শাপলা ফুলের ৫টি মজাদার রেসিপি!

শাপলা বা শালুক ফুল বাংলাদেশের জাতীয় ফুল। তবে, এটি শুধু ফুল হিসাবে সৌন্দর্যবর্ধকই নয়। এই শাপলার বেশ কিছু পুষ্টিগুণও রয়েছে। এছাড়াও আদিকাল থেকে বাঙালি বা এশিয়ানরা শাপলাকে বিভিন্ন মুখোরোচক খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করেছে। বর্ষার মৌসুমে শাপলা খুবই সহজলভ্য। এখন চলছে বর্ষার মৌসুম, চারদিকে অহরহ শাপলা। তো, অনুলিপির আজকের এই পোস্টে আমরা জানব— শাপলা ফুলের ৫টি মজাদার রেসিপি সম্পর্কে! চলুন শুরু করা যাক!
শাপলা ফুলের ৫টি মজাদার রেসিপি
ইলিশ শাপলা:
জাতীয় ফুল ও মাছের মিশ্রণ ঘটালে সেটি অতুলনীয় স্বাদের না হয়ে পারে না। বলছিলাম, ইলিশ শাপলার এক দুর্দান্ত রেসিপির কথা৷
প্রয়োজনীয় উপাদান:
ইলিশ মাছ, শাপলা, পেয়াজ কুচি, কয়েকটি কাঁচামরিচ, লবণ, হলুদ গুড়ো, মরিচ গুড়ো, রসুন বাটা, পেঁয়াজ বাটা, ভোজ্য তেল ও পানি।
প্রস্তুত প্রণালি:
প্রথমে শাপলার ডাঁটার আঁশ ছাড়িয়ে পরিষ্কার করে নিন। এরপর টুকরো টুকরো করে কেটে নিন৷ ভালো মতো ধুয়ে পানি ঝড়িয়ে নেবেন। এরপর সেই শাপলা ভাপ দিয়ে কিংবা লবণ পানিতে হালকা সেদ্ধ করে নিন।
এবার মূল রান্নায় চলে যাই। একটি হাঁড়িতে প্রথমে পরিমাণ মতো সয়াবিন তেল দিন। তেল হালকা গরম হলে পেয়াজকুচি ও পরিমাণ মতো লবণ দিন, তবে খেয়াল রাখবেন সেদ্ধ শাপলাতেও লবণ থাকবে। এরপর পেঁয়াজ কুচি হালকা বাদামি হলে বাটা মশলা (পেঁয়াজ, রসুন) দিয়ে একটু ভেজে নিন। এরপর পানি দিয়ে গুড়া মশলাগুলো দিয়ে ভালো করে কষিয়ে নিন। কষানো মশলার ভেতর ইলিশ মাছের টুকরো দিয়ে মাছটা কষিয়ে নিন। কষানো হয়ে হলে মাছ তুলে আলাদা একটা পাত্রে রাখুন। এইবার বাকি মসলার মধ্যে সেদ্ধ শাপলা দিয়ে কিছুক্ষণ নেড়েচেড়ে ঝোলের জন্য পরিমাণ মতো পানি দিয়ে ঢেকে দিন। পানি ফুটে ওঠলে এইবার মাছগুলো দিয়ে দিন। এর কিছুক্ষণ পর কাঁচা মরিচ কুচি দিন৷ এরপর পছন্দ মতো ঝোল রেখে নামিয়ে নিন। ব্যস, হয়ে গেল ইলিশ শাপলা। গরম গরম ভাতের সাথে পরিবেশন করা করুন এই অতুলনীয় স্বাদের শাপলা।
#আরও পড়ুন: কোরবানির মাংস দ্রুত সেদ্ধ হওয়ার জাদুকরী টিপস!
চিংড়ি শাপলা:
চিংড়ি দিয়ে যা-ই রান্না করা হয়, তার স্বাদই হয় অমৃত। সেখানে চিংড়ি আর শাপলার মিশ্রণ হলে তো কথাই নেই৷
প্রয়োজনীয় উপাদান:
এক আঁটি শাপলা, ২৫০ গ্রাম চিংড়ি, ৩টা মাঝারি পেঁয়াজ কুচি, ২ চামচ রসুন বাটা, ৬-৭ টা কাঁচা মরিচ কুচি, ১/২চামচ হলুদ গুড়ো, স্বাদ মতো মরিচ গুড়ো, পরিমাণ মতো লবণ, তেল ও পানি।
প্রস্তুত প্রণালি:
প্রথমে শাপলার ডাঁটার আঁশ ছাড়িয়ে পরিষ্কার করে নিন। এরপর আগের বারের মতো ধুয়ে সেদ্ধ করে নিন৷ এরপর পানি ঝড়াতে দিন।
তো, প্রথমে একটা হাঁড়িতে তেল দিন, তেল গরম হলে তাতে চিংড়িগুলো দিয়ে লাল করে ভেজে নিন। এরপর এই চিংড়ির মধ্যেই পেঁয়াজ কুচি ও পরিমাণ মতো লবণ দিয়ে পেঁয়াজটা একটু ভেজে নিন। এরপর রসুন বাটা দিয়ে আরও কিছুক্ষণ ভাজুন। কয়েক সেকেন্ড নেড়েচেড়ে অল্প পানি দিয়ে গুড়ো মশলা দিন, এরপর মশলা ভালো করে কষান৷ কষানো হয়ে গেলে সেদ্ধ শাপলা ও কাচা মরিচ দিয়ে দিন। এক্ষেত্রে পানি ব্যবহার করার আর দরকার নেই। কারণ, শাপলা থেকেই যথেষ্ট পানি বের হবে, তাছাড়াও শাপলা সেদ্ধ করা। তো, ঢেকে দিন আর মাঝে মাঝে নেড়ে নিন। ১০ মিনিটের মতো এমন নেড়েচেড়ে নামিয়ে নিন। প্রস্তুত হয়ে গেল মজাদার চিংড়ি শাপলা।
সর্ষে শাপলা:
আমরা সর্ষে ইলিশ খেয়েছি, সর্ষে চিংড়ি, সর্ষে বিভিন্ন রেসিপি। কিন্তু, সর্ষে শাপলাও বেশ সুস্বাদু ও মজাদার একটা খাবার। মুখে লেগে থাকার মতন।
প্রয়োজনীয় উপকরণ:
এক আঁটি তাজা শাপলা, সর্ষে বাটা ২৫ গ্রাম, ৬-৭ টা কাঁচা মরিচ বাটা , স্বাদ অনুযায়ী লবণ, পরিমাণ মতো হলুদ, হাফ কাপ নারিকেলের দুধ, এক চিমটি চিনি।
প্রস্তুত প্রণালি:
বরাবরের মতোই শাপলার আঁশ ছাড়িয়ে ধুয়ে হালকা সেদ্ধ করে পানি ঝড়িয়ে নিতে হবে। এরপর একটি কড়াইতে তেল দিয়ে তেল গরম করে নিতে হবে। তেল গরম হলে তাতে সেদ্ধ শাপলা, হলুদ গুড়ো, পরিমাণ মতো লবণ দিয়ে কিছুটা সময় নেড়েচেড়ে নিতে হবে। এবার সর্ষে বাটা ও কাঁচা মরিচ বাটা দিয়ে আরও অল্প সময় নেড়ে নিতে হবে, বেশি সময় কষালে সর্ষে তেঁতো হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। আরও একটা টিপস হলো যখন সর্ষে বাটবেন তখন একসাথে কাঁচা মরিচ মিক্স করে বেটে নেবেন। তাহলে সর্ষের স্বাদ ও ফ্লেভার ভালো পাবেন। যাই হোক, কষানো হলে পরিমাণমতো পানি দিয়ে কিছুক্ষণের জন্য ঢেকে দিন। পানি কমে আসলে শেষ পর্যায়ে নারিকেল দুধ দিয়ে আরও কিছুক্ষণ জ্বাল দিন। একদম শেষ পর্যায়ে লবণ চেখে নিন ও এক চিমটি চিনি দিন। কিছুক্ষণ নেড়েচেড়ে নামি নিন সর্ষে শাপলা। যদিও এই রান্নাটি নিরামিষ। কিন্তু, ভাতের সাথে খেতে অসাধারণ হয় এই সর্ষে শাপলা।
#আরও পড়ুন: গোরুর মাংসের তিনটি সহজ ও মজাদার রেসিপি!
শাপলা ফুলের বড়া:
শাপলা ফুল দেখতে বেশ সুন্দর। অনেকেই আমরা শাপলার ডাঁটা বিভিন্ন ভাবে খেলেও আদতে জানি না যে শাপলার ফুলটাও খেতে চমৎকার। এই ফুল দিয়ে হয় বেশ কিছু মজাদার রেসিপি। এখন আমরা জানব— কীভাবে শাপলা ফুলের বড়া বানানো যায়!
প্রয়োজনীয় উপাদান:
শাপলা ফুল ১০ টি, বেসন ৪ চা চামচ, চালের গুঁড়ো ৪ চা চামচ, কালো জিরে ১ চামচ, মরিচ গুড়ো ১/২ চামচ, হলুদ গুড়ো ১/২ চামচ, বেকিং পাউডার, স্বাদ মতো লবণ, পানি ও চিনি এবং ভাজার জন্য তেল।
প্রস্তুত প্রণালি:
প্রথমে শাপলা ফুলগুলো বেছে নিতে হবে, যাতে পোকামাকড় না থাকে। এরপর ফুলের গুলো কেটে নিতে হবে। তবে ফুলের ভেতরের হলুদ অংশ ও ফুলের বোঁটার সাথে লাগা সবুজ পাঁপড়ি ফেলে দিতে হবে। কেন না, হলুদ অংশ থাকালে বড়া খেতে তেঁতো লাগবে। এরপর কেটে নেওয়া শাপলা ভালো ভাবে ধুয়ে পানি ঝড়াতে হবে।
এইবার অন্য একটি পাত্রে বেসন, চালের গুঁড়ো, মরিচ গুঁড়ো, হলুদ গুঁডো, পরিমাণ মতো নুন ও চিনি ও সামান্য বেকিং সোডা মিশিয়ে নিতে হবে। এরপর এতে অল্প অল্প পানি দিয়ে একটা পাতলা বাটার তৈরি করে নিতে হবে এবং বাটারটি খুব ভালো করে ফেটিয়ে নিতে হবে যাতে দানা দানা না থাকে।
এবার একটি কড়াইতে তেল দিতে হবে, তেলের পরিমাণটা একটু বেশিই দিতে হবে। যাকে বলে ডুবো তেল। ডুবো তেল ছাড়া বড়া ভাজা ভালো হবে না। যাই হোক, এবার একটা একটা করে ফুল নিয়ে ভালো করে বাটারে চুবিয়ে সাবধানে গরম তেলে ছাড়তে হবে। ভাজার ক্ষেত্রে মিডিয়াম আঁচে ভাজবেন। তারপর বাদামি কালার ও মচমচে হলে তেল ঝড়িয়ে একটু টিসু দেওয়া থালা বা বাটিতে তুলে নিন। হয়ে গেল খুব সহজে মজাদার মচমচে শাপলা ফুলের বড়া।
শাপলা মসুর ডাল:
মসুর ডাল দিয়ে পেঁপে, লাউ বিভিন্ন শাক যেমন খাওয়া যায়, তেমনি শাপলাও খাওয়া যায়। এই রেসিপি যেমন মজাদার হয়, তেমনি স্বাস্থ্যকর।
প্রয়োজনীয় উপাদানগুলো:
শাপলা কাটা ২-৩ কাপ, মসুর ডাল ১ কাপ, কাঁচামরিচ ৪টি, শুকনো মরিচ ১ টি, তেজপাতা ১ টি, হাফ চামচ কালো জিরে, হাফ চামচ হলুদ, স্বাদ মতো লবণ, ২-৩ টি পেঁয়াজ কুচি, তেল ৪ চা চামচ, পানি।
প্রস্তুত প্রণালি:
প্রথমেই শাপলার আঁশ ছাড়িয়ে শাপলা কেটে নিতে হবে। এরপর ধুয়ে লবণ দিয়ে মেখে রাখতে হবে। অন্যদিকে, মসুর ডাল ধুয়ে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখতে হবে। মসুর ডাল কিছুটা ভিজলে একটা পাত্র নিয়ে তাতে ডাল, লবণ ও হলুদ দিয়ে চুলায় মাঝারি আঁচে ডাল সেদ্ধ হতে দিন। সেদ্ধ হলে নামিয়ে রাখুন।
এবার, অন্য একটি প্যানে তেল গরম করে তাতে ফোঁড়ন হিসাবে কালো জিরে, শুকনো মরিচ, তেজপাতা, পেঁয়াজকুচি দিন। পেঁয়াজ কিছুটা ভাজা হলে শাপলা দিন, এক্ষেত্রে লবণ মাখা শাপলার পানি চিবে আবার ধুয়ে নিতে হবে। তো শাপলা দিয়ে কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করুন। এরপর সেদ্ধ হওয়া পানিসহ ডালগুলো ও কাঁচামরিচ দিয়ে দিন। কিছুক্ষণ জ্বাল দিয়ে লবণ চেখে নামিয়ে নিন। হয়ে গেল স্বাস্থ্যকর শাপলা ডাল।
প্রিয় পাঠক, এই ছিল— শাপলা ফুলের ৫টি মজাদার রেসিপি! এই সিজনে আপনারা রেসিপিগুলো বাড়িতে ট্রাই করে দেখতে পারেন। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন। এ ধরনের আরও নতুন নতুন রেসিপি পেতে অনুলিপির সাথে থাকুন। ধন্যবাদ।