ওষুধ ছাড়াই গ্যাস্ট্রিক দূর হবে যে ঘরোয়া ৫ উপায়ে।
অনুলিপি ডেস্কঃ আমাদের মাঝে কম বেশি সবারই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হয়ে থাকে। গ্যাস্ট্রিক বা এসিডিটি নাই এমন লোক খুব কমই পাওয়া যাবে। আপনি একটু খোজ নিয়ে দেখুন, জানতে পারলে আপনি অবাক হবেন। সারাদেশে কি পরিমাণ গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ বিক্রি হয়? অন্য সব রোগ মিলেও এ পরিমাণ হয় না। পৃথিবীজুড়ে কোন রোগের ওষুধ সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় জানেন? গ্যাস্ট্রিক। আমরা সবাই কমবেশি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভুগি। অনিয়মিত জীবনযাপন, শরীরের প্রকৃতি বা ঋতু না বুঝে খাওয়াদাওয়া, ঘুমের সময় নির্দিষ্ট না থাকা, মানসিক চাপে ভোগা, নানা কারণে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আমাদের শরীরে ক্ষতিকারক বায়ু তৈরি হয়, পরে যা বিভিন্ন রোগের জন্ম দেয়। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার প্রতিকারকে আমরা দুইভাবে বিবেচনা করতে পারি।
গ্যাস্ট্রিকের লক্ষণগুলো হল পেটে জ্বালা-পোড়া করা, বদহজম, বমি বমি ভাব, বমি করা, পেটে ক্ষুধা, ক্ষুধা হ্রাস পাওয়া, খাওয়ার পর উপরের পেট বেশি ভরে গিয়েছে অনুভূতি হওয়া ইত্যাদি। খাবার সময়মতো খাওয়া হয়না, বাইরের ভাজা-পোড়া বেশি খাওয়া, জাঙ্কফুড খাওয়া, পরিমাণ মতো পানি না খাওয়া ইত্যাদি কারণে গ্যাস্ট্রিক এর সমস্যা দেখা দেয়। আর এর যন্ত্রণা কতখানি অস্বস্তিকর ভুক্তভোগী মাত্রই বিষয়টি অনুধাবন করতে পারেন। একটু ভাজাপোড়া অথবা দাওয়াত-পার্টিতে মশলাযু্ক্ত খাবার খেলেই শুরু হয়ে যায় গ্যাস্ট্রিকের অস্বস্তিকর সমস্যা। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে সবাই হাত বাড়ান ওষুধের দিকে। অথচ ওষুধের উপর নির্ভরশীল না হয়ে খাবারের দিকে মনযোগী হয়ে কিছু নিয়ম মেনে চললেই গ্যাস্ট্রিক আপনার ধারে-কাছেও ঘেঁষতে পারবে না। গ্যাস্ট্রিকের হাত থেকে নিস্তার পেতে জেনে রাখুন কিছু ঘরোয়া উপায়-
১। আদা> আদাতে আছে এমন কিছু উপাদান যা গ্যাস্ট্রিক সমস্যায় জ্বালাপোড়া হলে তা রোধ করতে সাহায্য করে। আদা খেলে বমি সমস্যা, বদ হজম, গ্যাস হওয়া কমে যায়।
আদার রসের সাথে মধু মিশিয়েও খেতে পারেন। দুপুরে ও রাতে খাওয়ার আগে এটি খেয়ে নিন।
আদা কুচি করে পানি দিয়ে ফুটিয়ে নিন। ১০ মিনিট ডেকে রাখুন, এরপর সামান্য মধু মিশিয়ে চায়ের মতো বানিয়ে নিন। এই পানীয়টি দিনে ২/৩ বার পান করুন উপকারিতা পেতে।
আপনি চাইলে আস্ত আদা ধুয়ে কেটে চিবিয়েও খেতে পারেন।
২। ডাবের পানি ও সাধারন পানি> ডাবের পানি খেলে হজম ক্ষমতা বাড়ে এবং সব খাবার সহজেই হজম হয়ে যায়। এছাড়া গ্যাসের সমস্যা থেকেও মুক্তি পাওয়া যায় নিয়মিত ডাবের পানি খেলে। তাই সম্ভব হলে প্রতিদিন ডাবের পানি খাওয়ার অভ্যাস করুন। তাহলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে। আর পানি পান করা, গ্যাসের সমস্যা সমাধানের অনেক বেশি পরিচিত একটি সমাধান হচ্ছে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা। আর এটি করলে তা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কমানোর পাশাপাশি আরও অনেক রোগ থেকে মুক্তি দিতেও সহায়তা করবে এটি। এ জন্য নিয়মিত প্রতিদিন অন্তত ছয় থেকে আট গ্লাস পানি পান করতে হবে।
৩। গ্যাস্টিক নির্মূলে পেঁপে> পেঁপে মূলত একটি ফল । যা মানুষ কাঁচা অবস্থায় সবজি হিসেবে এবং পাকা অবস্থায় ফল হিসেবে খেয়ে থাকেন । পেঁপের অনেক গুণাগুণ রয়েছে । পেঁপের ভেতর রয়েছে পাপায়া নামক এঞ্জাইম যা হজম শক্তি বাড়ায়। নিয়মিত পেঁপে খাওয়ার অভ্যাস করলে গ্যাসের সমস্যা কমে যায় । এছাড়া পেঁপের রয়েছে আরও কার্যকরী গুনাগুন যেমন রক্ত কাশে, কৃমিতে ,একজিমায়, দাদ ও মূত্রনালীর ক্ষতে বিশেষ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে ।
৪। ব্যায়াম করা> ব্যায়াম করলে শরীর ভালো থাকে এটি আমরা সবাই জানি। কিন্তু এটি আপনার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সমাধানেও অনেক কার্যকরী তা হয়তো অনেকেই জানেন না। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা এড়াতে খাওয়ার পর হাঁটার অভ্যাস করুন। এ ছাড়া দড়ি লাফ, দৌড় বা হাঁটা গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা কমাতেও অনেক কার্যকরী।
আরো পড়ুন: অল্প বয়সে বিয়ে করাই ভাল, রয়েছে সুবিধা!
৫। কলা ও কমলা > কলা ও কমলা পাকস্থলীর অতিরিক্ত সোডিয়াম দূর করতে সহায়তা করে। এতে করে গ্যাসের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এ ছাড়াও কলার সলুবল ফাইবারের কারণে কলা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ক্ষমতা রাখে। সারা দিনে অন্তত দুটি কলা খান। পেট পরিষ্কার রাখতে কলার জুড়ি মেলা ভার।
এছাড়া ওজন কমানো, খাবার গ্রহণের সময়ের সঠিক ব্যবধান রাখা, খালি পেটে চা না খাওয়া ইত্যাদি বিষয়গুলো নিজের আয়ত্বে রাখতে পারলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে চিরতরে মুক্তি পেতে পারেন।
গ্যাসের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া খুব বেশি কঠিন কিছু নয়। শুধু একটু নজর রাখতে হবে নিজের খাওয়া-দাওয়ার প্রতি। উল্লেখিত খাবারগুলোর সঙ্গে আঁশ জাতীয় খাবার বেশি বেশি করে নিয়মিত খাওয়া শুরু করুন তাহলে দেখবেন আপনাকে আর গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভুগতে হবে না। কিনতে হবে না ওষুধ এবং সাশ্রয় হবে আপনার উপার্জিত অর্থ।