বাস্তব সম্পর্কের গুরুত্ব ইন্টারনেটের চেয়ে অনেক বেশি!

আজ একটা গল্প বলব সেটা হলো, “বাস্তব সম্পর্কের গুরুত্ব ইন্টারনেটের চেয়ে অনেক বেশি!”।
বাস্তব সম্পর্কের গুরুত্ব ইন্টারনেটের চেয়ে অনেক বেশি!
একজন স্কুল শিক্ষিকা একদিন রাতে তার ডিনাার শেষ করে তার ছাত্র-ছাত্রীদের পরীক্ষার খাতা দেখছিলেন এবং শিক্ষিকার স্বামী তার পাশে বসেই মোবাইল ফোনে ফেসবুকে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলেন! হঠাৎ করে তিনি খেয়াল করলেন যে তার স্ত্রী কাঁদছেন। স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলেন, এই তুমি কাঁদছ কেন?
স্ত্রী উত্তর দিলেন, গতকালকে আমার ছাত্র-ছাত্রীদের কে বলেছিলাম “আমার ইচ্ছে” শিরোনামে একটি রচনা লিখতে। সেখানে সবাই খুব সুন্দর সুন্দর ইচ্ছের কথা লিখেছে। কিন্তু একটি খাতা দেখে আমার চোখের জল ধরে রাখতে পারলাম না। তার স্বামী চ্যাটিং এর পাশাপাশি স্ক্রিনে চোখ রেখেই বললেন, “তোমার ছাত্র-ছাত্রী এমন কী ইচ্ছের কথা লিখছে! যা দেখে তোমার চোখে জল এলো? শিক্ষিকা বললেন আমি ওর লেখা পড়ে শুনাচ্ছি! প্লিজ, তুমি মোবাইল ফোনটা কিছুক্ষনের জন্য বন্ধ রাখো। বেশ অনিচ্ছা নিয়েই তার স্বামী মোবাইল ফোন বন্ধ করে স্থিরভাবে তাকালো! তারপর শিক্ষিকা খাতাটি পড়তে শুরু করলেন।
খাতায় লিখেন, “আমার প্রিয় বাবা-মা আমার থেকে তাদের স্মার্টফোনকে অনেক বেশি ভালোবাসেন! কারণ তারা তাদের স্মার্টফোনের প্রতি এতই যত্নশীল যে মাঝে মাঝে তারা আমার কথাই ভুলেই যান। যখন তারা কাজ করে বা অফিস বা বন্ধু / আত্মীয়-স্বজনরা কেউ ফোন করলে তারা সেই ফোন রিসিভ করে এবং সুন্দর ভাবে কথা বলে। কিন্তু আমি ডাকলে বা কিছু বললে কোনো সাড়া শব্দ করে না। এমন কী, আমি কাঁদলেও অনেক সময় তারা তাদের ফোনের গেমস, ফেসবুক কিংবা বন্ধুদের সাথে অনলাইনে আড্ডা দেওয়ায় ব্যস্ত থাকেন। কিন্তু তারা কখনো আমার সাথে খেলেন না বা কথা বলেন না। যখন তারা ফোনে কথা বলে তখন তারা আমার কথা শুনে না! এমন কী, আমি গুরুত্বপূর্ণ কিছু বললেও না। এক কথায় তাদের কাছে আমি কিছুই না! আমার থেকে স্মার্ট ফোনটাই অনেক ভালো। আমার ইচ্ছে আমি যদি একটা স্মার্ট ফোন হতাম। তাহলে হয়তো সারাক্ষণ আমার বাবা মায়ের সাথে থাকতে পারতাম, তাদের সাথে খেলাধুুলা করতে পারতাম।
আরও পড়ুন: ডিপ্রেশন কী এবং ডিপ্রেশন থেকে বের হবার উপায়?
শিক্ষিকার পড়া শেষ হলে, স্বামীটি তার চোখ মুছতে মুছতে তার স্ত্রী জিজ্ঞেসা করল কে লিখেছে এই ইচ্ছের কথাটা? আর তার নামই বা কী? স্বামীর দিকে তাকিয়ে শিক্ষিকা বলল এটি লিখেছে- আমাদের একমাত্র ছেলে রাজু, সেও তো আমার ক্লাসের ছাত্র! এই কথা শুনে চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ল স্বামীর আর হাত থেকে মুঠোফোনটি মেঝেতে পড়ে গেল। এরপর তারা দুইজনেই তাদের ছেলের ঘরে গেলেন এবং ছেলের দিকে তারা কেউই কিছু মুখে না বললেও তাদের ঘুমন্ত সন্তানের দিকে তাকিয়েই মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে আজ থেকে তাদের সন্তান তাদের কাছে সবার আগে, পৃথিবীর সব কিছুর আগে তাদের ছেলে।কারণ এ স্মার্ট ফোন এসেছে আমাদের জীবনকে সহজ করতে; এখন আমাদের জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করে ফেলছে। ইন্টারনেট বা আমাদের স্মার্ট ফোন এসেছে আমাদের জীবন পরিবর্তন করতে। অথচ আমরা এর খারাপ দিকটি গ্রহণ করছি। তবে এখনো আমাদের সময় আছে, আমাদের আসল পরিবার পরিজনের কাছে ফিরার। পুরোনো দিনের মতো সবাই মিলে সুন্দর করে বেঁচে থাকার। চিন্তা করুন যখন কম্পিউটার ইন্টারনেট ছিল না, তখন সময়টা কেমন ছিল? সবাই মিলে কতই না সুন্দর সময় কাটানো হয়েছিল।
তাই এখনই আসল পরিবর্তন আনার সময়, আপনার গুরুত্বটা স্মার্টফোন থেকে কমিয়ে আনুন এবং আপনার পরিবার এবং বন্ধু বান্ধবদের সময় দিন। আপনার যদি সন্তান থাকে তাহলে আপনার সন্তানদের জন্য ভালো দৃশ্য স্থাপন করুন, কারণ সন্তানরা তাদের মা – বাবাকেই অনুসরন করে। তাই সময়টা অনলাইনে না দিয়ে তাদেরকে দিন। নিজের ছেলে – মেয়েদের একান্ত সময় দিন; তা না হলে এমন এক দিন আসবে যে- আপনি বৃদ্ধ হলে আপনাকে রেখেও তারা তাদের টাইমটা অনলাইনে দেবে! সো, প্রকৃতির খেলা তো আর বোঝা যায় না তাই সময় থাকতে নিজেকে পরিবর্তন করুন।
প্রিয়জনের খোজ খবর নিন, পরিবারকে ভালোবাসা দিলে নিজের পরিবারের কাছ থেকে অনেক ভালোবাসা পাওয়া যাবে! আপনার ফোন আপনাকে সুবিধা দিতে পারবে; কিন্তু আপনার ফোন কী কখনো আপনাকে প্রিয়জনের মতো করে ভালোবাসা দিতে পারবে? আসুন আমরা কৃত্রিম জিনিস এর পিছনে না ছুটে নিজের পরিবার পরিজন ও প্রিয়জনকে সময় দিন এবং আমাদের বন্ধনগুলোকে ধ্বংশ না করি। ভালবেসে নতুন জীবন শুরু করি। আগামী দিনের পথ চলার জন্য।