আন্তর্জাতিকফিচার

শিনজো আবের বর্ণাঢ্য জীবন: উত্থান, বিতর্ক ও মৃত্যু

সদ্য প্রয়াত শিনজো আবে ছিলেন জাপানে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা প্রধানমন্ত্রী। আগ্রাসী পররাষ্ট্রনীতি এবং নিজস্ব অর্থনৈতিক কৌশল তাকে বিশ্বের রাজনৈতিক ইতিহাসে বিশেষ পরিচয়ে পরিচিত লাভ করিয়ে দেয়। ২০০৬ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত এবং ২০১২ থেকে টানা ২০২০ পর্যন্ত জাপানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা এই নেতা জাপানের সাধারণ নাগরিকদের কাছে ছিলেন তুমুল জনপ্রিয়। তবে তার প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা কালীন সময়ে বেশ কিছু বিতর্কেরও সৃষ্টি হয়।

শিনজো আবের বর্ণাঢ্য জীবন

শিনজো আবের ক্ষমতায় উত্থান

১৯৫৪ সালের ২১ সেপ্টেম্বরে শিনজো আবের জন্ম হয় জাপানের এক বিখ্যাত রাজনৈতিক পরিবারে। শিনজোর দাদা ক্যান আবে ছিলেন জাপানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী, বাবা পররাষ্ট্রমন্ত্রী শিনতারো আবে। ফলে ছোটো বেলা থেকেই রাজনৈতিক পরিবেশের মধ্যে তার বসবাস। ১৯৯৩ সালে ছিল মাত্র ৩৮ বছর তিনি প্রথম পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৫ সালে পান মন্ত্রিসভার সদস্য পদ । ২০০৬ সালে জাপানের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে প্রথম দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ১ বছর। তবে এ সময়ে কিছু বিতর্কের জন্ম হয়। এজন্য ২০০৭ সালে অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে তিনি পদত্যাগ করেন। পরবর্তীতে ২০১২ সালে তিনি আবারও ক্ষমতায় আসেন। এই মেয়াদ কালীন সময়েই তিনি বেশি আলোচিত হন।

বিশেষ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কৌশল

শিনজো আবে বিশেষ কিছু রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মতাদর্শ অনুসরণ করতেন। প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র নীতিতে তার অবস্থান ছিল আগ্রাসী ধরণের। তিনি জাপানের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সংবিধানও বদলানোর চেষ্টা চালিয়েছেন। অনেকে মনে করেন এই প্রচেষ্ঠার মাধ্যমে আবে যুদ্ধের সময়ে জাপানের সাথে ঘটা সহিংসতার ইতিহাসকে মুছে ফেলার চেষ্টা চালিয়েছেন। তবে জাপানের অর্থনীতিতে আবের ভূমিকা অনেক। তার সময়কার অর্থনীতিকে আবেনোমিক্স বলা হয়। এই নীতির তিনটি মূল লক্ষ্যমাত্রা হলো – কাঠামোগত সংস্কার, মুদ্রানীতি শিথিলকরণ এবং রাজস্ব নীতির সংস্কার। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ইকোনমিস্ট এই আবেনোমিক্সকে মুদ্রাস্ফীতি, সরকারি ব্যয় ও প্রবৃদ্ধির কৌশলের সমন্বয়ক বলে উল্লেখ করে। আবেনোমিক্সের নেতিবাচকের মধ্যে রয়েছে স্বল্পমেয়াদী সুদের হার যা ভোক্তা এবং কোম্পানিগুলির জন্য অর্থ ধার করা সহজ করে তোলা। তবে করোনা মহামারির মধ্যে জাপানের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় মন্দা দেখা দিলে খুব সমালোচিত হয় শিনজে আবের আবেনোমিক্স নীতি

তুমুল জনপ্রিয় ছিলেন আবে
জাপানে তুমুল জনপ্রিয় ছিলেন শিনজো আবে

করোনা মহামারী সামাল

করোনা ভাইরাস মহামারি শুরু হলে আবের রাজনৈতিক নীতি নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। অনেকে মনে করেন দেশের অভ্যন্তরীণ পর্যটন খাতের মাত্রা বাড়াতে আবের প্রচারণা সংক্রমণ বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের আমলে বড় ১১ দেশের বাণিজ্য চুক্তি করে। পরে যুক্তরাষ্ট্র সরে গেলে তা টিকিয়ে রাখার কৃতিত্ব পান শিনজো আবে। আন্তর্জাতিকভাবে এই ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ গড়ে তোলার কৃতিত্ব পেয়ে থাকেন আবে।

আরও পড়ুন # যেভাবে গদি হারালেন বরিস জনসন!

পদত্যাগ ও মৃত্যু

২০২০ সালের ২৮ আগস্ট অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে আবে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। তার পদত্যাগের পর এলডিপির অভ্যন্তরে বিরোধ দেখা দেয়। কারণ তিনি কোনও উত্তরসূরির নাম ঘোষণায় আগ্রহ দেখাননি। পরবর্তিতে দায়িত্ব দেওয়া হয় বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ ও ক্যাবিনেট সদস্য ইয়োশিদি সুগাকে। এরপর সুগাকে পদচ্যুত করে ক্ষমতায় আসেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা। এই ক্রোন্দলের সময়ে অভ্যন্তরীণ রাজনীতি থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখেন আবে।

গুলি লেগে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন আবে
গুলি লেগে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন শিনজো আবে

গত ৮ জুলাই দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর নারাতে এলডিপির এক প্রার্থীর নির্বাচনি প্রচারণায় অংশ নিয়েছিলেন আবে। সেখানে বক্তৃতাকালীন সময়ে ৪১ বছর বয়সী জাপানের এক সেলফ-ডিফেন্স ফোর্সের সাবেক সদস্য তার ওপর গুলি চালায়। আবেকে হাসপাতলে নিয়ে যাওয়ার সাড়ে ৪ ঘন্টা পর মৃত্যু হয়। 

 

Back to top button

Opps, You are using ads blocker!

প্রিয় পাঠক, আপনি অ্যাড ব্লকার ব্যবহার করছেন, যার ফলে আমরা রেভেনিউ হারাচ্ছি, দয়া করে অ্যাড ব্লকারটি বন্ধ করুন।