লাইফস্টাইল

মানসিক চিন্তা থেকে মুক্তির উপায়।

ভিবিন্ন কারনে আমরা অনেক বিষয় নিয়ে টেনশন করি জা আমার জন্য অনেক ক্ষতি কর , আজ আমরা জানবো মানসিক চিন্তা থেকে মুক্তির উপায়।

অনুলিপি ডেস্কঃ মাথা থাকলে চিন্তা থাকবে আর চিন্তা থাকলে দুশ্চিন্তাও থাকবে। দুশ্চিন্তা করেন না এমন মানুষ নেই। আজকাল টেনশন বা দুশ্চিন্তা মানুষের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আমাদের জীবনে হাসি, আনন্দ, কষ্ট, ভালো কিংবা খারাপ সময়-এই সবকিছুরই মোকাবিলা করতে হয়। ব্যক্তিগত, পারিবারিক কিংবা সামাজিক বিভিন্ন কারণে প্রায়ই আমরা মানসিক চাপের মধ্যে থাকি। এটা আমাদের জীবনের খুব স্বাভাবিক একটা প্রক্রিয়া। কিন্তু এই মানসিক চাপ যখন মাত্রাতিরিক্ত হয়ে যায় এবং অনেকদিন ধরে থাকে তখনই সেটা কিছুটা চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। দুশ্চিন্তা একেবারে দূর করা হয়তো সম্ভব নয় কিন্তু নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। নিয়ন্ত্রণে থাকলে আপনি খুব সহজেই আপনি দুশ্চিন্তা থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পারবেন। তবে মানসিক চাপের পেছনে ঠিক কী কী কারণ জড়িয়ে আছে তা আমাদের নিজেদেরই খুঁজে বের করে সমাধান করতে হবে। আপনি কি মানসিক চাপে ভুগছেন? যদি উত্তর হ্যাঁ হয়, তবে আজকের আর্টিকেল থেকে জেনে নিন মানসিক চাপ দূর করে মনোযোগ ধরে রাখার সহজ ১০টি উপায় সম্পর্কে।

১। বাস্তববাদী হওয়া > যে কোনো ঘটনা বা ভবিষ্যতে কী ঘটতে পারে এ আশঙ্কায় অনেকে অযথা উৎকণ্ঠিত ও চিন্তিত হয়ে পড়েন। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, জীবন মানেই কিছু সমস্যা থাকবে এবং এমন কিছু ঘটনা ঘটতে পারে যা জীবনে কাম্য নয়। তবে এও ঠিক, সবকিছুর সমাধান রয়েছে ও সময়ের সাথে সব ঠিক হয়ে যায়। কাজেই বাস্তব পরিস্থিতি মেনে নিয়ে তার সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলার মানসিকতা গ্রহণ করতে হবে। ফলে কিছুটা টেনশন কমে যাবে। তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারের প্রতি অতিরিক্ত আবেগী মনোভাব দূর করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, গবেষকদের মতে প্রিয় ফুটবল দলের পরাজয়ের সঙ্গে সঙ্গে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার হারও বেড়ে যায়। তাই তুচ্ছ কারণে উত্তেজিত হওয়া যাবে না। কারণ জীবনের মূল্য এর চেয়ে ঢের বেশি।

২। ডায়েরি লেখার অভ্যাস> হাতে হাতে যখন ফোন আর ডিজিটাল লেখার যন্ত্র, তখন কাগজে কলমে লেখার অভ্যাস অনেকটাই চলে যাচ্ছে আমাদের। কিন্তু এই অভ্যাসটাই যে আপনাকে কতটা প্রশান্তি দেবে, আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না। কোনো কারণে খুব বেশি মন খারাপ লাগলে, কোনো বিষয় আপনাকে কষ্ট দিলে, প্রতিদিনের ছোট বড়, আনন্দ কষ্টের ঘটনাগুলো তারিখ দিয়ে ডায়েরিতে লিখে রাখুন। এটা স্মৃতির মতো কাজ করে। অনেকদিন পর আপনি যখন পুরনো ডায়েরি খুলে পড়বেন, সেটা অন্য রকম ভালো লাগার আবেশ তৈরি করবে, পুরনো অনেক স্মৃতি মনে করিয়ে দেবে। আর ডায়েরি লেখার কারণে মনের ভেতরের চাপ অনেকটাই কমে যায়।
৩। সমস্যার সমাধান খুঁজুন> বারবার একই সমস্যার কথা না চিন্তা করে সমাধানের পথ খুঁজুন। সমস্যার কথা ভেবে কখনো সমাধান আসে না। বরং যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে, ভেবে সমাধান নিয়ে ভাবলেই বরং চিন্তামুক্ত হওয়া সহজ। সমস্যা কখনো মানসিক প্রশান্তি আনতে পানে না। তাই সমস্যা থেকে দ্রুত পরিত্রাণের উপায় বের করতে হবে।

৪। শারীরিক পরিশ্রম করুন> শারীরিক ব্যায়াম এবং পরিশ্রম আমাদের দেহে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে। মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ বৃদ্ধি পেলে মস্তিষ্ক সতেজ হয় এবং আপনি যে কাজটি করছেন তার দিকে মনোনিবেশে সহায়তা করে। এতে আপনার মনোযোগ শুধুমাত্র সেই পরিশ্রমের কাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। এবং আপনি দুশ্চিন্তা করবেন না।
৫। বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটান> বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটান। সবসময় একাকী থাকা মানসিক স্বাস্থ্যে পাশাপাশি হৃদযন্ত্রেরও ক্ষতি করতে পারে। এমনকি কখনও হৃদরোগ ধরা না পড়লেও ক্ষতির আশংকা থেকেই যায়। একটি গবেষনায় দেখা গেছে মানসিক চাপ থেকে সাধারণত মহিলারা একধরনের কণ্ঠনালীর প্রদাহ, হৃদপিণ্ডসক্রান্ত বুকের ব্যাথা এবং অন্যান্য সমস্যায় ভোগেন। বিশেষ করে তারা যখন হার্ট-অ্যাটাকের পরে সময়টায় পরিবার বা সমাজ থেকে পর্যাপ্ত মানসিক সহায়তা পাননা। তাই একাকী ঘরে বসে না থেকে আজই বন্ধুদের সঙ্গে বের হয়ে পড়ুন। তবে এক্ষেত্রে প্রকৃত বন্ধু নির্বাচনে সচেতন হতে হবে। হেফনার এর মতে “আপনার বন্ধুরা যদি স্বার্থপর হয় তবে অনেক বন্ধু থাকলেও তা খুব একটা উপকারী হবে না।”

৬। প্রাণ খুলে হাসুন> ২০০৫ সালে পরিচালিত গবেষণায় জানা যায় সবসময় গম্ভীর থাকার বদলে প্রাণ খুলে হাসলে শতকরা বিশভাগ বেশি ক্যালরি পোড়ানো যায়। প্রাপ্তবয়স্ক কিছু মানুষকে নিয়মিত হাস্যকর এবং তুলনামুলক গম্ভীর চলচ্চিত্র দেখানোর পর গবেষকরা এই সিদ্ধান্তে আসেন। আর নিয়মিত ক্যালরি পোড়ানোর মাধ্যমে স্থুলতার হাত থেকে বাঁচা যায় যা কিনা দীর্ঘ সময় ধরে হৃদযন্ত্র সুরক্ষিত রাখার ভালো একটি উপায়। নিয়মিত আমোদ-প্রমোদ হৃদস্পন্দনের হার বাড়িয়ে দেয়। ২০১০ সালে প্রকাশিত আমেরিকান জার্নাল অফ কার্ডিওলজি’র তথ্যানুসারে, হাসি ঠাট্টার ফলে দেহের সংবহনতন্ত্র বা বিভিন্ন নালীর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। তাই ঠোঁটের কোণে সবসময় এক চিলতে হাসি রাখুন কিংবা পারলে মন খুলে হাসুন। আপনি যত বেশি হাসবেন, তত বেশি ক্যালরি পুড়বে এবং হৃদযন্ত্র হবে শক্তিশালী।
৭। নিজেকে ব্যস্ত রাখুন > দুশ্চিন্তাকে মাথা থেকে দূরে রাখতে হলে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন। আপনার মস্তিষ্ক এবং হাত ব্যস্ত থাকে এমন কোন কাজ করুন যেমন গেম খেলুন বা কোন হস্তশিল্প তৈরি করুন। বলা হয়ে থাকে, “অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা।” এটি কিন্তু বাস্তবিকইসত্য। আপনি কোনো কাজ না করে অলসভাবে শুয়ে বসে থাকলে হতাশা আর দুশ্চিন্তা আপনাকে ঘিরে ধরবে- এটাই স্বাভাবিক। তাই যে কোনো প্রোডাক্টিভ কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন।
৮। নিজের জন্য সময় বরাদ্দ রাখুন> অহেতুক দুশ্চিন্তা নিজের স্বাভাবিক কাজ থেকেই দূরে সরিয়ে দেয় সবাইকে। নিজের কাজেই মনোযোগ দেওয়া সম্ভব হয় না। যে কারণে সবকিছু বাদ দিয়ে পুরোনো কিছুতে ফিরে যান। ছবি আঁকা, বই পড়া; যেসব শখ বহু বছর আগে আপনার ছিল, সেটিতে মনোযোগ দিন কিংবা নতুন করে শুরু করুন। নিজের প্রিয় কাজে ব্যস্ত থাকলে আস্তে আস্তে নিজের মধ্যে হারানো আত্মবিশ্বাসও ফেরত পাবেন।

আরো পড়ুন: ঠোঁটের কালচে ভাব দূর করার একদম সহজ উপায় তাও আবার ঘরে বসেই

৯। মেডিটেশন করুন> খুব বেশি দুশ্চিন্তায় যারা ভোগেন তাদের সহজে দুশ্চিন্তা দূর হতে চায় না। এবং খুব সহজেই তারা দুশ্চিন্তায় পড়ে থাকেন। এই সমস্যার একমাত্র সমাধান মেডিটেশন। সকালে শান্ত পরিবেশে ১০-১৫ মিনিট মেডিটেশন করেন নিলে সারাদিনের দুশ্চিন্তা কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবেন। এছাড়াও খুব বেশি দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির জন্য মেডিটশনে বসে যান।
১০। কথা বলুন: বেশির ভাগ সময় মনে জমিয়ে রাখা কথাই সৃষ্টি করে দুশ্চিন্তা। তাই যখনই মনে হবে মনের মধ্যে দুশ্চিন্তা বাসা বাঁধছে, তখনই নিজের প্রিয় বন্ধু কিংবা কাছের মানুষ কাউকে সব খুলে বলুন। দেখবেন নিজেকে যথেষ্ট ভারমুক্ত মনে হবে। অতীতকে অতীতের জায়গায় থাকতে দিন: যখনই মনে হবে অহেতুক চিন্তা নিজের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে, দীর্ঘ একটা শ্বাস নিয়ে ভাবুন, ‘যা হয়েছে ভালোর জন্যই হয়েছে।’ অতীতকে চাইলেও পরিবর্তন করা সম্ভব নয়, ফলে ওসব নিয়ে ভেবেও লাভ নেই। অতীতকে অতীতের জায়গায় থাকতে দিলেই বরং সবার জন্য ভালো। এই চিন্তা নিয়ে নতুন করে কাজ শুরু করুন, তবেই এই দুষ্টচক্র থেকে বের হওয়া যাবে। মনে রাখবেন, দুশ্চিন্তা মানুষের স্বাভাবিক চিন্তাধারারই বহিঃপ্রকাশ। দুশ্চিন্তা করাও দোষের কিছু নয়, কিন্তু এই দুশ্চিন্তাকে নিয়ন্ত্রণে রাখার দায়িত্ব আপনারই। খেয়াল রাখবেন, দুশ্চিন্তাকে যেন আপনি নিয়ন্ত্রণে রাখেন, দুশ্চিন্তা যেন আপনার জীবন নিয়ন্ত্রণ না করে।

Back to top button

Opps, You are using ads blocker!

প্রিয় পাঠক, আপনি অ্যাড ব্লকার ব্যবহার করছেন, যার ফলে আমরা রেভেনিউ হারাচ্ছি, দয়া করে অ্যাড ব্লকারটি বন্ধ করুন।