ইতিহাসফিচারবিজ্ঞানবিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

৩১ হাজার বছর আগেও অপারেশন হয়েছিল?

সম্প্রতি প্রত্নতত্ত্ববিদরা বিশ্বের প্রাচীনতম অঙ্গচ্ছেদ অপারেশন বা অস্ত্রোপচারের সন্ধান পেলেন। এক দল প্রত্নতত্ত্ববিদদের দাবি, ইন্দোনেশিয়ায় পাওয়া গিয়েছে এক ব্যক্তির কঙ্কাল, যার দেহে প্রায় ৩১ হাজার বছর পূর্বে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে অঙ্গচ্ছেদ করা হয়েছিল। মূলত সেই অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে প্রাপ্ত কঙ্কালের মালিকের বাঁ পায়ের পাতা বাদ দেওয়া হয়েছিল।

সংবাদ মাধ্যম হতে জানা যায়, ওই কঙ্কালটি ইন্দোনেশিয়ার বোর্নিয়োর একটি প্রাচীন গুহাতে পাওয়া যায় এবং কঙ্কালটি একজন প্রাপ্ত বয়স্ক যুবকের বলে অনুমান করছেন প্রত্নতত্ত্ববিদরা। এছাড়াও সংবাদ সংস্থা বলছে, প্রাপ্ত কঙ্কালের মালিক যখন ছোটো ছিলেন, তখনই হয়তো তার বাঁ পায়ে এই অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল এবং ব্যক্তিটি কাটা পা নিয়েই বেঁচে ছিলেন কয়েক বছর।

⏩ আরও পড়ুন: ডিটক্স ড্রিংকস: গরমে আপনাকে হাইড্রেটেড ও ফিট রাখবে!

বিশেষজ্ঞদের ভাষ্যমতে, তখনকার চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নত না হলে এমন জটিল অস্ত্রোপচার বা অপারেশন সম্ভব না। আর প্রাচীন ইন্দোনেশিয়ার মানুষ ৩১ হাজার বছর পূর্বেই এমন উন্নত চিকিৎসা সেবা পেয়েছিল। যা রীতিমতো ইতিহাসবিদদের চমকে দেয়।

আর এটাই হলো প্রাগৈতিহাসিক অস্ত্রোপচারের প্রথম প্রমাণ। এই কঙ্কাল হতে প্রমাণ মেলে, চিকিৎসা ব্যবস্থায় প্রাচীন মানুষ যে কতটা এগিয়ে ছিল! এই নতুন আবিষ্কারটি প্রাগৈতিহাসিক যুগ সম্পর্কে ইতিহাসবিদদের ধারণাই পাল্টে দিয়েছে।

আন্তর্জাতিক জার্নাল ‘নেচার’ এ ইন্দোনেশিয়ায় পাওয়া এই কঙ্কালের বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, আজ হতে ১০ হাজার বছর পূর্বে গড়ে ওঠেছিল কৃষিকেন্দ্রিক সমাজ, আর মানুষ সেখানে রোগ-ব্যাধি সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠছিলেন এবং সেই প্রেক্ষিতেই পরিবর্তন এসেছিল চিকিৎসা ব্যবস্থায়।

এছাড়াও ইন্দোনেশিয়ার বোর্নিয়োর ঘন জঙ্গলের ওই গুহা থেকে প্রত্নতাত্ত্বিকদের পাওয়া কঙ্কালটি মাথা থেকে পা অবধি একেবারে অক্ষত অবস্থায় ছিল। কেবল মাত্র তার বাঁ পায়ের পাতা ছিল না। আর ওই পায়ের পাতা বাদ হওয়া; কবরস্থ করার সময় বা দীর্ঘ দিনের অবহেলার জন্য হয়নি। বরং তা কেটে বাদ দেওয়া হয়েছে, যাকে অস্ত্রোপচার বা অপারেশন বলে।

⏩ আরও পড়ুন: পোস্ট কোভিড সিনড্রোম কী এবং এটি কীভাবে সামলাবেন?

ইন্দোনেশিয়ার ওই গুহার নাম লিয়াং টেবো। লিয়াং টেবো গুহায় প্রাপ্ত কঙ্কালটির পায়ের কাটা অংশে হদিস মেলেনি কোনো ঘা বা সংক্রমণের। ফলে, এমন সন্দেহও প্রায় বাতিলের খাতায় যে, পা কামড়ে কেটে নিয়েছে কুমীর জাতীয় কোনো প্রাণী। বরং কঙ্কালটিকে খুঁটিয়ে দেখে গবেষকরা বলেছেন, এটি পরিকল্পিত পদ্ধতিতে অঙ্গচ্ছেদ করা হয়েছে। তবে ঠিক কোন যন্ত্র এই অস্ত্রোপচারে ব্যবহার হয়েছিল, কীভাবে সংক্রমণ প্রতিরোধ করা হয়েছিল! সে সম্পর্কে এখনো তারা কিছু জানাননি। তবে মনে করা হচ্ছে, পায়ের ওই অংশ কাটা হয়েছিল কোনো ধারালো পাথরের যন্ত্র দিয়ে এবং সংক্রমণ আটকাতে ব্যবহার হয়েছিল উচ্চ আয়ুর্বেদিক গুণসম্পন্ন কোনো উদ্ভিদের।

এই বিষয়ে ‘নেচার’-এর প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ‘ইন্দোনেশিয়ার এই আবিষ্কার প্রমাণ করে, প্রাগৈতিহাসিক যুগে এশিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে চিকিৎসা পদ্ধতি অত্যন্ত উন্নত ছিল। প্রাচীন মানুষ অস্ত্রোপচারে সুদক্ষ ছিলেন।’

উল্লেখ্য, ফ্রান্সে এর আগে প্রাচীনতম অঙ্গচ্ছেদ অস্ত্রোপচার বা অপারেশন এর নিদর্শন ছিল। যা মূলত সাত হাজার বছর আগে সেখানকার এক কৃষকের হাত কেটে বাদ দেওয়া হয়েছিল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে। তাই বলা যায়, এটিই প্রথম কোনো নির্দশন, যা ৩১ হাজার বছর পূর্বের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে ইঙ্গিত করে!

Back to top button

Opps, You are using ads blocker!

প্রিয় পাঠক, আপনি অ্যাড ব্লকার ব্যবহার করছেন, যার ফলে আমরা রেভেনিউ হারাচ্ছি, দয়া করে অ্যাড ব্লকারটি বন্ধ করুন।