
মৃত্যুর প্রায় ৯ মাস পর চট্টগ্রাম বন্দরের সাবেক নিরাপত্তা পরিদর্শক আবুল বশর চৌধুরীকে ৭ বছর ৬ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন চট্টগ্রামের একটি আদালত। দুর্নীতি দমন কমিশনের একটি মামলায় রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মুনসী আবদুল মজিদ এই রায় দেন।
তবে আবুল বশর চৌধুরী ৯ মাস আগে মারা গেলেও বিষয়টি কেউ আদালতকে অবগত করেননি বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকালে দুদকের আইনজীবী কাজী ছানোয়ার আহমেদ লাভলু বলেন, ২০১৫ সালে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় ১৪ লাখ ৪২ লাখ ৩২ টাকার সমপরিমাণ সম্পদের তথ্য গোপনের অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ২০০৪ এর ২৬ (২) ধারায় আবুল বশর চৌধুরীকে ৬ মাসের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন আদালত।
জরিমানার অর্থ অনাদায়ে আরও এক মাস সশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত। এছাড়া ৬৯ লাখ ৬ হাজার ৫৯৪ টাকা অবৈধ সম্পদ অর্জনের অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় একই আইনের ২৭ (১) ধারা অনুযায়ী তাকে ৭ বছর সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়া ১০ লাখ টাকা জরিমানা করেন, অনাদায়ে আরও এক বছর সশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত।
আরও পড়ুন# বগুড়ার শেরপুরে আড়াই বছরের শিশুকে ধ’র্ষণ, ধ’র্ষক বৃদ্ধ গ্রেফতার!
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ২৩ ডিসেম্বর আবুল বশর চৌধুরী মারা যান। তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের পটিয়া পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের গৌবিন্দের খীল গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের মৃত আবদুর রশিদ চৌধুরীর ছেলে। মৃত্যুর আগে তিনি পটিয়া পৌর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ছিলেন। স্থানীয়ভাবে তিনি এসআই বশর হিসেবে পরিচিত ছিলেন। দুদকের মামলার আগে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৮ সালের ২৪ ডিসেম্বর সত্য ও জবাবদিহি কমিশনে উপস্থিত হয়ে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের কথা স্বীকার করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে তিন লাখ টাকা জমাও দিয়েছিলেন এই আবুল বশর চৌধুরী।
স্থানীয় হাদু চৌধুরী জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির প্রচার সম্পাদক আজিজুল হক মুন্সী জাগো বলেন, বন্দরের সাবেক কর্মকর্তা এসআই বশর মারা গেছেন আরও নয় মাস আগে। হাদু চৌধুরী জামে মসজিদ কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে। কবরে তার জন্ম ও মৃ’ত্যু তারিখ লেখা ফলকও রয়েছে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, আবুল বশর চৌধুরী ১৯৭৪ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে এএসআই পদে যোগ দেন। পদোন্নতি পেয়ে এসআই, গেট সার্জেন্ট এবং সর্বশেষ ২০১৫ সালের ১৯ এপ্রিল ট্রাফিক পরিদর্শক হিসেবে অবসরে যান তিনি। এর আগে ২০০৭ সালের ২২ জুলাই পটিয়ার জনৈক আবুল কালামের অভিযোগের প্রেক্ষিতে আবুল বশর চৌধুরীর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। দুদকের তৎকালীন সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আবু নাছির অনিয়ম দুর্নীতির প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে ২০০৮ সালের ২৫ জুন আবুল বশর চৌধুরীর বিরুদ্ধে কমিশনের প্রতিবেদন জমা দেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আগেই মারা যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে দুদকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট কাজী ছানোয়ার আহমেদ লাভলু বলেন, আসামি সর্বশেষ দুই তারিখের আগেও আদালতে হাজির ছিলেন। কয়েকজন সাক্ষীকে নিজে জেরাও করেছেন। পরে তিনি আদালতে হাজির ছিলেন না। আসামিপক্ষের আইনজীবীরাও আদালতকে বিষয়টি অবগত করেননি। যদি আসামি মারা যাওয়ার বিষয়টি আদালতকে অবগত করতেন তাহলে সঙ্গে সঙ্গেই মামলার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যেত।