আন্তর্জাতিকসন্দেশ

‘হিজাব বিরোধী’ বিক্ষোভে উত্তাল ইরান, নি’হত ৭৬!

ইরানে হিজাবকাণ্ডে মাহসা আমিনির মৃ’ত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশটির বিভিন্ন স্থানে ‘হিজাব বিরোধী’ বিক্ষোভ অব্যাহত আছে। বিক্ষোভ দমনে চালানো নিরাপত্তাবাহিনীর ব্যাপক অভিযানে অন্তত ৭৬ জন ইরানি নাগরিক নি’হত হয়েছেন। গতকাল সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) নরওয়েভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন ইরান হিউম্যান রাইটস (আইএইচআর) এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

গণমাধ্যমের তথ্য মতে, এর আগেও মানবাধিকার সংগঠনটি মৃ’তের সংখ্যা প্রকাশ করেছিল। সেখানে ৫৭ জন নি’হত হওয়ার কথা বলা হয়েছিল। পরে সোমবার সেসব তথ্য হালনাগাদ করেছে তারা। সেখানে মৃ’তের সংখ্যা ৭৬ উল্লেখ করা হয়েছে। তবে ইরান সরকারের পক্ষ থেকে ৪১ জন নি’হত হওয়ার কথা বলা হচ্ছে। যা প্রকৃতপক্ষে অনেক বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আইএইচআরের পরিচালক মাহমুদ আমিরি মোগাদ্দাম বলেন, ‘আমরা বিক্ষোভকারীদের হ’ত্যা ও নির্যাতন বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি ঐক্যবদ্ধ, সিদ্ধান্তমূলক ও বাস্তব পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’

তিনি আরও বলেন, আমাদের গ্রুপের হাতে আসা ভিডিয়ো ও ডেথ সার্টিফিকেট থেকে আমরা জেনেছি বিক্ষোভকারীদের ওপর সরাসরি গুলি চালানো হয়েছে। পাখির মতো মানুষ মারা হচ্ছে।

আরও পড়ুন# প্রেমের টানে বাংলাদেশে চলে আসা কিশোরীকে ভারতে ফেরত পাঠালেন পুলিশ!

গত ১৫ সেপ্টেম্বর ইরানের নৈতিক পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর তেহরানে মা’রা যান ২২ বছর বয়সী তরুণী মাহসা আমিনি। ইরানি পুলিশের দাবি, গ্রেফতার হওয়ার পর মাহসা আমিনি ‘হৃদ্‌রোগে’ আক্রান্ত হয়ে কোমায় চলে যান এবং পরে গত শুক্রবার (১৬ সেপ্টেম্বর) মা’রা যান। তবে মাহসা আমিনির পরিবার বলেছে, তার আগে থেকে হৃদ্‌রোগ ছিল না। মাহসার মরদেহ পরীক্ষা করার সুযোগ দেয়া হয়নি বলেও অভিযোগ পরিবারের।

প্রতিবাদ বিক্ষোভে ইরানের নিরাপত্তা বাহিনীর সহিংস প্রতিক্রিয়ার কড়া সমালোচনা করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন। মাহসা আমিনির মৃ’ত্যুর ঘটনায় সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানিয়ে সংস্থাটি বলছে, তার মর্মান্তিক মৃ’ত্যু, নির্যাতনের অভিযোগ এবং পরবর্তী সময়ে কী ধরনের চিকিৎসা দেয়া হয়েছে তার সঠিক ও নিরপেক্ষ তদন্ত হতে হবে। মাহসার পরিবার যে অভিযোগ এনেছে সেটাও গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে।

এর আগে ২০১৭ সালে প্রায় ৫০ জনের বেশি নারী জনসম্মুখে হিজাব খুলে প্রতিবাদ জানান। তখন কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এবারের আন্দোলনে অনলাইন ও সরাসরি দুই ধরনের অংশগ্রহণই চোখে পড়ার মতো। তাই রাস্তায় বিক্ষোভ মোকাবিলায় পুলিশ মোতায়েনের পাশাপাশি অনলাইনেও ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। আর বিষয়টিকে নাম দেওয়া হয়েছে সরকারের ‘অনলাইন সন্ত্রাস’ হিসেবে।

১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামিক বিপ্লব হওয়ার পর থেকে নারীদের জন্য হিজাব পরা বাধ্যতামূলক করা হয়। দেশটির নৈতিকতা পুলিশ এই ড্রেস কোড কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করে। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে ড্রেস কোডের নিয়ম বাস্তবায়নে বিভিন্ন মানুষ বিশেষত তরুণীদের সঙ্গে নৈতিকতা পুলিশের বিভিন্ন কর্মকর্তাকে ঘিরে কড়া প্রতিক্রিয়া তৈরি হচ্ছে। সামাজিকমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন ভিডিয়োতে দেখা যায়, পুলিশ সদস্যরা অনেক সময় জোর করে নারীদের পুলিশের গাড়িতে তোলে।

এদিকে মাহসা আমিনির মৃ’ত্যুর প্রতিবাদে কানাডা, জার্মানি, ফ্রান্স ও তুরস্কসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভ হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা ইরানের আন্দোলনকারীদের প্রতি সংহতি জানিয়েছেন। ইরান সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছেন বিক্ষোভকারীরা। এ সময় অনেককে মাথার চুল কেটে প্রতিবাদ জানা্তেও দেখা গেছে।

Back to top button

Opps, You are using ads blocker!

প্রিয় পাঠক, আপনি অ্যাড ব্লকার ব্যবহার করছেন, যার ফলে আমরা রেভেনিউ হারাচ্ছি, দয়া করে অ্যাড ব্লকারটি বন্ধ করুন।