আন্তর্জাতিকফিচার

যেভাবে গদি হারালেন বরিস জনসন!

বরিস জনসন ক্ষমতায় এসেছিল নাটকীয় পরিস্থিতির মাধ্যমে। বিদায় নিলেনও নাটকীয়ভাবেই। গত বৃহস্পতিবার পদত্যাগের ঘোষণা দেন ব্রিটিশ এই প্রধানমন্ত্রী। সাবেক প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে-র আমলে সূক্ষ্ম চাল চেলে ক্ষমতায় আসেন বরিস। এরপর রাজনীতির স্বাভাবিক নিয়ম-নীতি গুলোকে তিনি এত দীর্ঘ সময় ধরে এমন ভাবে উপেক্ষা করে গেছেন যে এটা বিশ্বাস করা কঠিন, তিনি শেষ পর্যন্ত পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন! রাজনৈতিক দুরদর্শীতা দিয়ে বিভিন্ন আপদকালীন মুহুর্তে তিনি বার বার ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। বরিসের ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পিছনে বেশ কিছু ঘটনা কাজ করেছে। চলুন দেখে নেওয়া যাক বরিসের ক্ষমতায় আরোহণ ও ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পিছনে যে ঘটনাপ্রবাহ গুলো ভূমিকা রেখেছে…

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ

তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে-র মন্ত্রিসভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদে আসীন ছিলেন বরিস জনসন। বিভিন্ন রাজনৈতিক চাপে তেরেসা মে-র অবস্থা যখন তালমাতাল তখন পদত্যাগের ঘোষণা দিলেন বরিস। বরিসের পদত্যাগের পর পরিস্থিতি আরো কঠিন হতে থাকে। সামাল দিতে অনাস্থা ভোটের আয়োজন করে মে। তবে সে ভোটে জয়ী হয় মে। কিন্তু এর কিছুদিন পর তৃতীয়বারের মতো ব্রেক্সিট চুক্তি পাস করাতে না পারলে পদত্যাগে বাধ্য হয় মে। পুরো ঘটনাটি পর্যালোচনা করলে দেখা যায় তেরেসা মে-র ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পিছনে বরিসের পদত্যাগ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। পরবর্তিতে বরিস প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করে।

ক্রিস পিনচার-কে নিয়ে কেলেঙ্কারি

ক্ষমতা গ্রহণের পর যে ইস্যুটি বরিসের বিরুদ্ধে জনগণকে প্রথম খেপিয়ে তোলে তা হলো ক্রিস পিনচার ব্যাপারে বরিসের নিরব দর্শকের ভূমিকা। কনজারভেটিভ পার্টির প্রধান হুইপ ছিলেন ক্রিস পিনচার। তিনি একাধিকবার পার্টিতে গিয়ে মদ্যপান করেন। মাতাল অবস্থায় নানা অনৈতিক কাজও করে বসেন। কিন্তু এ ব্যাপারে বরিস অবগত থেকেও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। পরে যখন ব্যাপারটি জানাজানি হয়ে যায় তখন জনমনে আক্রোশ তৈরি হয়।

পার্টিগেট কেলেঙ্কারি

করোনা মহামারির সময়ে পুরো দেশে সকল প্রকার সভা, সমাবেশ, পার্টি নিশেষ ছিল। ওই সময়ে সাধারণ নাগরিকরা নিজেদের মৃত আত্মীয় স্বজনের শেষকৃত্যেও পর্যন্ত যেতে পারেনি। কিন্তু বরিস জনসন আইন অমান্য করে নিজের সরকারি বাসভবনে পার্টি আয়োজন করেন। ব্যাপারটি নিয়ে তীব্র আলোচনা-সমালোচনা হয় পুরো ব্রিটেন জুড়ে।ঘটনাটি বরিসের ক্ষমতার খুটি নড়বোরে করতে ভূমিকা রেখেছে।

পার্টিগেট কেলেঙ্কারি'র দায় স্বীকার করে ক্ষমা চান বরিস জনসন

ওয়েন প্যাটারসন দ্বন্দ্ব

গতবছর লবিং নিয়ম ভেঙে একটি কোম্পানিকে বিশেষ সুবিধা দিতে চাওয়া কনজারভেটিভ এমপি ওয়েন প্যাটারসনের সংসদ সদস্যপদ স্থগিত করে দেওয়ার জন্য রিপোর্ট দিয়ে সুপারিশ জানিয়েছিল যুক্তরাজ্যের সংসদীয় কমিটি। কিন্তু বরিস জনসন তা প্রত্যাখ্যান করে ওয়েন প্যাটারসনের পক্ষে গিয়ে দাঁড়ায়। পরবর্তীতে অবশ্য নিজের ভুল বুঝতে পেরে ওয়েন প্যাটারসনের পক্ষ নেওয়া উচিৎ হয়নি বলে মত প্রকাশ করেন। কিন্তু বারবার এমন একই ভুলের পুনরাবৃত্তি জনমনে ক্ষোভ বাড়িয়ে তুলছিল।

করোনা মহামারী

করোনা মহামারীর প্রাক্বালে বরিসের একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত ব্রিটেনের স্বাস্থ্য খাত ও অর্থনীতিতে দারুণ ভাবে আঘাত এনেছিল। এই মহামারী মোকাবেলায় বরিস সরকার একেবারেই প্রস্তুত ছিল না। প্রথম দিকে স্বাস্থ্যকর্মীদের কোনো রকমের সুরক্ষা সরঞ্জাম না দেওয়ায় এবং বয়স্ক নিবাসগুলোতে লক্ষ্য না রাখায় ব্যাপকভাবে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। বরিস নিজেও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয় এবং তিন রাত হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে কাটান।

আরও পড়ুন# কাশ্মীর আসলে কার?

পদত্যাগের জন্য চাপ

একের পর এক ফাঁস হওয়া কেলেঙ্কারির মত মারাত্মক ঘটনা বরিস সরকারকে কাঁপিয়ে তোলে। পার্টিগেট কেলেঙ্কারির পর থেকে একের পর এক মন্ত্রী পদত্যাগ করতে থাকেন। চ্যান্সেলর ঋষি সুনাক এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাজিদ জাভিদের পদত্যাগ ঘটনা প্রবাহকে আরো বাড়িয়ে তোলে। এমনকি ক্রুদ্ধ প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হয়ে বিদ্রোহী কনসারভেটিভ এমপিরা ঘটনাকে তাদের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার চেষ্টা করতে থাকে। এবং তারা দলের ভেতর থেকে বরিসের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন করে। অভ্যন্তরীণ এই ঘটনা গুলো জনসম্মুখে এলে বরিসের পদত্যাগের জন্য চাপের বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়। শেষের দিকে বড় বড় কয়েকটি চাল চেলে নিজের অবস্থান শক্ত করার চেষ্টা করলেও অবশেষে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিতে হয় বরিসকে।

 

Back to top button

Opps, You are using ads blocker!

প্রিয় পাঠক, আপনি অ্যাড ব্লকার ব্যবহার করছেন, যার ফলে আমরা রেভেনিউ হারাচ্ছি, দয়া করে অ্যাড ব্লকারটি বন্ধ করুন।