রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় গত ৫০ বছর ধরে মো. জব্বর নামের এক ব্যক্তি চুরি করে আসছিলেন। তিনি প্রথম ২৭ বছর ছোট-খাটো চুরি করলেও গত ২৩ বছর বাসা-বাড়ির দরজা-জানালা ভেঙে বড়ো চুরি করছিলেন।
গত ১৭ আগস্ট রাজধানী ঢাকার নিকুঞ্জ এলাকার এক চিকিৎসকের বাসায় চুরি করে। সেখান থেকে ৪২ ভরি স্বর্ণ ও ৪ হাজার ইউএস ডলার নিয়ে যান। আর ওই ঘটনায় খিলক্ষেত থানায় মামলা হলে তদন্তে নামে ডিবি পুলিশ।
আর এরই ধারাবাহিকতায় গত শনিবার (৮ অক্টোবর) মিরপুরের পল্লবী এলাকার একটি বাসায় চুরি করার সময় হাতেনাতে ধরা পড়ে এই চোর চক্রের চার সদস্য ও দুইজন জুয়েলারি দোকানের মালিক। এরপর তাদেরকে আটক করে ডিবি গুলশান বিভাগ।
আটককৃত ব্যক্তিরা হলেন- চোর চক্রের সর্দার মো. জব্বার মোল্লা, মো. জামাল সিকদার, মো. আবুল, আজিম উদ্দিন, টঙ্গী এলাকার জুয়েলারি দোকান মালিক মো. আনোয়ার হোসেন ও তাঁতীবাজার এলাকার জুয়েলারি দোকান মালিক মো. আব্দুল ওহাব।
এছাড়াও তাদের কাছ থেকে প্রায় ৯ ভরি স্বর্ণালংকার, ৮২ ভরি রূপা, প্রায় ১৭ লাখ টাকা, দরজা ভাঙার যন্ত্রপাতি ও মোবাইল উদ্ধার করা হয়।
আজ রবিবার দুপুরে এসব তথ্য জানান ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির ডিবি পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। তিনি বলেন— ‘গত ১৭ আগস্ট খিলক্ষেত থানার নিকুঞ্জ-২ এর ১৫ নম্বর রোডে চিকিৎসক দম্পতির বাসায় দিনের বেলায় চুরি হয়। ওই বাসায় দারোয়ান ও সিসিটিভি না থাকার সুযোগে জব্বার ও তার চক্রের সদস্যরা বাসায় প্রবেশ করে তৃতীয় তলার দরজা ভেঙে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে।
এরপরে তারা আলমারির তালা ভেঙে ৪২ ভরি স্বর্ণ ও চার হাজার ইউএস ডলার চুরি করে। ওই ঘটনায় ডিএমপির খিলক্ষেত থানায় মামলা হয়। গত শনিবার চোর চক্রের চার সদস্যকে আটক করে ডিবি। আর তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরে দুই দোকানিকেও আটক করা হয়।’
তিনি আরও বলেন, ওই চোর চক্রের জব্বারসহ বাকি সদস্যরা ৮-১০ বছর বয়সে ঢাকার কারওয়ান বাজার, মিরপুরসহ সংসদ ভবনের আশপাশের এলাকায় টোকাইগিরি করতো। ওই সময় তারা বাসা-বাড়ির ছাদে রোদে দেওয়া জামাকাপড়, জুতা, রড ইত্যাদি চুরি করে বিক্রি করতো। আর এসব চোরাই মাল বিক্রি করতে গিয়েই তাদের একে অন্যের সাথে পরিচিত হয় এবং তারা একত্রে চুরি করা শুরু করে। তারা বিগত ২০-২৫ বছর ধরে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় দরজা ভেঙে বাসায় ঢুকে চুরি করে।
ডিবির হারুন অর রশীদ আরো বলেন, তারা চুরির আগের দিন কথা বলে ঠিক করে কোথায় চুরি করবে। এরপর সে অনুসারে পরদিন সকাল বেলা একটি নির্দিষ্ট এলাকায় হাজির হয়। এরপর তারা একত্রে চা পান করে এবং তারা হাঁটতে থাকে। হাঁটার সময় খেয়াল করে কোন বাসায় দারোয়ান ও সিসি ক্যামেরা নেই।
এরপর বাসা টার্গেটের পর দুজন বাসার ভেতরে প্রবেশ করে, বাকি ২-৩ জন বাইরে পাহারায় থাকে। তারা ১০ মিনিটের মধ্যে চুরি শেষ করে মালামাল ভাগ করে নিয়ে যে যার যার এলাকায় চলে যায়। পরদিন আবার অন্য কোথাও চুরির পরিকল্পনা করে। তারা শুধুমাত্র মূল্যবানসামগ্রী যেমন- অলঙ্কার ও বিদেশি মুদ্রা ও টাকা চুরি করে।
এছাড়াও ডিবি পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, চুরি করা স্বর্ণালঙ্কার ঢাকার তাঁতীবাজারের দুটি দোকান এবং টঙ্গী বাজারের একটি স্বর্ণের দোকানে বিক্রি করে টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয় তারা।
জব্বারকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানান, তিনি প্রায় ২০০টি বাড়িতে এখন অবধি চুরি করেছেন। এ দীর্ঘ সময় বাসা-বাড়ি থেকে চুরি করা প্রায় ৫০০ ভরি স্বর্ণ তিনি তাঁতীবাজার এলাকায় বিক্রি করেছেন। আরো প্রায় ২০০ ভরি স্বর্ণ তিনি টঙ্গীর বিভিন্ন জুয়েলারি দোকানে বিক্রি করেছেন।
উল্লেখ্য, জব্বার মোল্লা চারটি বিয়ে করেছেন। চুরির টাকায় তাদের সুন্দরভাবে ভরণ-পোষণ করেন। চুরির টাকা দিয়ে নারায়ণগঞ্জ-কেরানীগঞ্জ-গাজীপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় জমিও কিনেছেন তিনি।