
চারপাশে যেন অস্থির সময়। লাগামছাড়া পরিস্থিতির সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অপরাধ এবং সেটার ধরনও। এই যেমন রাসেল মোল্লার কথাই ধরুন, পেশায় একজন গাড়িচালক। তবে পেশা শুধুই ছদ্মবেশ। আসলে কাজ করেন ডাকাতদলের গোয়েন্দা হিসেবে। রাসেল ডাকাত সরদার সবুজের আদেশ অনুযায়ী বিভিন্ন ব্যাংক ও জনবহুল এলাকায় অবস্থান করে ব্যাংক থেকে মোটা অঙ্কের টাকা উত্তোলনকারী ব্যক্তিদের শনাক্ত করে পিছু নিতেন। পরে ভিকটিমের বর্ণনা ও অবস্থান সম্পর্কে তাদের সমন্বয়ক মিন্টুকে জানান।
এরপর মিন্টু ও রাসেলের দেওয়া তথ্যে ভিকটিমের কাছে উপস্থিত হয়ে নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে মাইক্রোবাসে উঠিয়ে নিয়ে সর্বস্ব লুটে নিতো চক্রটি। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে ভুয়া ডিবি পরিচয় দেওয়া ছয়জনকে গ্রেফতারের পর বেরিয়ে এসেছে এমনই সব চাঞ্চল্যকর তথ্য।
জানা যায়, ভুয়া ডিবি পরিচয় দেওয়া একটি চক্র যাত্রাবাড়ী এলাকার বিভিন্ন ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনকারী ব্যক্তি ও পথচারীদের মিথ্যা মামলা ও ভয়ভীতি দেখিয়ে ডাকাতি করার উদ্দেশ্যে রাজধানীর ধলপুর এলাকায় অবস্থান করছে- এমন সংবাদের ভিত্তিতে সোমবার (১১ অক্টোবর) রাতে র্যাব-১০ এর একটি দল ধলপুর কমিউনিটি সেন্টার এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারকৃত ভুয়া ডিবি পুলিশ সদস্যরা হলেন- সবুজ খান, মিন্টু পাটোয়ারী, রাসেল মোল্লা, ইকবাল মিয়া, মনিরুল ইসলাম ও খোকন মিয়া। তাদের কাছ থেকে এসময়ে ৩টি ভুয়া ডিবি পুলিশের জ্যাকেট, ২টি ওয়াকিটকি সেট, ১টি হাতকড়া, ১টি খেলনা পিস্তল, ১টি হ্যান্ড ফ্লাশ লাইট, ১টি পুলিশ মনোগ্রাম সংবলিত স্টিকার, ৭টি মোবাইল ফোন ও ১০ হাজার ৯৫০ টাকা জব্দ করা হয়।
আরও পড়ুন : চলন্ত লঞ্চ থেকে ধলেশ্বরী নদীতে মা-ছেলের ঝাঁপ!
কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১০ এর অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন এসব বিষয় নিশ্চিত করেন।
অতিরিক্ত ডিআইজি বলেন, গ্রেফতাররা একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্রের সদস্য। তারা নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, গুলিস্তান, মতিঝিল ও বাইতুল মোকারমসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাংক থেকে মোটা অঙ্কের টাকা উত্তোলনকারী ব্যক্তি ও বিভিন্ন প্রয়োজনে টাকা নিয়ে চলাচলকারী ব্যক্তিদের টাকা ও অন্যান্য মূল্যবান সম্পদ ডাকাতি করে আসছিলেন।
র্যাব-১০ এর অধিনায়ক ফরিদ উদ্দিন জানান, ভিকটিম কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাকে মাদককারবারি বা মামলার আসামিসহ বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে তাদের সঙ্গে থাকা মাইক্রোবাসে উঠিয়ে মার’ধর করতেন এবং দ্রুত স্থান ত্যাগ করতেন। পরে ভিকটিমের কাছে থাকা টাকা, মোবাইল ও স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান সব জিনিসপত্র নিয়ে ভিকটিমকে সুবিধাজনক স্থানে ফেলে পালিয়ে যেতেন।
ফরিদ উদ্দিন আরও বলেন, গ্রেফতার ইকবাল মিয়া ডাকাতির জন্য সবুজের অন্যতম সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন। তিনি প্রায় তিন বছর ধরে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতির সঙ্গে যুক্ত। নিজ বাড়ি মাদারীপুর জেলার শিবচর থেকে ঢাকায় এসে ডাকাতি করে আবার শিবচর চলে যেতেন। তার বিরুদ্ধে বগুড়ার শেরপুর থানায় ১টি দস্যুতার মামলা রয়েছে।
এছাড়াও গ্রেফতার মনিরুল ইসলাম পেশায় একজন দর্জি। গত এক বছর ধরে তিনি এই পেশা ছেড়ে ডাকাতদলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে মিন্টুর অন্যতম সহযোগী হিসেবে কাজ করে আসছিলেন। এছাড়া তার বিরুদ্ধে বগুড়া শেরপুর থানায় নারী ও শিশু নির্যা’তন দমন আইনে ধ’র্ষ’ণ মামলা রয়েছে বলেও জানান র্যাব-১০ এর অধিনায়ক।