ফ্যাক্ট চেকিং

কী হবে যদি মৌমাছি বিলুপ্ত হয়ে যায়

পৃথিবীতে মৌমাছি প্রাণীদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ অপরিসীম। মৌমাছি সেই আদি যুগ থেকে পরাগায়নের সাহায্য করে আসছে। প্রকৃতিতে প্রায় 16 হাজারেরও বেশি প্রজাতির মৌমাছি রয়েছে। এদের মধ্যে যারা মধু সংগ্রহ করে এই মৌমাছি সকলের কাছে বেশ পরিচিত। এছাড়াও আছে, বাম্বল বি, ম্যাসন বি, কারপেন্টার বি-সহ আরো অনেক প্রজাতির মৌমাছি। অ্যান্টার্কটিকা ছাড়া আর সব মহাদেশেই আছে উড়ন্ত উপকারি এই প্রাণির বিচরণ।

মধু সংগ্রহের জন্য মৌমাছি ফুল থেকে ফুলে ফুলে বা ফুলের গাছে গাছে বিচরণ করে। একই সাথে মধু সংগ্রহ ও পরাগায়ন ঘটায় মৌমাছি। যা পরিবেশের জন্য খুবই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। শস্য উৎপাদ ভূমিকা পালন করে। মৌমাছিসহ অন্যান্য পোকামাকড় পরিবেশে ৯০ শতাংশ পরাগায়ন ঘটায়, ৭৫ শতাংশ শস্যের পরাগায়ন ঘটায়, কৃষিকাজে ৩৫ শতাংশ পরাগায়ন ঘটায়। কিন্তু বন নিধন, বায়ু দূষণ, পরিবেশ দূষণ আর জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সারাবিশ্বে আশঙ্কাজনকহারে কমছে মৌমাছি।

তার সাথে বাহাদুর, হামিংবার্ড, প্রজাপতি, বিভিন্ন কীটপতঙ্গ প্রকৃতির জীব বৈচিত্র্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা গবেষণা করে বলেছেন, বন্যপ্রাণী রক্ষা করা খুব জরুরী। পৃথিবী থেকে যদি মৌমাছি বিলুপ্ত হয়ে যায় আশঙ্কা জনকভাবে কমবে খাদ্য উৎপাদন। ফ্রেশ খাবারের দাম বেড়ে যাবে। দুর্ভিক্ষে ভোগবে সবাই। অসহায় পড়ে যাবে দরিদ্র দেশ গুলোর মানুষ। যারা সব সময় পুষ্টি খাবারের জন্য কষ্ট করতে পারে।

পৃথিবী থেকে মৌমাছি বিলুপ্ত হলে বিলুপ্ত হতে পারে বিভিন্ন ধরনের ফল, যেমন- আঙ্গুর, কমলা, আপেল, নাশপাতি, বড়ই ইত্যাদি। তাছাড়া সরিষার তেল উৎপাদন ও বিঘ্ন করতে পারে। চকলেট কফি উৎপাদনে বিঘ্ন ঘটবেই। বন্ধ হয়ে যাবে কোটি কোটি মানুষের খাবারের যোগদান। হতে পারে বিভিন্ন ধরনের ফুল। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্য একটি সংস্থা বলেছেন, ব্রিটেনে ২০১৯ সালে ১৭ ধরনের মৌমাছির প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গেছে, এবং ২৫ ধরনের মৌমাছি প্রজাতির পথে আর সংরক্ষণ করা হয়েছে মাত্র ৩১ ধরনের প্রজাতি মৌমাছি কে।

ইউরোপের বন্য প্রাণীর সংরক্ষণ রিপোর্টে বলা হয়েছে, ১২ প্রজাতির বন ও মৌমাছি বিলুপ্ত হওয়ার পথে। অন্য দিকে আর একটি রিপোর্ট বলেছেন ৫২ প্রজাতির মৌমাছি বিলুপ্ত হতে চলেছে। সারা বিশ্বে পরাগায়নের ভূমিকায় রাখে ৩৫ শতাংশ মৌমাছির প্রজাতি এবং ১৭ শতাংশ বাদর সহ অন্যান্য কীটপতঙ্গ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এভাবে চলতে থাকলো তা আলো,ভুট্টা ,গম, সবজি ,বাদামসহ অন্যান্য অনেক সবজির উৎপাদন হুমকির মুখে পড়বে।কিন্তু সমস্যা হলো মৌমাছি মারাত্মকভাবে কমে যাচ্ছে। গত এক দশকে মৌমাছির এক তৃতীয়াংশ বিলুপ্ত হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো কেন বিলুপ্ত হচ্ছে মৌমাছি? এর অবশ্য বহু কারণ হয়েছে।

আরো পড়ুনঃ প্রাকৃতিকভাবে সুন্দর হওয়ার সহজেই উপায়

যার মধ্যে উল্লেখযুগ্য বিষয় হলো, কীটনাশন, খড়া, বাসস্থান হারানো, খাদ্যের অভাব, বায়ু দুষণ, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধিসহ আরো অনেক কারণ রয়েছে। এক কথায় সম্পূর্ণটাই হলো মানব সৃষ্ট কারণ। বড় বড় কীটনাশক কোম্পানিগুলো, কীটনাশন ও আগাছা নিধনকারী ওষুধ বানাচ্ছে ফসলকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে। যার মধ্যে রয়েছে নিওনিক্স , যা মৌমাছিদের মেরে ফেলে।

অর্থাৎ কীটনাশকের হাত থেকে ফসলকে রক্ষা করতে নয় বরং ধ্বংশের পথে ঠেলে দিচ্ছে।সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিওনিক্স সমৃদ্ধ কীটনাশকের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। মৌমাছির ওপর এর ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা তৈরিতেও কাজ করছে। কিন্তু ঐ একই উপাদান পাওয়া যাচ্ছে বাগানে ব্যবহৃত কীটনাশকেও। তাই কীটনাশক ক্রয় করার আগে এই উপাদান আছে কী না ক্ষতিয়ে দেখতে হবে।

Back to top button

Opps, You are using ads blocker!

প্রিয় পাঠক, আপনি অ্যাড ব্লকার ব্যবহার করছেন, যার ফলে আমরা রেভেনিউ হারাচ্ছি, দয়া করে অ্যাড ব্লকারটি বন্ধ করুন।