ব্যবসা-বাণিজ্যসংবাদ

ফুরিয়ে আসছে পোশাক শিল্পের কাঁচামালের মজুদ!

বৈদেশিক মুদ্রার অন্যতম প্রধান ক্ষেত্র পোশাক শিল্পের প্রধান কাঁচামাল সুতা ও কাপড়। এক্ষেত্রে কাঁচা তুলা আমদানির মাধ্যমে সুতা ও কাপড় উৎপাদন করতে হয় বস্ত্র খাতের স্পিনিং মিলগুলোকে। তবে শিল্পসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, তুলার মজুদ ফুরিয়ে আসতে শুরু করেছে। যতটুকু আছে তা দিয়ে সর্বোচ্চ আগামী তিন মাস উৎপাদন কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া সম্ভব।

বিটিএমএ গত ১১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর বরাবর একটি চিঠি দিয়েছে। সেখানে বর্তমানে কাঁচামালের মজুদ দিয়ে আগামী তিন মাসের উৎপাদন কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হতে পারে এমন তথ্য উল্লেখ করেছে সুতা ও কাপড়ের উৎপাদনকারী মিল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন

কাঁচামালের মজুদ ও উৎপাদন প্রসঙ্গে বস্ত্র খাতের অন্যতম প্রতিষ্ঠান মোশাররফ কম্পোজিট টেক্সটাইল মিস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, আমাদের কারখানায় মজুদ খুব বেশি নেই। তুলার বাজারদর বেশি হওয়ায় ব্যয় সক্ষমতায় চাপ তৈরি হচ্ছে। গত চার-পাঁচ বছরে তুলার গড় দাম ছিল পাউন্ডপ্রতি ৯০ সেন্ট। বর্তমানে তুলার দাম ১ ডলার ৫০ সেন্ট। এ প্রেক্ষাপটে কাঁচামালের মজুদ নিয়ে খুব সচেতনভাবে অগ্রসর হতে হচ্ছে। আবার এ মুহূর্তে রফতানির চাহিদাও কিছুটা কম। এ কারণেও তুলার প্রাপ্যতা নিশ্চিত করে রাখছি না।

তিনি আরও বলেন, একদিকে ক্রেতার চাহিদা কম, অন্যদিকে তুলার দাম বেশি, আবার কারখানায় গ্যাসের চাপ নিয়েও আছে সমস্যা। এদিকে দেশে ডলার সংকটের প্রভাবে কাঁচামাল আমদানির ঋণপত্র খোলার বিষয়েও ব্যাংকের পক্ষ থেকে আগ্রহের ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে সব মিল মালিক সাবধানে অগ্রসর হচ্ছে। কাঁচামালের যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই মজুদ রাখছে তারা। এ কারণেই মজুদ স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক কমে এসেছে কারখানাগুলোয়।

আরও পড়ুন: প্রতিদিন ১৮২ কোটি ৪২ লাখ টাকা অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছে রাজধানীর গণপরিবহন!

এদিকে বিটিএমএ সহসভাপতি ফজলুল হক জানান, কাঁচামালের মজুদ কমছে। ধারণা করি গড় হিসাবে এক মাসের কাঁচামাল মজুদ আছে কারখানাগুলোয়। এ পরিমাণ মজুদ দিয়ে উৎপাদন কার্যক্রম আগামী তিন মাস চালানো সম্ভব হবে। এখন গ্যাসের সংকটে কারখানার ৫০ শতাংশ মেশিন চলে না। এ কারণেও আগের আনা কাঁচামাল মজুদ রয়ে গিয়েছে কারখানায়। ক্রয়াদেশ যদি পর্যাপ্ত থাকত তাহলে কাঁচামালের জন্য হাহাকার পড়ে যেত।

চিঠির শুরুতে বিটিএমএ জানিয়েছে, বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯-এর বিরূপ প্রভাব ও পরবর্তী সময়ে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমানে বৈশ্বিক অর্থনীতি টানাপড়েনের মধ্যে রয়েছে। যার প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনীতিসহ সার্বিক আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে পড়েছে। বর্তমানে তৈরি পোশাকের যে পরিমাণ রপ্তানি আদেশ রয়েছে, সে অনুযায়ী পণ্য উৎপাদনের কাঁচামাল আমদানি করা সম্ভব হচ্ছে না।

আরও বলা হয়, বর্তমানে দেশের অধিকাংশ বাণিজ্যিক ব্যাংক ডলার সংকটের অজুহাতে টেক্সটাইল শিল্পপ্রতিষ্ঠান গুলোর প্রয়োজনীয় কাঁচামাল তুলা, পিএসএফ, ডিএসএফ আমদানি করার জন্য ঋণপত্র খোলার বিষয়ে অনীহা প্রকাশ করছে। এ প্রবণতা সুতা তৈরি এবং রফতানিতে নিয়োজিত শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য উদ্বেগজনক বলে চিঠিতে জানিয়েছে বিটিএমএ।

বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের দাবি, টেক্সটাইল খাতের মিলগুলোর উৎপাদন ও রফতানি নিরবচ্ছিন্ন রাখতে কাঁচামালের মজুদ রাখতে হয় ন্যূন তম চার-পাঁচ মাসের। এছাড়া বিদেশ থেকে আমদানি করা কাঁচামাল দেশে আসতে তিন-চার মাস সময়ের প্রয়োজন হয়। এ প্রেক্ষাপটে মিলগুলোকে সার্বক্ষণিকভাবে তুলা, পিএসএফ ও ভিএসএফ আমদানি করতে হয়। সংগঠনের সদস্য অধিকাংশ মিলে যে পরিমাণ কাঁচামালের মজুদ রয়েছে তাতে আগামী তিন মাসের উৎপাদন কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হতে পারে। এ পরিস্থিতিতে ঋণপত্র খোলার বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ ব্যাংকগুলোকে দেওয়া হবে, এমন প্রত্যাশা ও অনুরোধ চিঠিতে জানিয়েছে বিটিএমএ।

আরও পড়ুন: ৪৩ কিলোমিটার সড়ক বানাতে পরামর্শ খাতে লেগেছে ১১০ কোটি!

বিটিএমএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন জানান, আমাদের শিল্প-কারখানা অব্যাহতভাবে চালু রাখতে হয়। বর্তমানে পণ্যের জাহাজীকরণ বিলম্বিত হচ্ছে। অন্যদিকে কাঁচামালের মজুদ ফুরিয়ে আসছে। এ মুহূর্তে মজুদ একেবারে ফুরিয়ে গিয়েছে এমন কোনো তথ্য নেই। যেসব ঋণপত্র খোলা হয়েছে আগে, সেগুলোর মাধ্যমে আমদানি করা কাঁচামাল দিয়ে আগামী তিন মাস উৎপাদন চলবে। কিন্তু বর্তমানে ঋণপত্র খোলা নিয়ে অনেক ব্যাংক গড়িমসি করছে। কোনো কোনো ব্যাংক খুলছে না, কোনো কোনো ব্যাংক অনাগ্রহ প্রকাশ করছে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে তিন মাস পর কাঁচামাল থাকবে না। সব কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। এখন কোনো কোনো মিলের মজুদ আছে এক মাসের, কোনো কোনো মিলের দুই মাসের। কারখানায় ন্যূনতম এক মাসের কাঁচামাল মজুদ থাকতে হয়। এ মুহূর্তে কমবেশি এক-দুই মাসের কাঁচামাল মজুদ আছে কারখানায়।

Back to top button

Opps, You are using ads blocker!

প্রিয় পাঠক, আপনি অ্যাড ব্লকার ব্যবহার করছেন, যার ফলে আমরা রেভেনিউ হারাচ্ছি, দয়া করে অ্যাড ব্লকারটি বন্ধ করুন।