যেসব খাবার হ্যাপি হরমোন বাড়ায়!
হরমোন আমাদের শরীরের রাসায়নিক বার্তাবাহক। আর এই হরমোনগুলো আমাদের শরীরের কাজ করার পদ্ধতি হতে শুরু করে আমরা কেমন অনুভব করি, তার সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়াও কিছু কিছু হরমোন রয়েছে, যেগুলো আমাদের সুখানুভূতিতে প্রভাব রাখে। এই হরমোনগুলোকে বলা হয় ‘হ্যাপি হরমোন’। আমাদের মোট চারটি হ্যাপি হরমোন আছে, যেমন—ডোপামিন, সেরোটোনিন, অক্সিটোসিন ও এন্ডোরফিন। এগুলো আমাদের মেজাজ, অনুভূতি, ভালো লাগা, ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। আর এগুলোর জন্যই মূলত আমরা খুশি হই, আনন্দে থাকি, আমাদের মনমেজাজ ভালো থাকে।
যেভাবে বাড়ে হ্যাপি হরমোন —
ডোপামিন:
ডোপানিন হরমোন আমাদের শরীরের অ্যাড্রিনাল গ্রন্থিতে উৎপাদিত হয়। এটি একটি নিউরোট্রান্সমিটার, যা আমাদের শরীর ও মস্তিষ্কের বিভিন্ন ধরনের ক্রিয়াকলাপের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। ডোপামিন হরমোনের উল্লেখযোগ্য কাজ হলো-নড়াচড়া, স্মৃতি ঠিক রাখা, মেজাজ ভালো রাখা, মনোযোগ ধরে রাখা ইত্যাদি। আমাদের শরীরে পর্যাপ্ত মাত্রায় ডোপামিন থাকা আবাশ্যক।
লাইফস্টাইল, খাবার, ব্যায়াম, ইত্যাদি সবই আমাদের শরীরে ডোপামিনের মাত্রা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। ডোপামিন নিঃসরণ বাড়ায় মূলত দুধ ও দুধজাতীয় খাবার, সামুদ্রিক মাছ, বাদাম, বিচিজাতীয় খাবার, ডিম, ডার্ক চকলেট ইত্যাদি খাবার।
সেরোটোনিন:
সেরোটোনিন হরমোন আমাদের মেজাজকে নিয়ন্ত্রণ করে। সাধারণত যেসব খাবার ট্রিপটোফ্যান নামক অ্যামিনো অ্যাসিড তৈরি করে, সেগুলো সেরোটোনিন সৃষ্টি করতে সহায়তা করে। সেরোটোনিন বাড়ানোর প্রাকৃতিক উপায় হলো, শরীর চর্চা বা ব্যায়াম। প্রতিদিন নিয়ম মেনে ব্যায়াম করলে আমাদের শরীরে সেরোটোনিন তৈরি বেড়ে যায়। এমনকি প্রতিদিন কমপক্ষে ১০ মিনিট হাঁটলে আমার মন মেজাজ ভালো থাকবে।
এইজন্য মানসিক স্থিরতার জন্য প্রতিদিন সকালের নির্মল পরিবেশে হাঁটা বেশ ভালো। এছাড়াও খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন—উচ্চ আঁশের শর্করাজাতীয় খাবার, ডিম, মাখন, টফু, টক দই, আনারস, গাঢ় সবুজ শাকসবজি, সামুদ্রিক মাছ, আয়রনজাতীয় খাবার, ইত্যাদি।
আরও পড়ুন# এমআরএনএ ভ্যাক্সিন কী এবং এটি কীভাবে কাজ করে?
অক্সিটোসিন:
অক্সিটোসিন নামক এই হ্যাপি হরমোনকে লাভ হরমোনও বলা হয়। এক গবেষণা নারীদের ওপর পরিচালনা করা হয় এবং সেখানে দেখা যায়, এই অক্সিটোসিন হরমোন বৃদ্ধি পেলে জীবনে সন্তুষ্টিও বৃদ্ধি পায়। আর এই হরমোন পুরুষের চেয়ে নারীদের ক্ষেত্রে বেশি প্রভাব ফেলে। নারীর শরীর ও সুখে বিশেষ ভূমিকা রাখে। সাধারণত প্রিয়জনের সাথে সময় কাটালে ও অন্যের প্রতি সদয় হলে বৃদ্ধি পায় অক্সিটোসিন হরমোন। এই হরমোন না ও শিশুর সম্পর্কের বন্ধনেও সহায়তা করে থাকে। এক কথায়, অক্সিটোসিন মানুসিক সুস্থতায় অবদান রাখে, পাশাপাশি আমাদের ভালো অনুভূতিও বাড়ায়।
চিয়াসিড, ডিমের কুসুম, কফি, টক ফল, কলা, জামজাতীয় ফল, কলিজা, মাশরুম, কলিজা ইত্যাদি খাবার খেলে তা শরীরে অক্সিটোসিন বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও সূর্যের আলো থেকে পাওয়া ভিটামিন-ডি ও এই হরমোন বাড়াতে পারে।
এন্ডোরফিন:
এন্ডোরফিন হরমোন আমাদের শরীর আনন্দিত করে তোলে। সাধারণত ব্যায়ামের পরে, সুস্বাদু খাবার খাওয়া, হাসা বা সহবাস করার সময় আমাদের মস্তিষ্কে এই এন্ডোরফিন হরমোন নিঃসৃত হয়। এছাড়াও এন্ডোরফিন ব্যথার অনুভূতি কমায় এবং উচ্ছ্বাসের অনুভূতি তৈরি করে। এই এন্ডোরফিন নিঃসরণ সুখের অনুভূতির দিকে নিয়ে যেতে পারে, ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
এন্ডোরফিন হরমোর তৈরিতে কাঁচা মরিচ, ডার্ক চকলেট, লাল চাল, ডিম, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট-জাতীয় খাবার, কলা, বাদাম ইত্যাদি খাবার সহায়তা করে।
********
প্রিয় পাঠক, সব কথার মূল কথা, নিজেকে সুখী রাখতে অর্থাৎ হ্যাপি হরমোন বাড়াতে সুষম খাবার ও ব্যায়ামের বিকল্প নেই। তাই নিয়মিত ব্যায়াম করুন এবং খাদ্য তালিকায় রাখুন সুষম খাদ্য। এতে করে আপনার হরমোন নিয়ন্ত্রণে থাকবে এবং জীবন হবে সুন্দর। এছাড়াও নেশাদ্রব্য বা অস্বাস্থ্যকর খাবার, অনিয়মিত জীবন-যাপন পরিত্যাগ করুন। চেষ্টা করুন সুন্দর পরিবেশে বসবাস করার।
যাইহোক, আজকের মতো এখানেই। আর এই আর্টিকেলটি ভালো লাগলে অবশ্যই শেয়ার করবেন এবং এই ধরনের আরও আর্টিকেল পেতে অনুলিপির সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ।