হারিয়ে যাচ্ছে যেসব নদ-নদী!

নদী মাতৃক বাংলাদেশ। মূলত নদ-নদীর তটে বয়ে আসা পলি মাটি থেকে জন্ম হয়েছে বাংলাদেশের। শিরায় শিরায় বয়ে চলা এসব নদী গুলোর জন্ম হয়েছে সেই প্রাগৈতিহাসিক আমলেই। উঁচু পাহাড় থেকে বয়ে আসা ঝরনা ধারা বা প্রাকৃতিক নানা ঘটনা-দুর্ঘটনা এসব নদীর গতি পথ তৈরি করেছে। নদীর ধর্ম বয়ে চলা, তবে সে চলায় রদবদলও ঘটে মাঝে মধ্যে। কখনো নদীর গতিপথ পাল্টে যায় কখনো স্লথ হয়ে যায় প্রবাহ ধারা। আবার কখনোবা আস্ত একটি নদী-ই হারিয়ে যায় কালের গর্ভে। বাংলাদেশের মোট নদ-নদী সংখ্যার হিসাব দেওয়া একটু কঠিন-ই বটে। ইতিহাসবিদ, কবি-সাহিত্যিকদের বর্ণনায় নানা মতবিরোধের সৃষ্টি হয়েছে। কেউ বলছেন বাংলায় ১৩ শত নদী ছিল; কোন বর্ণনায় এসেছে ১৬-১৭শ! সেই সংখ্যা যায় হোক- গত কয়েকশো বছরে হারিয়ে গেছে অন্তত কয়েক হাজার নদী। হারিয়ে যাওয়া সেসব নদীর সঠিক হিসাব কষাও সম্ভব হয়নি এত দিনে। আজ কালের গর্ভে বিলীন হতে বসা পরিচিত কিছু নদ-নদী নিয়ে কথা বলব।
ঘাঘট নদী
দেশের উত্তর উঞ্চলে প্রবাহিত নদী ঘাঘট। নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার আবলিখানা নামক বিল থেকে উৎপত্তি লাভ করে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে যাত্রা শুরু করে নদীটি। পরবর্তীতে গাইবান্ধা শহরের মধ্য দিয়ে সর্পিল গতিতে প্রবাহিত হয়ে উত্তরের ব্রহ্মপুত্র নদের সাথে মিলিত হয়েছে। ধারণা করা হয় রংপুর শহর মূলত ঘাঘটের তীরে গড়ে উঠেছে। তবে বর্তমানে নদীটি আর আগের অবস্থায় নেই। মৃত প্রায় হয়ে খালের মতো প্রবাহিত হচ্ছে গাইবান্ধা শহরে।
বুড়িভদ্রা
বুড়িভদ্রার এখন আর অস্তিত্ব নেই। একসময় যশোরের কেশবপুর-চুপকনগর থেকে সুন্দরবন হয়ে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হতো নদীটি। নদীর পাশে গড়ে উঠেছিল এক বিশাল রাজ প্রসাদ। রাজা ভরত রাজ নামে এক বোদ্ধ শাসক আস্তানা গড়ে ছিল এখানে। রাজা ভরতের সাথে সাথে বুড়িভদ্রা নদীও এখন হারিয়ে গেছে কালের অবর্তে।
হরিহর
যশোরের আরেকোটি মৃত নদী হরিহর। ইংরেজ আমল পর্যন্ত এ নদীর জৌলুশ ছিল। ইংরেজ সরকার রাস্তা বানানোর লক্ষ্যে হরিহরের উপরে বাধ নির্মাণ করে। এই বাধ-ই কাল হয়ে দাঁড়ালো। এখন যশোর, সাতক্ষীরা, বেনাপোল অঞ্চলের কিছু অংশে হরিহরের রেখা দেখা গেলেও মূল নদীর ইতি ঘটেছে।
আরও পড়ুন# নকশি পাখা: সুতোয় গাঁথা স্বপ্ন যেন!
ধরলা নদী
পশ্চিম বঙ্গের জলপাইগুড়ি ও কোচবিহারের হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে ধরলা। উৎপত্তিস্থল হিমালয়ে জলঢাকা। এর বাংলাদেশ অংশে ধরলার দৈর্ঘ্য প্রায় ৭৫ কিলোমিটার। তবে ধরলা এখন প্রবাহিত হচ্ছে খাল হিসাবে। নদীর দুই পাশে দখলদারী আর আবর্জনায় প্রকৃত আয়তন কমে এসেছে। ধারণা করা হচ্ছে এভাবে চলতে থাকলে অল্প কিছুদিনের মধ্যে পুরো ধরলাই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
সোনাই নদী
দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জ জেলাকে একত্রিত করেছে সোনাই নদী। বাংলাসেশে এর দৈর্ঘ্য ৩০ কিলোমিটার, এবং গড় প্রস্থ ৪১ মিটার। কিন্তু দীর্ঘ দিন ধরে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ও নদী ভাঙনের জন্য বিলীন হতে বসেছে নদীটি।
কপোতাক্ষ নদ
মাইকেল মধুসূদন দত্তের স্মৃতিমাখা কপোতাক্ষ নদের এখন বেহাল দশা। নদীর মূল প্রবাহ কোনমতে টিকে থাকলেও হারিয়েছে পুরাতন যৌলুস।
নদী দখল আর দূষণের মাত্রা এতটাই বেড়ে গেছে যে নদীর আয়তন প্রায় ৫০ ভাগ নষ্ট হয়ে গেছে। এক সময় যে কপোতক্ষে জোয়ার উঠত, লঞ্চ-ইস্টিমার চলত এখন সেখানে বর্ষা মৌসুমেও খাঁ খাঁ করে।