হুন্ডিতে এক বছরে পাচার ৭৫ হাজার কোটি টাকা!
মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিস ব্যবহার করে বিলিয়ন ডলারের ডিজিটাল হুন্ডি কারবারের তথ্য দিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এ পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়েছে ১৬ জনকে। তদন্তের প্রসঙ্গে সিআইডি জানায়, দেশের ডলারের দাম বাড়াসহ নানা কারণে পদক্ষেপ নেবার সিদ্ধান্ত নেয় সিআইডি।
সিআইডি সূত্রমতে, গত এক বছরে হুন্ডি ব্যবসায়ীদের পাচারকৃত অর্থের পরিমাণ প্রায় ৭৫ হাজার কোটি টাকা, বৈদেশিক মুদ্রায় যার পরিমান ৭.৮ বিলিয়ন ডলার।
এই অভিযোগে গ্রেফতারকৃতরা হলেন- আক্তার হোসেন (হুন্ডি এজেন্ট), দিদারুল আলম সুমন (হুন্ডি এজেন্ট), খোরশেদ আলম ইমন (হুন্ডি এজেন্টের সহযোগী), রুমন কান্তি দাস জয় (বিকাশ এজেন্ট), রাশেদ মাঞ্জুর ফিরোজ (বিকাশ এজেন্ট), মো. হোসাইনুল কবির (বিকাশ ডিএসএস), নবীন উল্লাহ (বিকাশ ডিএসএস), মো. জুনাইদুল হক (বিকাশ ডিএসএস), আদিবুর রহমান (বিকাশ ডিএসও), আসিফ নেওয়াজ (বিকাশ ডিএসও), ফরহাদ হোসাইন ( বিকাশ ডিএসও), আবদুল বাছির (বিকাশ এজেন্ট), মাহাবুবুর রহমান সেলিম (বিকাশ এজেন্ট), আবদুল আউয়াল সোহাগ (বিকাশ এজেন্ট), ফজলে রাব্বি (বিকাশ এজেন্ট)।
গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে ১০ লাখ ৪৬ হাজার ৬৮০ টাকা, চার সিমে তিন কোটি ৪৬ লাখ ৪৭ হাজার ২২৯ ইলেকট্রনিক মানি, মোবাইল ৩৪টি। এ ঘটনায় সিআইডি মোট ৪টি মামলা দায়ের করেছে ।
এসব কথা বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জানান সিআইডি প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া।
আরও পড়ুন: রিজার্ভ ঠেকেছে ৩৭ বিলিয়ন ডলারে!
তিনি আরও বলেন, যেই ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের জিজ্ঞাসাবাদে গত চার মাসে ২০ কোটি ৭০ লাখ টাকা পাচার হয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া, এমএফএসের মাধ্যমে হুন্ডি করে এমন ৫ হাজারের বেশি এজেন্টের সন্ধান পেয়েছে সিআইডি।
সিআইডি প্রধান বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে আমরা জানতে পারি তারা বিকাশ, নগদ, রকেট ও উপায়ের মাধ্যমে এই ৫ হাজার এজেন্ট গত ৪ মাসে ২৫ হাজার কোটি এবং বছরে ৭৫ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে।
মোহাম্মদ আলী মিয়া রেমিটেন্স বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণপ্রবাহ উল্লেখ করে বলেন, সম্প্রতি বিশ্ব পরিস্থিতি দেশের অর্থনীতির ওপর যে চাপ তৈরি করেছে তা মোকাবিলা করার জন্য সরকার অত্যন্ত তৎপর। হুন্ডি সবসময় রিজার্ভের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশের অর্থনীতির উপর এই ঝুঁকি মোকাবিলায় সিআইডি হুন্ডি কার্যক্রমের উপর নজরদারী শুরু করে।
অনুসন্ধানের মাধ্যমে জানা যায়, একটি সংঘবদ্ধ চক্র অবৈধভাবে হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে অর্থপাচার এবং বিদেশে অবস্থানরত ওয়েজ আনরিদের কষ্টার্জিত অর্থ বিদেশ থেকে বাংলাদেশে না এনে স্থানীয় মুদ্রায় মূল্য পরিশোধ করার মাধ্যমে মানি লন্ডারিং অপরাধ করে আসছে।
তিনি জানান, সংঘবদ্ধ হুন্ডিচক্র প্রবাসে বাংলাদেশিদের উপার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করে তা বাংলাদেশে না পাঠিয়ে উক্ত বৈদেশিক মুদ্রার সমপরিমাণ মূল্যে স্থানীয় মুদ্রায় পরিশোধ করে। এ কাজে অপরাধীরা তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে কাজটি করে থাকে। প্রথম গ্রুপ বিদেশে অবস্থান করে প্রবাসীদের কাছ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করে, দেশ থেকে যারা টাকা পাচার করতে চায় তাদের দেয়। দ্বিতীয় গ্রুপ পাচারকারী ও তার সহযোগীরা দেশীয় মুদ্রায় উক্ত অর্থ এমএফএস এজেন্টকে দেয়। তৃতীয় গ্রুপ তথা এমএফএস এজেন্টরা বিদেশে অবস্থানকারীর কাছ থেকে প্রাপ্ত এমএফএস নম্বরে দেশীয় মুদ্রায় মূল্য পরিশোধ করে।
এসব চক্র অবৈধভাবে প্রতিনিয়ত এমএফএস ব্যবহার করে ক্যাশ ইনের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হুন্ডি করছে। এমএফএস এজেন্টদের সহযোগিতায় পাচারকারীরা বিদেশে স্থায়ী সম্পদ অর্জনসহ অনলাইন জুয়া, মাদক কেনাবেচা, স্বর্ণ চোরাচালান, ইয়াবা ব্যবসাসহ প্রচুর অবৈধ ব্যবসাও পরিচালনা করছে।
