বাড়তি খরচে মানুষের এখন টিকে থাকাই দায়!

ভবিষ্যতের ভাবনা অনেক দূর। দিনকার নিত্য-নৈমেত্তিক জিনিস কিনতেই প্রতিনিয়ত লড়াই করছে সাধারণ মানুষ। সকাল-বিকালের নাস্তা থেকে শুরু করে তিন বেলার খাদ্যপণ্য-চাল, ডাল, তেল, ডিম, ব্রয়লার মুরগি, চিনি, লবণ ও আটা-ময়দার দাম সবকিছুই ক্রমাগত বাড়ছে, একদিন টিকে থাকাই দায়।
বাদ পড়েনি হাঁড়ি-পাতিলের দামও। রান্নায় এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার কিনতে বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে। এমনকি সাবান-শ্যাম্পু, ডিটারজেন্ট সবকিছুর দাম এখন নাগালের বাইরে।
বেড়েছে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ-বই, খাতা ও কলমের দামও। শুধু বাড়েনি সাধারণ মানুষের আয়। এতে সংসারের বাড়তি খরচ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন সব শ্রেণির মানুষ।
এ বিষয়ে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান জানান, বাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে। চাল-ডাল থেকে শুরু করে নিত্যব্যবহার্য পণ্য সবকিছুর দাম বাড়তি।
রাজধানীর কাওরান বাজার, নয়াবাজার ও মালিবাগ কাঁচাবাজার ঘুরে ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ দিন প্রতি কেজি সরু চাল বিক্রি হয়েছে ৭৫ টাকা। যা দুই সপ্তাহ আগে ৭০ টাকা ছিল।
পাশাপাশি মোটা চাল বিক্রি হয়েছে ৫৫ টাকা, যা আগে ৫০-৫২ টাকা ছিল। খোলা সয়াবিন তেল প্রতি লিটার বিক্রি হয়েছে ১৮০ টাকা। যা দুই সপ্তাহ আগে ১৭৫ টাকা ছিল। প্রতি কেজি চিনি ৯৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা আগে ৯০ টাকা ছিল।
প্রতি কেজি প্যাকেট লবণ বিক্রি হচ্ছে ৩৮ টাকায়, যা আগে ৩৫ টাকা ছিল। প্রতি ডজন ফার্মের ডিম বিক্রি হয়েছে ১৪০-১৫০ টাকা। যা দুই সপ্তাহ আগেও ১২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হয়েছে ১৭৫ টাকা।
আরও পড়ুন: চালের যথেষ্ট মজুত আছে, তবুও শঙ্কায় সরকার!
বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টাল স্টোর ঘুরে ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বড় আকারের পাউরুটি বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকা। যা আগে ৮০-৮৫ টাকা ছিল। ৩০০ গ্রাম ওজনের প্যাকেট চানাচুর বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকা।
৮ পিসের প্যাকেট নুডুলস আগে বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়। যা আগে ১৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এনার্জি বিস্কুটের প্যাকেট বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকা, যা আগে ৩৮ টাকা ছিল। ১০ টাকা বেড়ে পাইনাপেল বিস্কুটের প্যাকেট বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকা।
এমনকি টোস্ট বিস্কুট ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হয়েছে ১৬০ টাকা। প্রতি লিটার কোক ৫ টাকা বেড়ে ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ৬০০ গ্রাম ওজনের প্রাণ সসের বোতল ৭৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আগে ৬২ টাকা ছিল।
৮০ টাকায় বিক্রি হওয়া এক কেজির ওয়াশিং পাউডার এখন ১৫০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। ইউনিলিভারের রিন পাউডার মাত্র এক মাসের ব্যবধানে ১৫০ টাকা থেকে বেড়ে ১৮০ টাকা হয়েছে।
দুই সপ্তাহ আগে ৫০০ গ্রামের সার্ফ এক্সেল ছিল ১০৫ টাকা যেটা বর্তমানে ১৪০ টাকা। আবার ৩২০ মিলিগ্রামের সানসিল্ক শ্যাম্পুর দাম বর্তমানে ৪৬০ টাকা, যেটা কয়েকদিন আগেও সর্বোচ্চ ৩৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
২৫০ টাকার পরিবর্তে ২০০ মিলির জিলেট শেভিং জেলের মূল্য ৩২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মানভেদে ২০০ গ্রাম ওজনের সব ব্র্যান্ডের টুথপেস্টে ১০-২০ টাকা বেড়েছে। ২০০ গ্রাম ওজনের কোলগেট টুথপেস্টের দাম ১৩০ থেকে বেড়ে হয়েছে ১৫০ টাকা।
সবকিছুর ব্যয় বহন করে এখন টিকে থাকাই যেন দায়। বাজারে এমন কোনো পণ্য পাওয়া যাবে না যার দর বাড়েনি। চাল, ডাল, তেল থেকে শুরু করে সাবান, টুথপেস্ট, ডিটারজেন্ট সবকিছুর দাম বাড়তি। ছেলেমেয়েধের শিক্ষা উপকরণসহ সবকিছুর দাম বেড়েছে।
বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিটি শিক্ষা উপকরণের দাম ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বেড়েছে। বাঁধাই করা ৪০ টাকার কাগজের খাতা ৫৫-৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
প্রতি ডজন কলম ১০ টাকা বেড়ে ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পাশাপাশি এক রিম কাগজের দাম ছিল ৩২০ টাকা, যা এখন ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
এ বিষয়ে ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইসএম সফিকুজ্জামান জানান, সব ধরনের নিত্যপণ্য ও নিত্যব্যবহার্য্য পণ্যের দাম বেড়েছে। আমরা অধিদপ্তর থেকে সার্বিক ভাবে তদারকি করছি। এমনকি সব খাতের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে অধিদপ্তরে সভা করে দিকনির্দেশনা দিচ্ছি। দাম কমাতে সব দিক বিবেচনায় নিয়ে কাজ করছি। অনিয়ম পেলে দোষীদের আইনের আওতায় আনছি।
তিনি আরও জানান, আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছে নিত্যব্যবহার্য্য পণ্যের মধ্যে সাবান, টুথপেস্ট, ডিটারজেন্ট এ সবের দাম বেড়েছে। এই শিল্পের কাঁচামাল আমদানি করতে হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়েছে।
ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৯৫ টাকার ডলার আপনি কিনতে ১১০ টাকা ব্যয় করছেন। সব ঠিক আছে। কিন্তু ৩০ টাকার পণ্য ৫০ টাকায় বিক্রি করা অযৌক্তিক।
ভোক্তাদের পক্ষ থেকে আইনে আমাদের অধিদপ্তরকে ভোক্তার স্বার্থ দেখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাই অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে কারখানায় অভিযান পরিচালনা করা হবে।