অর্থনীতিব্যবসা-বাণিজ্য

বাংলাদেশকে ৯.০৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিচ্ছে এডিবি!

আগামী ৩ বছরে বাংলাদেশকে ৯ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ সরবরাহ করবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। গত ৩ বছরের তুলনায় তাদের এই ঋণের পরিমাণ এবার ৮৪ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি।

২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হতে বাংলাদেশের প্রস্তুতি যথাযথভাবে সম্পন্ন করতেই ম্যানিলাভিত্তিক ঋণদাতা সংস্থাটিতে এই অর্থ দেবে বলে জানানো হয়।

বাংলাদেশের জন্য এডিবির পর্যায়ক্রমিক বরাদ্দ পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ৩ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলার, ২০২৪ সালে ৩ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলার এবং ২০২৫ সালে ২ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ডলার পাবে বাংলাদেশ।

এই অর্থের ৬৯ দশমিক ৫ শতাংশ দেশের মাথাপিছু জিডিপির ক্রমবর্ধমান অনুপাতে বাজারভিত্তিক শর্তে দেওয়া হবে। তুলনামূলক ভিত্তিতে এর আগের ৩ বছরে এ ধরনের ঋণের পরিমাণ ছিল ৫৭ দশমিক ৫ শতাংশ।

বাংলাদেশ যে পরিমাণ টাকা ঋণ পাবে, সেটি ৫ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ২৫ বছরের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। এর জন্য সুদের হার হবে লন্ডন ইন্টারব্যাংক অফার রেটের (এলআইওআর) সঙ্গে অতিরিক্ত দশমিক ৭৫ শতাংশ। এছাড়া, ঋণের বাকি অর্থ পরিশোধের সময়সীমা একই থাকলেও সুদের হার হবে ২ শতাংশ।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হুসেন জানান, ‘বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি যে হারে বাড়ছে তাতে এই ঋণ অবশ্যম্ভাবী।’

তার মতে, এই ঋণের অর্থ যেসব প্রকল্পে ব্যয় হবে সেগুলো অবশ্যই খুব ভালো মানের হতে হবে। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, অর্থনৈতিক বৈচিত্র্য, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, মানব সম্পদ উন্নয়ন বা সামাজিক সুরক্ষা জোরদার করার মতো বিষয়ে এর প্রত্যক্ষ প্রভাব থাকতে হবে।

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যদি সময়মতো প্রকল্প শেষ না করি, তাহলে এই ঋণের অর্থ বকেয়া পড়বে এবং ঋণের বোঝা তৈরি হবে।’

আরও পড়ুন: বাংলাদেশের শিশুদের জন্য যুক্তরাজ্য বিনিয়োগ করবে সাড়ে ৫৪ মিলিয়ন পাউন্ড!

এডিবির এই ঋণের মধ্যে ২ দশমিক ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বাংলাদেশের মানব সম্পদ বৃদ্ধি, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি এবং সামাজিক সুরক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় ব্যবহৃত হবে বলে জানা গেছে।

উল্লেখ্য, গোপালগঞ্জে একটি টিকা উৎপাদন ও গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনের জন্য এই ঋণদাতা সংস্থা ২০২৩ সালে ৩০০ মিলিয়ন ডলার দেবে।

আরও ২ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এডিবির ফ্ল্যাগশিপ এসএএসইসি প্রোগ্রামের আওতায় প্রকল্পের জন্য। এই প্রকল্পের লক্ষ্য, আঞ্চলিক সমৃদ্ধি এবং বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল ও শ্রীলংকার জনগণের অর্থনৈতিক উন্নয়ন।

এছাড়া, লাকসাম-চট্টগ্রাম এবং টঙ্গী-আখাউড়া ডুয়েলগেজ রেললাইন স্থাপন, ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ স্থাপন এবং দক্ষিণ অঞ্চলের যোগাযোগ উন্নতির জন্য নেওয়া প্রকল্পগুলো এসএএসইসি প্রোগ্রামের অধীনে পড়ে। পাশাপাশি বাংলাদেশের পানি সরবরাহ ও নগর অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার।

নারায়ণগঞ্জের নগর উন্নয়ন, ঢাকার পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন, খুলনার পানি সরবরাহ বৃদ্ধি এবং গুচ্ছ ও উপকূলীয় শহরগুলোতে পানি সরবরাহ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন প্রকল্প এর আওতায় পড়বে। প্রায় ৮২০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় হবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব হ্রাস করবে এমন প্রকল্পে এবং বিদ্যুৎখাতে ব্যয় হবে ৭৪৩ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার। আগামী ৩ বছরের মধ্যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনে অর্থনৈতিক কাঠামো শক্তিশালী করতে এই অর্থ বরাদ্দ দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে।

এদিকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই অর্থবছরে তহবিলের বেশিরভাগই টাকা খরচ হবে বাজেট সহায়তা ও ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব কমাতে।

আরও পড়ুন: মোট প্রকল্প ব্যয় ৪২ কোটি, পরামর্শের নামে খরচ ২৭ কোটি!

অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, ‘আমরা বাজেট সহায়তার জন্য ১ বিলিয়ন ডলার চেয়েছিলাম, কিন্তু তারা ৫০০ মিলিয়ন ডলার দিতে রাজি হয়েছে। জলবায়ু সম্পর্কিত প্রকল্পগুলোর জন্য আরও ৭০০ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করা হয়েছে। এই প্রকল্পগুলোতে কোনো বিদেশি উপাদান থাকবে না। তাই এই অর্থ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে যোগ হবে।’

জাহিদ হুসেন বলেন, এডিবি যদি বাজেট সহায়তার বিনিময়ে সরকারকে ৩-৪টি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিতে বলে, তাহলে তা দেশের লাভজনক হবে।

তিনি আরও বলেন, ‘এডিবির সহায়তা কর্মসূচিতে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের প্রস্তুতির বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এটি একটি সঠিক উদ্যোগ।’

জাহিদ হুসেন জানান, ‘এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পর আমরা অনেক ধরনের সুযোগ-সুবিধা আর পাব না। কিন্তু আমাদের অগ্রাধিকারমূলক প্রবেশাধিকার দরকার। ফলে, বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে হবে এবং এর জন্য আমাদের আলোচনার সক্ষমতা বাড়াতে হবে। এডিবি আমাদের টেকনিক্যাল সহযোগিতা দিতে পারে।’

এডিবি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের কর্মকর্তাদের ভারত, চীন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউয়ের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনার জন্য প্রশিক্ষণ দিতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

এদিকে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন এখন সমসাময়িক বিষয় এবং এর জন্য এডিবির সহায়তা প্রয়োজন।’

Back to top button

Opps, You are using ads blocker!

প্রিয় পাঠক, আপনি অ্যাড ব্লকার ব্যবহার করছেন, যার ফলে আমরা রেভেনিউ হারাচ্ছি, দয়া করে অ্যাড ব্লকারটি বন্ধ করুন।