ব্যবসা-বাণিজ্যসংবাদ

বিদ্যুতের দাম বাড়ছে আরও ১৫-২০ শতাংশ!

দাম বৃদ্ধির উৎসবে বাদ পড়েনি কিছুই। বরং কয় দফা অব্দি বাড়বে সেটাই এখন নতুন প্রশ্ন। জানা গেছে, পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ১৫-২০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। কমিশনের প্রস্তাব ইতোমধ্যে বিদ্যুৎ বিভাগেও পাঠানো হয়েছে। সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে অনুমোদন এলে যেকোনো দিন বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ঘোষণা দেওয়া হতে পারে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণা এমন সময় আসতে যাচ্ছে, যখন সাধারণ মানুষ নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্যের কারণে প্রাত্যহিক ব্যয় নির্বাহে হিমশিম খাচ্ছে। নতুন করে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলে তার প্রভাব পড়বে ব্যয়ের অন্য খাতগুলোতেও। ফলে আরো এক দফা বাড়তি ব্যয়ের চাপে পড়বে মানুষ।

বিইআরসির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম গোপন রাখার শর্তে জানান, কমিশন ১৫-২০ শতাংশের মধ্যে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব চূড়ান্ত করে রেখেছে। এরই মধ্যে তা বিদ্যুৎ বিভাগে জমাও দেয়া হয়েছে। সরকার চাইলে এটি বাড়াতে কিংবা কমাতে পারে।

উল্লেখ্য, এর আগে ১৮ মে বিদ্যুতের পাইকারি (বাল্ক) মূল্যহার বৃদ্ধি নিয়ে বিইআরসির সর্বশেষ গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এরপর তিন মাসের বেশি সময় পেরোলেও এ-সংক্রান্ত আর কোনো ঘোষণা দেয়া হয়নি। তবে আইন অনুযায়ী গণশুনানি সম্পন্নের ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে মূল্যসংক্রান্ত বিষয়ে ঘোষণা দেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আইনি এ বাধ্যবাধকতার কারণেই বিদ্যুতের মূল্য পর্যালোচনায় সংস্থাটির হাতে আর খুব বেশি সময় নেই। অর্থাৎ দাম বৃদ্ধির ঘোষণাও খুব নিকটেই।

কমিশন সূত্রে জানা যায়, ১৮ মে গণশুনানির পর ৯০ কার্যদিবসের সময়সীমা শেষ হবে আগামী ১৪ অক্টোবর। এ সময়ের মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে সাড়া পেলে দাম বৃদ্ধির ঘোষণা দেয়া হবে।

আরও পড়ুন : সড়কে লাঠিসোঁটা নিয়ে এসে দ্রব্যমূল্য কমানো যাবে না: পরিকল্পনামন্ত্রী

বর্তমানে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ৫ টাকা ১৭ পয়সা। তবে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) ইউনিটপ্রতি বিদ্যুতের দাম ৬৬ শতাংশ বাড়িয়ে ৮ টাকা ৫৮ পয়সা করার আবেদন করেছে। গ্যাসের আগের দর ইউনিটপ্রতি ৪ টাকা ৪৫ পয়সা বিবেচনায় বিপিডিবি বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির এ প্রস্তাব করা হয়। যদিও ইউনিটপ্রতি গ্যাসের দামও ৫৭ পয়সা বাড়ানো হয়েছে। বিপিডিবির প্রস্তাবের বিপরীতে বিইআরসির টেকনিক্যাল কমিটি প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের মূল্য ভর্তুকি ছাড়া ৮ টাকা ১৬ পয়সা নির্ধারণের সুপারিশ করে। এর আগে কখনো এত উচ্চ হারে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দেয়ার নজির নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সর্বশেষ ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিদ্যুতের পাইকারি দর ইউনিটপ্রতি ৫ টাকা ১৭ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছিল।

বিদ্যুতের এই নতুন মূল্যহার বিষয়ে জানতে চাইলে বিইআরসি সদস্য (বিদ্যুৎ) মোহাম্মদ বজলুর রহমান বলেন, এটি নিয়ে আমরা এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে কাজ শেষ করেছি। ভর্তুকির বিষয়টিও সমাধান হয়েছে। যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে নতুন মূল্যহার ঘোষণার বিষয়টির জন্য সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে সাড়া পাওয়ার অপেক্ষা। বিদ্যুতের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখার ওপরই প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত এক যুগে দেশে বিদ্যুতের দাম নয় দফায় বাড়ানো হয়েছে। এ সময়ে পাইকারি পর্যায়ে ১১৮ শতাংশ ও গ্রাহক পর্যায়ে ৯০ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়েছে। সর্বশেষ ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে দাম বাড়ানো হয়। ওই সময় সরকারি ভর্তুকি ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা ধরে পাইকারি পর্যায়ে ৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়। একই সময়ে খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়ানো হয় ৫ দশমিক ৩ শতাংশ।

জানা গেছে, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে মূলত বিইআরসির কাছে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দেয় বিপিডিবি। আমদানীকৃত স্পট এলএনজি আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বাড়ানো হয়েছে গ্যাসের দাম। গত জুন থেকে দেশে স্পট এলএনজি আমদানি বন্ধ রয়েছে। যদিও বিশ্ববাজারে সব ধরনের জ্বালানি পণ্যের দামই এখন নিম্নমুখী। জ্বালানি তেল ও এলএনজির দাম গত দেড় মাসে যথাক্রমে ২৫ ও ৩৫ ডলার পর্যন্ত কমেছে।

Back to top button

Opps, You are using ads blocker!

প্রিয় পাঠক, আপনি অ্যাড ব্লকার ব্যবহার করছেন, যার ফলে আমরা রেভেনিউ হারাচ্ছি, দয়া করে অ্যাড ব্লকারটি বন্ধ করুন।