আন্তর্জাতিকসন্দেশ

হিজাব না পরায় মারধর, ইরানি তরুণীর মৃ’ত্যু!

হিজাব না পরার দায়ে গ্রেপ্তার হওয়া ২২ বছর বয়সী ইরানি তরুণী মাহসা আমিনি আজ শুক্রবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। মঙ্গলবার তিনি ইরানের নৈতিকতা বিষয়ক পুলিশ কর্তৃক গ্রেফতার হন। এরপর নৈতিক পুলিশ তাকে মারধর ও নির্যাতন করে। মারধর করার একপর্যায়ে তিনি কোমায় চলে যান। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন বিস্তারিত না জানিয়ে স্ক্রলের লেখায় তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

আমিনি সপ্তাহের শুরুতে ইরানের কুর্দিস্তান প্রদেশ থেকে রাজধানী তেহরানে আত্মীয়দের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলেন। তখন সম্পূর্ণরূপে চুল ঢেকে না যাওয়ার জন্য ইরানের নৈতিকতা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে ধরে নিয়ে যায়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার তেহরানে মাহসা আমিনিকে তুলে নেওয়ার সময় পুলিশ ভ্যানের ভেতরে তাকে মারধর করা হয়। অবশ্য পুলিশ এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে। তারা জানায়, আমিনী হৃদরোগের সমস্যায় ভুগছিলেন।

অন্যদিকে আমিনির পরিবারের দাবি, তিনি একজন সুস্থ তরুণী ছিলেন। তার হৃদরোগের কোনো লক্ষণ এবং পূর্ব ইতিহাস ছিল না কিংবা তিনি চিকিৎসাধীনও ছিলেন না।

আমিনিকে গ্রেফতারের কয়েক ঘণ্টা পর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বলে তার পরিবারকে জানানো হয়। আমিনি শুক্রবার মৃত্যুর আগে পর্যন্ত কোমায় ছিলেন বলে জানিয়েছে তার পরিবার।

আরও পড়ুন# সুইজারল্যান্ডে বৈধতা পেল আ’ত্মহত্যার যন্ত্র!

তেহরান পুলিশ বলেছে, আমিনিকে হিজাব সম্পর্কে ‘ন্যায্যতা ও শিক্ষার’ জন্য গ্রেফতার করা হয়েছে এবং সকল নারীদের জন্য হিজাব পরা ইরানি আইন অনুযায়ী বাধ্যতামূলক।

আমিনির ঘটনা ইরানের ভেতর এবং বাইরে থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকা আমিনির ছবি পোস্ট করে এক টুইটার ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘মাহসা আমিনির কান দিয়ে রক্ত ​​পড়ছে। খুব সম্ভবত প্রচণ্ড মারধরের কারণে তার মাথার খুলি ভেঙে গেছে এবং তার কান দিয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে। হার্ট অ্যাটাকের গল্পটি বানোয়াট। আমরা একটি ভয়ানক অপরাধ মোকাবেলা করছি।’

সরকার সমর্থক ব্যক্তিসহ অনেক ইরানি গাইডেন্স প্যাট্রোল নামে পরিচিত নৈতিকতা পুলিশের অস্তিত্ব সম্পর্কে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করছে। পাশাপাশি অনেক ইরানি দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনিকে সরাসরি দোষারোপ করছে। তার একটি পুরানো বক্তৃতা নতুন করে সামনে এসেছে। যেখানে তিনি নৈতিকতা পুলিশের ভূমিকাকে নির্যাতনের ব্যাপারে ন্যায্যতা দিয়েছেন এবং জোর দিয়ে বলেছেন যে ইসলামি শাসনের অধীনে মহিলাদের অবশ্যই ইসলামি আইন ও পোশাকবিধি পালন করতে বাধ্য করা হবে।

এদিকে শুক্রবার ইরানের সংস্কারবাদী রাজনীতিবিদ এবং প্রাক্তন আইন প্রণেতা মাহমুদ সাদেঘি আমিনির মামলার বিষয়ে কথা বলার জন্য খামেনিকে আহ্বান জানিয়েছেন। একইসঙ্গে রাষ্ট্রপতি ইব্রাহিম রাইসির বলার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং তেহরানের বিচারক মাহসা আমিনির মামলার তদন্ত শুরু করেছে।

উল্লেখ্য ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামি বিপ্লবের পর ইসলামী প্রজাতন্ত্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে দেশটি। এর পরপরই দেশটি নারীদের জন্য হিজাব পরা বাধ্যতামূলক করে সরকার। আর এসব ব্যাপারে খেয়াল রাখার জন্যে নিয়োগ দেওয়া হয় নৈতিকতা পুলিশ। পোশাকনীতি অনুযায়ী নারীদের জনসমক্ষে তাদের চুল সম্পূর্ণভাবে ঢেকে রাখতে হবে এবং লম্বা, ঢিলেঢালা পোশাক পরতে হবে। তবে বর্তমানে অনেক ইরানি নারীরা রক্ষণশীলতা ভেঙে বাইরে বেরিয়ে আসার ব্যাপারে সোচ্চার হচ্ছেন!

Back to top button

Opps, You are using ads blocker!

প্রিয় পাঠক, আপনি অ্যাড ব্লকার ব্যবহার করছেন, যার ফলে আমরা রেভেনিউ হারাচ্ছি, দয়া করে অ্যাড ব্লকারটি বন্ধ করুন।