মোট প্রকল্প ব্যয় ৪২ কোটি, পরামর্শের নামে খরচ ২৭ কোটি!

স্থানীয় সরকার বিভাগের উদ্যোগে দেশের সব পৌরসভার কার্যক্রম ডিজিটালাইজেশন ও অটোমোশন করতে সম্প্রতি ৪২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব করেছে। যেখানে কাজ শুরু আগে, ২৭ কোটি (যা প্রকল্পের ৬৩.১৩ শতাংশ) টাকাই ব্যয় দেখানো হয়েছে পরামর্শ নিতে।
অস্বাভাবিক এবং অসামঞ্জস্যপূর্ণ বিশাল অঙ্কের এই ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন। সামনের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় এ নিয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের কাছে জানতে চাওয়া হবে বলে জানা গেছে।
পরিকল্পনা কমিশন জানায়, প্রকল্পটির আয়-ব্যয় বিশ্লেষণ করা হয়নি। পরামর্শ খাতে ৬৩.১৩ শতাংশ ব্যয়ের প্রস্তাব দেয়া হলেও পরামর্শকদের বেতন কাঠামো, ToR, বেতন কাঠামো, যোগ্যতা উল্লেখ করা হয়নি।
এর সাথে প্রকল্পের মাধ্যমে প্রস্তাবিত বিভিন্ন আইটেমের মূল্য নির্ধারণের ভিত্তি উল্লেখ করা হয়নি। বিভিন্ন সফট্ওয়ারের এ্যাপস নির্মাণ ও ক্রয়কৃত পণ্যের একক মূল্য ও স্পেসিফিকেশনের বিষয়েও প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন।
প্রকল্পের মূল অংশে ৩২৯ সেট পৌরসভার আইটি ইনফ্রাস্ট্রাকচার বাবদ ১২.৩৩ কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছিল। ইনফ্রাস্ট্রাকচার বাবদ বিস্তারিত ব্যয় বিভাজন ডিপিপিতে সংযুক্ত করা হয়নি বলেও কমিশনের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।
এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্ম সচিব (পরিকল্পনা অধিশাখা) আবু মোহাম্মদ মহিউদ্দিন কাদেরী বলেন, ডিজিটালাইজেশন ও অটোমেশন কাজের সঙ্গে পৌরসভার বেশিরভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারীই পরিচিত নয়। পরামর্শ খাতের আওতায় সবাইকে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে তোলা হবে। তাই এই ব্যয় বেশি নয়।
আরও পড়ুন: অনলাইন জুয়ায় কোটি টাকা আত্মসাৎ!
এদিকে পরিকল্পনা কমিশন বলছে, প্রস্তাবিত প্রকল্পের অনুরূপ কোনো প্রকল্প ইতঃপূর্বে এলজিইডি কর্তৃক বাস্তবায়ন করা হয়নি। কিন্তু এটুআই আইসিটি ডিভিশন অথবা অন্য কোনো সংস্থার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে দ্বৈততা পরিহার করা যেতে পারে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে যেসব সফটওয়্যার ও অ্যাপস প্রস্তুতের প্রস্তাব প্রকল্পটির প্রস্তাবনায় বলা হয়, বর্তমান সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ করা হয়েছে সেগুলো অনেকটাই আইসিটি বিভাগের আওতায় বিভিন্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অনলাইনে সব সরকারি সেবা প্রদান করার সিদ্ধান্ত প্রকল্পের মাধ্যমে নির্মাণ করা হয়েছে। সেগুলোকে কাস্টমাইজ করে গ্রহণ করেছে। সরকারের লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে মিল রেখে এলজিইডি পৌরসভায় ব্যবহার করলে সময় ও অর্থ সাশ্রয় হবে।
এ প্রকল্পের উদ্দেশে সম্পর্কে বলা হয়, প্রকল্পের মাধ্যমে পৌরসভার নাগরিকসেবাগুলো ই-সার্ভিসে রূপান্তরের মাধ্যমে জনগণকে সহজে ও দ্রুত সেবা প্রদান, ডিজিটাল পৌরসভা তৈরির লক্ষ্যে আইটি অবকাঠামো উন্নয়ন, পৌরসভার রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি, স্বচ্ছতা, হিসাব ও পৌর বাজেট, স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও নাগরিক অভিযোগ ব্যবস্থাপনা অটোমেশনের মাধ্যমে পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়নের ক্ষেত্রে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার। এই প্রকল্পের মাধ্যমে সরাসরি সুবিধা ভোগ করবেন দেশের ৩২৯ পৌরসভার ১৬ হাজার ৪৫০ জন সফটওয়্যার ব্যবহারকারী সেবাগ্রহীতা। আর পরোক্ষভাবে সুবিধাভোগ করবে দেশের ৩২৯ পৌরসভার সব পৌর নাগরিক।
এদিকে প্রকল্পের পটভূমি বিষয়ে বলা হয়, বর্তমান সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অনলাইনে সকল সরকারি সেবা প্রদান করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। সরকারের লক্ষ্যমাত্রার সাথে মিল রেখে এলজিইডি পৌরসভার নাগরিক সেবাসমূহ ই-সার্ভিসে রূপান্তর, ডিজিটাল পৌরসভা তৈরির লক্ষ্যে আইসিটি অবকাঠামোর উন্নয়ন, পৌরসভার রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি কল্পে বিভিন্ন কর, রেইট, ফিস আদায় ব্যবস্থাপনা অটোমেশন, স্বচ্ছতা আনয়নে হিসাব ও পৌর বাজেট, স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ব্যবস্থাপনা, মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও নাগরিক অভিযোগ ব্যবস্থপনা অটোমেশন, পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণসহ সকল কার্যক্রম বাস্তবায়নে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির চেষ্টা করছে। সে লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগ হতে মোট ৪২-৯৩ কোটি টাকা (জিওবি) প্রাক্কলিত ব্যয়ে এবং জানুয়ারি ২০২২ হতে ডিসেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য হাতে নিয়েছে।