চিত্রনায়িকা শিমুকে হ’ত্যার ভয়াবহ বর্ণনা দিলেন স্বামী!

চিত্রনায়িকা রাইমা ইসলাম শিমুকে হ’ত্যার ভয়াবহ তথ্য বেরিয়ে এলো তার স্বামীর কাছ থেকে।
জানা যায়, ঝগড়াঝাটির এক পর্যায়ে স্ত্রী শিমুর ওপর একসাথে আক্রমণ করেন তার স্বামী নোবেল এবং নোবেলের বন্ধু ফরহাদ। ফরহাদ শিমুর গ’লা চেপে ধরেন এবং নোবেল শিমুর দুই হাত চেপে ধরেন। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে শিমু ফ্লোরে পড়ে গেলে এসময় শিমুর গ’লার ওপর পা দিয়ে দাঁড়ান নোবেল। এসময় প্র’স্রাব করে ফেলেন শিমু। আর এক সময় নিথর হয়ে পড়েন। এভাবেই মৃ’ত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন এই চিত্রনায়িকা।
সম্প্রতি ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চিত্রনায়িকা শিমু হ’ত্যাকান্ডের ঘটনায় তার স্বামী সাখাওয়াত আলী নোবেল ও স্বামীর বাল্যবন্ধু এস এম ফরহাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। আর সেই অভিযোগপত্রের মাধ্যমে জানা গেছে হ’ত্যাকাণ্ডের ভয়ানক এসব তথ্য।
আরও পড়ুন# ফের বিচারকের আসনে বাংলাদেশের জাহারা মিতু!
এসব তথ্য পাওয়া গেছে কেরানীগঞ্জ মডেল থানার পরিদর্শক শহিদুল ইসলামের কাছ থেকে। তিনি আরও জানান বর্তমানে হ’ত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত শাখাওয়াত ও ফরহাদ দুজন আসামীই কারাগারে রয়েছে।
অভিযোগপত্রের মাধ্যমে জানা যায়, বাবা-মায়ের সাথে একসঙ্গে থাকতেন শিমু। শিমুদের বাসার পাশেই থাকতেন নোবেলরাও। তাই নিয়মিত দেখা সাক্ষাৎ হতো তাদের। এক পর্যায়ে তাদের মাঝে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। যার ফলশ্রুতিতে শিমুকে বিয়ে করেন নোবেল। কিন্তু নোবেলের মা বাবা এই বিয়েতে রাজি ছিলেন না। তাই নোবেলের বাবা-মা আলাদা হয়ে অন্যত্র বসবাসের জন্য চলে যান। রাজধানীর গ্রিন রোডে সন্তানসহ বসবাস করতেন নোবেল-শিমু দম্পতি।
বিয়ের পর বিভিন্ন বিষয়াদি নিয়ে ঝামেলা দেখা দেয় দুজনের মধ্যে। এর মাঝে নোবেল শিমুকে সিনেমা অভিনয় ছেড়ে দেওয়ার জন্য চাপ দেয়। ফলে স্বামীর কথামতো সিনেমা ছেড়ে বেসরকারি একটি টিভি চ্যানেল কাজ শুরু করেন শিমু। তবে এই চাকরিটাকেও পছন্দ করেননি নোবেল। ফলে এ নিয়ে নোবেল ও শিমুর সংসারে চলছিল মনোমালিন্য ও ঝগড়া। এসব কথা নোবেল তার বাল্যবন্ধু ফরহাদের সাথে ভাগ করতেন প্রায়ই।
এই বছরের শুরুর দিকে ১৬ জানুয়ারি সকাল সোয়া ৮টায় ফরহাদ বেড়াতে আসেন নোবেলের বাসায় । এ সময় নোবেলকে ফরহাদ আসার কথা জানিয়ে ড্রয়িংরুমে বসতে দেন শিমু। তারপর নোবেল চা বানাতে রান্নাঘরে যান।
এই সময় নিজের রুমে বসে মোবাইল ফোন চালাচ্ছিলেন শিমু। তখন নোবেল সেটি দেখতে পেয়ে মোবাইল দেখতে চান শিমুর। কিন্তু শিমু তার ফোন দেখাতে রাজি না হওয়ায় এ নিয়ে তাদের মধ্যে কথাকাটাকাটি ও কলহ হতে থাকে। হইচইয়ের শব্দ শুনে ফরহাদ উঠে এলে তখন নোবেল ফরহাদকে বলেন শিমুকে ধরতে, আরও বলেন, ‘ওকে আজ আমি মে’রেই ফেলব।’
নোবেলের কথা শুনে ফরহাদ শিমুকে ধরতে এলে তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন শিমু। এরপর নোবেল শিমুর গলা চেপে ধরতে আসলে তাকেও ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। তারপর ফরহাদ গিয়ে শিমুর গলা চেপে ধরেন আর স্বামী নোবেল দুই হাত চেপে ধরেন। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে শিমু ফ্লোরে পড়ে গেলে নোবেল শিমুর গলার ওপর পা দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন। এতে প্র’স্রাব করে ফেলেন শিমু। এভাবেই মৃ’ত্যুমুখে পতিত হন শিমু।
এ সময় নোবেল শিমুর মৃ’ত্যু নিশ্চিৎ হয়েছে কিনা জানার জন্য ফরহাদকে নিশ্চিত করতে বলেন। মৃ’ত্যু নিশ্চিত করে এরপর তারা দু’জন মরদেহ লুকানোর পরিকল্পনা আঁটতে থাকেন।
আরও পড়ুন# জয়ার যে ছবি ইন্টারনেটে ভাইরাল!
শিমুর ম’রদেহকে দুইটি বস্তা প্লাস্টিকের রশি দিয়ে একসঙ্গে সেলাই করে তাতে গাড়িতে করে নিয়ে কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন আলীপুর ব্রিজ এলাকার একটি ঝোপে ফেলে দিয়ে আসেন তারা।
চিত্রনায়িকার ম’রদেহের পরিচয় পেয়েই তার বাসায় যায় তদন্তে যায় পুলিশ। নোবেল তখন বাসাতেই অবস্থান করছিলেন। পুলিশের জেরার মুখে নোবেল জানান, শিমু মাওয়ার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হয়েছিলেন। কিন্তু তার জবাবে পুলিশের খটকা লাগে। কারণ ব্যক্তিগত জীবনে শিমু খুবই পরিপাটি ছিলেন। তিনি সাধারন সুতি সালোয়ার কামিজ পরে বাইরে রওনা দেবেন না নিশ্চয়ই।
এরপর পুলিশ তাদের গাড়ি সার্চ করলে সেখানে রশির বান্ডিল দেখতে পান। ঠিক একই রশি উদ্ধার হওয়া শিমুর লা’শের বস্তার গায়েও সেলাই করা আছে। তাই এই হ’ত্যাকাণ্ডে স্বামীর যোগাযোগ আছে এ বিষয়ে সন্দেহ হয় পুলিশের। এছাড়াও গাড়িটি সেদিনই ধোয়া হয়েছিল, ভেতরের দুর্গন্ধ দূর করতে ছিটানো হয়েছিল ব্লিচিং পাউডার।
১৭ জানুয়ারি পাওয়া যায় চিত্রনায়িকা শিমুর বস্তাবন্দী খন্ডিত লা’শ। এরপরদিনই শিমুর ভাই হারুনুর রশীদ কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় শিমুর স্বামী ও তার বাল্যবন্ধুকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন। এছাড়াও অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকে আসামী করা হয়েছিল। এরপর ২০ জানুয়ারী নোবেল স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।