অর্থনীতিব্যবসা-বাণিজ্য

রিজার্ভ ঠেকেছে ৩৭ বিলিয়ন ডলারে!

সাম্প্রতিক সময়ে আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপ ও রেমিট্যান্স বৃদ্ধির নানা উদ্যোগের নিলেও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ কমছে না কিছুতেই। বর্তমানে ডলার সংকটের কারণে প্রতিদিনই রিজার্ভ থেকে ব্যাংকগুলোকে বৈদেশিক মুদ্রার যোগান দেওয়া হচ্ছে। যার ফলাফল, এক বছরে রিজার্ভ কমেছে সাড়ে ১১ বিলিয়ন ডলার।

এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) জুলাই-আগস্টের আমদানির জন্য এক দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলার বিল পরিশোধ করা হয়েছে আজ (৭ আগস্ট) । একইদিনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে ৫০ মিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে। এতে সবমিলিয়ে বুধবার মধ্যরাত থেকেই রিজার্ভের পরিমাণ হতে যাচ্ছে ৩৭ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার। প্রতি মাসে ৮ বিলিয়ন ডলার আমদানি ব্যয় হিসেবে ধরলেও মজুত বৈদেশিক মুদ্রা দিয়ে সাড়ে ৪ মাসের বেশি আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব না।

এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা রিজার্ভ কমলেও এটাকে স্বাভাবিকই বলছেন। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, কোনো দেশে ৩ মাসের আমদানি ব্যয়ের সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থাকা স্বস্তিদায়ক। সে হিসাবে আমাদের আছে প্রায় ৫ মাসের রিজার্ভ।

আরও পড়ুন: ডলারে অতিরিক্ত মুনাফা করায় আরও ৬ ব্যাংক’কে নোটিশ!

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংশ্লিষ্ট অন্য এক কর্মকর্তা জানান, দুই মাস পরপর আকুর সদস্যভুক্ত ৯টি দেশের (ভুটান, ভারত, ইরান, নেপাল, মিয়ানমার, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ ও বাংলাদেশ) আমদানি বিল পরিশোধ করা হয়। বুধবারে (৭ আগস্ট) বাংলাদেশ ব্যাংক এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) দায় পরিশোধের যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে। ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের মাধ্যমে বিল পরিশোধ করায় সাধারণত মধ্যরাতের পরেই বিলের অর্থ কেটে নেওয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক পরদিন সেটা রিজার্ভ থেকে বাদ দেয়। ফলে আজ মধ্যরাতেই বিল পরিশোধের অর্থ কেটে নেওয়া হবে। এরপর আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ঐ পরিমাণ অর্থ বাদ দেবে।

অন্যদিকে, সরকারি প্রকল্প ও নিত্যপণ্যের আমদানি বিল পরিশোধের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর কাছে কেন্দ্রীয় রিজার্ভ থেকে ৯৫ টাকা দরে ৫০ মিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যার ফলে রিজার্ভের পরিমাণ নেমে আসে ৩৮ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলারে। আগেই উল্লেখ্য, সেখান থেকে এক দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলারের আকু পেমেন্টের জন্য বিল পরিশোধ করা হয়। সে হিসাবে বুধবার মধ্যরাত থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ৩৭ দশমিক ২০ বিলিয়ন হতে যাচ্ছে।

অথচ ২০২১ সালে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে রিজার্ভ বেড়ে ৪৮ বিলিয়ন ডলারে উঠেছিল। রিজার্ভ ৪২ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে গত অর্থবছরের শেষের দিকে । তারপর গত ২০ জুলাই পর্যন্ত রিজার্ভ ৩৯ দশমিক ৮০ বিলিয়ন থেকে ৪০ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে ওঠানামা করে। গত  জুলাই শেষে যা কমে ৩৯ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসে।

আরও পড়ুন: ব্যাংকের টাকা মেরে নিজেদেরই দেউলিয়া ঘোষণা!

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংক আন্তঃব্যাংকে শুধু সরকারি জ্বালানি ও জরুরি খাদ্য আমদানির দায় মেটানোর ক্ষেত্রেই প্রতি ডলার ৯৫ টাকা দামে বিক্রি করছে। যেটা আগে ছিল ৮৬ টাকা। এখান থেকে এক টাকা বেশি দরে গ্রাহকের কাছে ডলার বিক্রি করতে পারবে ব্যাংকগুলো। কিন্তু ব্যাংকগুলোতে আন্তঃব্যাংক দামে কোনো ডলার লেনদেন হচ্ছে না।

তথ্যসূত্র থেকে জানা যায়, ব্যাংকগুলো বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স আহরণ করতে প্রতি ডলারের জন্য ১০৪ থেকে ১০৭ টাকা পর্যন্ত ব্যয় করছে। কিন্তু রপ্তানিকারকদের কাছ থেকে অপেক্ষাকৃত কম দামে অর্থাৎ প্রতি ডলার ১০০ টাকার নিচে কিনতে হচ্ছে। যা আবার রপ্তানি বিল নগদায়নে ১০১ থেকে ১০৩ টাকায় দিতে হচ্ছে। এভাবেই বিভিন্ন দরে ডলার কিনে ব্যাংকগুলো দাম সমন্বয় করছে।

বিভিন্ন এক্সচেঞ্জ হাউজে ডলার কেনাবেচা হচ্ছে ১০৭ থেকে ১০৮ টাকার মধ্যে। মূলত পর্যটক ও প্রবাসী বাংলাদেশিরা এই মাধ্যম থেকে বেশি লেনদেন করে থাকেন। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে মতিঝিল, ফকিরাপুল ও পল্টন এলাকায় খোলা বাজারে (খুচরায়) ডলার বিক্রি হচ্ছে ১০৮ থেকে ১১১ টাকার মধ্যে।

আরও পড়ুন: ১৯ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য ঘাটতিতে বাংলাদেশ!

আশার খবর হচ্ছে, রেমিট্যান্সে নানা ছাড় ও সুবিধা দেওয়ায় ইতিবাচক সাড়া মিলছে। চলতি বছরের আগস্টে ২০৩ কোটি ৮০ লাখ ডলারের (২০৩৮ মিলিয়ন ডলার) রেমিট্যান্স এসেছে। গত বছরের আগস্টে যার পরিমাণ ছিল ১৮১ কোটি ডলার (১৮১০ মিলিয়ন ডলার)। সে হিসাবে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় রেমিট্যান্স বেড়েছে ১২ দশমিক ৬০ শতাংশ। অন্যদিকে জুলাই মাসে এসেছিল ২০৯ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স। সে হিসাবে তুলনামূলকভাবে জুলাই অপেক্ষা আগস্টে প্রায় ৬ কোটি ডলার রেমিট্যান্স কম কমেছে।

মোট রেমিট্যান্স হিসেবে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (  জুলাই ও আগস্ট ) এসেছে ৪১৩ কোটি ৪০ লাখ ডলারের। আগের অর্থবছরের (২০২১-২২) তুলনায় যা ১২ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি। ২০২১-২০২২ অর্থবছরের জুলাই ও আগস্ট মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ৩৬৮ কোটি ২০ লাখ ডলার।

প্রবাসী বাংলাদেশিরা ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে ২০২১-২০২২ অর্থবছরে মোট দুই হাজার ১০৩ কোটি ১৭ লাখ (২১ দশমিক ৩ বিলিয়ন) মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছিলেন। যা আগের অর্থবছরের (২০২০-২০২১) চেয়ে ১৫ দশমিক ১১ শতাংশ কম। অন্যদিকে, ২০২০-২১ অর্থবছরে দুই হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ (২৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন বিভিন্ন দেশে কর্মরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

আরও পড়ুন: ক্রেডিট কার্ডে অনিয়ম, ২৭ ব্যাংকে নোটিশ!

Back to top button

Opps, You are using ads blocker!

প্রিয় পাঠক, আপনি অ্যাড ব্লকার ব্যবহার করছেন, যার ফলে আমরা রেভেনিউ হারাচ্ছি, দয়া করে অ্যাড ব্লকারটি বন্ধ করুন।