খেলাধুলাফুটবল

বিদ্যুৎ না থাকায় খেলা দেখতে পারেননি কৃষ্ণার মা, ভাই করেছেন উপবাস!

সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) কাঠমান্ডুর দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে নেপালের বিপক্ষে ফাইনালে ৩-১ গোলের জয়ে শিরোপা জয়ের স্বাদ পেয়েছে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচে শক্তিশালী নেপালকে হারানোর পেছনে বড় কৃতিত্ব কৃষ্ণা রাণী সরকারের। তিনটি গোলের দুটিই এসেছে তার পা থেকে।

এদিকে তার ভালো খেলার জন্য সারাদিন উপবাস করেছেন তার ছোট ভাই পলাশ। কৃষ্ণার ছোটভাই পলাশ ঢাকায় গ্রিন ইউনিভার্সিটিতে প্রথম বর্ষে পড়াশোনা করেন।

তিনি জানান, ‘দিদির খেলার জন্য সারাদিন উপবাসের ব্রত করেছিলাম। জয়ের পর দিদির সঙ্গে কথা বলে তারপর খেয়েছি। দিদি টেনশনে ছিল। আমি তাকে সকালে বলেছি, তুমি টেনশন না করে ভগবানের নাম নিয়ে তোমার সেরা খেলাটা খেলার চেষ্টা কোরো। এদিকে আমরাও উদ্বিগ্ন ছিলাম ফাইনাল নিয়ে। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেছি যেন আমার দেশ এই শিরোপা জেতে। আর আমার দিদি যেন ভালো খেলতে পারে। ঈশ্বর আমার দুটি কথাই রেখেছেন। এই আনন্দ কাউকে বলে বোঝাতে পারব না।’

আরও পড়ুন: সাফের পুরস্কারেও একচ্ছত্র আধিপত্য বাংলাদেশের!

অন্যদিকে কৃষ্ণার মা নমিতা রাণী সরকার আফসোস করে বলেন, ‘খেলা দেখতে পারিনি। খেলা শেষ হওয়ার পর প্রতিবেশীরা বাড়িতে এসে জয়ের কথা জানায়। আমার ছেলেও মোবাইল ফোনে বলেছে। আমি কৃষ্ণাসহ ওদের দলের সবার জন্য দেশবাসীর কাছে আশীর্বাদ চাই। কৃষ্ণা রাণীর মা আরো বলেন, আমার মেয়ে যখন নতুন-নতুন খেলতে যেত, তখন আমাদের অনেক কটু কথা সহ্য করতে হয়েছে। তবে এখন মেয়ের সাফল্যে ভালো লাগে। যারা একসময় সমালোচনা করত তারাই এখন প্রশংসা করে।’

কৃষ্ণা সরকারের বাবা বাসুদেব সরকার বলেন, ‘আমি পাশের গ্রামে গিয়ে খেলা দেখে দারুণ খুশি। মেয়ের খেলায় খুব খুশি। এলাকার মানুষও খুব উপভোগ করেছে। অনেকেই আনন্দে শুভেচ্ছা জানাতে আসছে। কৃষ্ণা যেন দেশের জন্য আরো গৌরব বয়ে আনে সেই আশীর্বাদ চাই।’

গোপালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পারভেজ মল্লিক কৃষ্ণা রাণী সরকারকে সংবর্ধনা দেয়ার কথা জানিয়ে বলেছেন, ‘কৃষ্ণা শুধু গোপালপুর কিংবা টাঙ্গাইল জেলার মেয়ে নয়, সারা দেশের গর্ব। বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্টের মাধ্যমে তার উত্থান শুরু। দেশে ফেরার পর আমরা ওকে বড় করে একটি সংবর্ধনা দেব। কৃষ্ণার মাকে কিছুদিন আগে রত্নাগর্ভা সম্মাননা দেয়া হয়েছে।’

সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ছোট মনির বলেন, ‘কৃষ্ণা রাণী সরকারের অর্জনে আমরা পুরো দেশের মানুষ আজ গর্বিত। বিভিন্ন সময় ওকে আমরা সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছি। আমাদের গ্রামের মেয়েরা খেলাধূলায় আসতে চায় না। কৃষ্ণা সেখানে প্রত্যন্ত এলাকা থেকে আজ জাতীয় তারকায় পরিণত হয়েছে। ওর সাফল্যকে সম্মান জানাই। গ্রামের মেয়েদের প্রতিভা বিকাশের জন্য সমাজের বিত্তবানসহ সবাইকে রক্ষণশীলতা ভেঙে এগিয়ে আসতে হবে।’

Back to top button

Opps, You are using ads blocker!

প্রিয় পাঠক, আপনি অ্যাড ব্লকার ব্যবহার করছেন, যার ফলে আমরা রেভেনিউ হারাচ্ছি, দয়া করে অ্যাড ব্লকারটি বন্ধ করুন।