ফিচারলাইফস্টাইলস্বাস্থ্যস্বাস্থ্য ও লাইফস্টাইল

প্রতিদিন দুই কাপ চা পানে বাড়বে আয়ু!

অনেকের সকাল শুরু হয় চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে। চা ছাড়া অনেকের দিন হয় পানসে। সবাই দিনে এক কাপ দুই কাপ করে বেশ কয়েক কাপ চা কমবেশি পান করেই থাকেন। চা খেলেই অনেকের শরীর ও মন চাঙ্গা হয়ে ওঠে। তবে আমরা জানি, চা শরীরের জন্য ভালো নয়। বিশেষ করে যারা অনিদ্রা সমস্যায় ভোগেন তাদের জন্য চা হারাম। কেন না, চা’য়ে রয়েছে ক্যাফেইন। কিন্তু, সকল নিষেধাজ্ঞা টপকিয়ে নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন দুই কাপ চা বা এর বেশি চা পানে আয়ু বাড়ে। শুনতে আশ্চর্যের হলেও সত্যি, গবেষণা হতে পাওয়া যায়, যেসব ব্যক্তি চা পান করে না তাদের চেয়ে যারা চা পান করে এদের মৃত্যু ঝুঁকি ৯-১৩ শতাংশ কম।

সম্প্রতি গবেষণাটি অ্যানালস অব ইন্টারনাল মেডিসিনে প্রকাশিত হয়েছে। আর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের গবেষকরা ইউকে বায়োব্যাঙ্কের তথ্য ব্যবহার করে এই গবেষণা কাজ শুরু করেন। এই গবেষবায় ৪০-৬৯ বছর বয়সী প্রায় ৪ লাখ ৯৮ হাজার ৪৩ জন নারী ও পুরুষ অংশ নেন এবং গবেষকরা তাদের ১১ বছর ২ মাস ধরে পর্যবেক্ষণ করেন। এছাড়াও তখন তারা নামা তথ্য সংগ্রহ করেন।

গবেষণায় অংশ নেওয়া ৮৫ শতাংশ ব্যক্তি রিপোর্ট করেন, তারা নিয়মিত চা পান করেন এবং এর মধ্যে ৮৯ শতাংশ বলেন, তারা কালো চা পান করেন। আর ১৯ শতাংশ রিপোর্ট করেন তারা দিনে ৬ কাপের বেশি চা পান করে এবং তাদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে তারা বেশিরভাগই ছিলে ধূমপায়ী। এদের স্বাস্থ্য তুলনামূলক অন্যদের চেয়ে খারাপ ছিল।

আরও পড়ুন# এমআরএনএ ভ্যাক্সিন কী এবং এটি কীভাবে কাজ করে?

এই গবেষণার কাজ চলমান অবস্থাতে ফলোআপের সময়টাতেই মারা যান ২৯ হাজার ৭৮৩ জন। গবেষকরা দেখেন, দিনে ৩ কাপ চা খাওয়াতে মৃত্যু ঝুঁকি প্রায় ১২ শতাংশ কমে গেছে। কিন্তু যারা তিন কাপের অধিক চা প্রতিদিন পান করে তাদের মৃত্যু ঝুঁকি আবার তেমন কম ছিল না। এছাড়াও দুধ চিনি যোগ করা দুধ চা শরীরের ক্ষতি করে, মৃত্যু ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। অপরদিকে, কালো চা নিয়মিত পান করায় কমছে মৃত্যু ঝুঁকি। আর তাদের কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ, ইস্কেমিক হার্ট ডিজিজ ও স্ট্রোক থেকে মৃত্যুর ঝুঁকিও কম ছিল।

কালো চা কেন প্রতিরক্ষামূলক?

আমরা জানি, চায়ে পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণে পলিফেনল, যা মূলত উদ্ভিদজাত পণ্যে পাওয়া এক ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এই পলিফেনল কালো চায়ের তুলনায় সবুজ চায়ে বেশি পাওয়া যায়। তো গবেষকরা পরামর্শ দেন, এই পলিফেনল সমৃদ্ধ খাবার উচ্চ রক্তচাপ, কিছু টাইপের ক্যান্সার, কার্ডিওভাসকুলার রোগ ও টাইপ ২ ডায়াবেটিসসহ অনেক রোগ হতে রক্ষা করে।

চায়ে আছে পলিফেনলের মতো বায়োঅ্যাকটিভ। যা অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে সহায়তা করে’ এমনই মন্তব্য জানান যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ক্যানসার ইনস্টিটিউটের ক্যানসার এপিডেমিওলজি ও জেনেটিক্স বিভাগের অধ্যাপক ও গবেষণার লেখক ডা. মাকি ইনো চোই।

তাছাড়াও কালো চায়ে রয়েছে— থেফ্লাভিন ও থেরুবিগিন নামক পলিফেনল। এই থেফ্লাভিন শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও এতে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি, অ্যান্টি ক্যানসার ও অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য থাকার সম্ভাবনা আছে। যেটা রক্তের লিপিড নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। আমাদের খাদ্যে পলিফেনল থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে অতিরিক্ত পলিফেনল গ্রহণ করলে তা আবার শরীরে বিরুপ প্রভাব সৃষ্টি করে।

আরও পড়ুন# যেসব খাবার হ্যাপি হরমোন বাড়ায়!

অন্যদিকে, চীনের তিয়ানজিন মেডিকেল ইউনিভার্সিটির এক গবেষণা হতে জানা যায়, ‘কফি বা চা পান স্ট্রোক ও ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি কমায়। এছাড়াও যারা প্রতিদিন ২-৩ কাপ বা ৩-৫ বা ৪-৬ কাপ চা বা কফি পান করেন তাদের স্ট্রোক বা ডিমেনশিয়া হওয়ার ঝুঁকি ৩২ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়।’

প্রিয় পাঠক, চা উপকারি তা আমরা জানলাম। তবে মনে রাখতে হবে, দুধ চিনিযুক্ত চা আমাদের শরীরের জন্য উপকারী নয়, বরং তা শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। তাই চেষ্টা করুন, দুধ চিনি ব্যতীত প্রতিদিন দুই কাপ কালো বা সবুজ চা পান করতে। এছাড়াও কখনো অতিরিক্ত চা পান করা উচিত নয়। যাই হোক, আজকের মতো এখানেই। আর এই আর্টিকেলটি ভালো লাগলে অবশ্যই শেয়ার করবেন এবং এই ধরনের আরও আর্টিকেল পেতে অনুলিপির সাথেই থাকুন।

Back to top button

Opps, You are using ads blocker!

প্রিয় পাঠক, আপনি অ্যাড ব্লকার ব্যবহার করছেন, যার ফলে আমরা রেভেনিউ হারাচ্ছি, দয়া করে অ্যাড ব্লকারটি বন্ধ করুন।