ভারত হয়তো পাকিস্তানের কৃষিকে পঙ্গুও করে দিতে পারে। এবং খরার প্রবণতাও ঘটাতে পারে যা পাকিস্তানের জন্য এক ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে ধারণা করা যায়।
কাশ্মীরই হচ্ছে পাকিস্তান এবং চীনের একমাত্র প্রত্যক্ষ যোগসূত্র যার মাধ্যমে পাকিস্তান ও চীন আর্থিক কিংবা বাণিজ্যিক কাজ করে থাকে। চীন পাকিস্তানের সামরিক সম্পর্ক এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য এটিকে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। চীন পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর কাশ্মীর দিয়েও যায়। যে কারণে ইদানীং পাকিস্তান ও চীনের মধ্যে ভালো একটা সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। আর অন্যদিকে ভারত ও চীন একে অপরের শুত্রু। পাকিস্তান কাশ্মীর হারালে চীনের সাথে সরাসরি সংযোগ বিচ্ছিন্ন হবে, ফলে তারা তাদের বাণিজ্যিক কাজ করতে সক্ষম হবে না। কেন না অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে চীনের সাথে এই প্রত্যক্ষ যোগসূত্রটি পাকিস্তানের জন্য অনেক গুরুত্ববহ। আবার অন্যদিকে কাশ্মীরের ওপর যদি ভারতের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকে তবে সেটি পাকিস্তান সীমান্ত সুরক্ষার জন্য বিরাট হুমকি। কারণ পাকিস্তান বিশ্বাস করে যে, কাশ্মীর হারিয়ে গেলে তারা ভারতের করুণার পাত্র হবে। আর এ দিক গুলো চিন্তা করেই আজ পাকিস্তান ও ভারত কাশ্মীরকে নিয়ে যুদ্ধ সংঘাতে লেগেই রয়েছে।
তো, আমাদের শুরুর প্রশ্নটির উত্তর আশা করি বুঝে গেছেন- কাশ্মীর আসলে কার? কাশ্মীর আসলে ভারত কিংবা পাকিস্থান কারও না! তারা স্বাধীন দেশ / রাজ্য ছিল! এখনো তেমনটা থাকাই উচিত এবং সবার আশা!