‘৪৬০ কোটি বছর আগের’ মহাকাশের ছবি দেখল বিশ্ববাসী!

মহাকাশের গভীরতম পূর্ণাঙ্গ ছবি তুলে নতুন ইতিহাস তৈরি করেছে আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা, ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (নাসা)। জেমস ওয়েব স্পেস নামক টেলিস্কোপের সাহায্যে সাড়ে চারশো কোটি বছর আগের মহাকাশের পূর্ণাঙ্গ রঙিন ছবি প্রথম বারের মতো দেখতে পেলো বিশ্ববাসী!
গত ১১ জুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপে তোলা একটি ছবি আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রকাশ করে। এরপর ১২ জুন রাতে নাসার ওয়েব সাইটে আরো কয়েকটি ছবি প্রকাশ করা হয়। পৃথিবীর জন্মেরও আগের এসব দেখে তোলপাড় পড়ে যায় সারা বিশ্বে। এর আগে হাবল টেলিস্কোপের সাহায্য এরকম কিছু ছবির দেখা মিললেও সেগুলো এত নিখুঁত ও স্পষ্ট ছিল না।

কী দেখা যাচ্ছে ছবিতে?
মহাবিশ্বের সাড়ে চারশো কোটি বছর আগের ছায়াপথগুচ্ছের একটি অংশকে ধারণ করেছে ছবিটি। যার নামকরণ করা হয়েছে ‘এসএমএসিএস-০৭২৩’’। ছবিতে ছোট ছোট যেসব আলোক বিচ্ছুরণ অংশ দেখা যাচ্ছে, ধারণা করা হচ্ছে সেগুলো ১৩০০ কোটি বছর দূরুত্বে অবস্থিত। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কয়েক হাজার ছায়াপথ ওঠে এসেছে ছবিটিতে। এদের পাশেই দেখা যাচ্ছে অগণিত নক্ষত্র।
আরও পড়ুন# প্রতি সেকেন্ডে পৃথিবীর সমান ভর গিলা ব্ল্যাকহোল এর গল্প!
কী ভাবে তোলা সম্ভব হলো মহাবিশ্বের এত পুরাতন ছবি?
আমরা কোন বস্তু তখনই দেখতে পাই যখন বস্তুটি থেকে আলো আমাদের চোখে এসে পড়ে। এই সহজ থিয়োরিটি দিয়েই এই পুরাতন ছবি তোলার ঘটনাটি ব্যাখ্যা করা যায়। ছবির বস্তু গুলো আমাদের থেকে এত বেশি দূরত্বে অবস্থিত যে সেখান থেকে প্রতিফলিত আলো পৃথিবী পর্যন্ত এসে পৌঁছাতে ৪৬০-১৩০০ কোটি বছর সময় লেগে যায়। তাই জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ যখন এগুলোর ছবি তোলে তখন তাতে ৪৬০-১৩০০ কোটি বছর আগের অবস্থা ধরা দেয়। এই থিউরি দিয়ে পৃথিবীতে অতীতে কি ঘটেছে তাও দেখা সম্ভব। পৃথিবী থেকে ১০০০ কোটি বছর দূরত্বের কোনো স্থানে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপটি নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় তবে দেখা যাবে পৃথিবীতে এখনো ডাইনোসররা বিরাজ করছে।

জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ কী?
জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ (জেডব্লিউএসটি) হলো বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মহাকাশ দূরবীক্ষণ যন্ত্র। জেডব্লিউএসটি-কে নাসার হাবল টেলিস্কোপের উত্তরসূরী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এটি তৈরিতে খরচ হয় প্রায় এক হাজার কোটি ডলার। মার্কিন মহাকাশ সংস্থা(NASA), কানাডীয় মহাকাশ সংস্থা(CSA) ও ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার(ESA) যৌথ প্রচেষ্টায় এটি নির্মিত হয়। ছায়াপথের জন্ম, গতিপথ ও বিবর্তন এবং নক্ষত্র ও গ্রহসমূহের সৃষ্টি সংক্রান্ত গবেষণার কাজে এটি নির্মাণ করা হয়েছে। গতবছর ২৫শে ডিসেম্বর বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে দক্ষিণ উত্তর-পূর্ব আমেরিকার উপকূলে বিষুবরেখার কাছে ফরাসি গায়ানার কুরু শহরে অবস্থিত গায়ানা মহাকাশ কেন্দ্র থেকে টেলিস্কোপটি উৎক্ষেপণ করা হয়।
আরেক ধাপ এগিয়ে গেলো মহাকাশ বিজ্ঞান
হাবল টেলিস্কোপের মাধ্যমে এতদিন বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের অনেক রহস্য উন্মোচন করা সম্ভব হয়েছে৷ গত ত্রিশ বছর ধরে টেলিস্কোপটি বিভিন্ন কক্ষপথে ঘুরে আমাদেরকে নানা জানা-অজানা গ্রহ-নক্ষত্রের ছবি ও তথ্য দিয়েছে। এবার তার উত্তরসূরী জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ জ্যোতির্বিদ্যাকে আরেক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যেতে চলেছে৷ এর কল্যাণে ব্ল্যাক হোলের মতো রহস্যময় মহাজাগতিক বস্তু সম্পর্কেও বিস্তারিত জানা যাবে বলে আশা করছেন বিজ্ঞানীরা৷ নাসার প্রশাসক বিল নেলসন বলেছেন, আমরা মাত্র কয়েকদিনের ৪৬০ কোটি বছর পিছনে ফিরে যেতে পেরেছি। এটি কেবল শুরু। জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ আমাদেরকে আরও পেছনে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে।