কিয়ামতের আলামত? নিম্নউক্ত আলামত গুলো দেখলে বুঝতে হবে কিয়ামতের অতি সন্নিকট। কেয়ামতের লক্ষণের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, তীব্র ঠান্ডা ও দাবদাহসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যাপক হারে বেড়ে যাবে। এতে করে মাঠঘাট যেমন ফসলহীন হয়ে পড়বে; প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ফসলের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আবার মরু অঞ্চলে ঝড়-বৃষ্টির কারণে ঘটবে এর উল্টোটা। অর্থাৎ আরবের মরু অঞ্চলের উচু এলাকায় বা পাহাড়ে দেখা যাবে সবুজ ঘাসের আবরণ।
কিয়ামতের কয়েকটি লক্ষণ:
১. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুয়ত লাভ।
২. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মৃত্যু।
৩. বায়তুল মোকাদ্দাস বিজয়।
৪. ফিলিস্তিনের “আমওয়াস” নামক স্থানে প্লেগ রোগ দেখা দেয়া।
৫. প্রচুর ধন-সম্পদ হওয়া এবং যাকাত খাওয়ার লোক না-থাকা।
৬. নানারকম গোলযোগ (ফিতনা) সৃষ্টি হওয়া। যেমন ইসলামের শুরুর দিকে উসমান (রাঃ) এর হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়া, জঙ্গে জামাল ও সিফফিন এর যুদ্ধ, খারেজিদের আবির্ভাব, হাররার যুদ্ধ, কুরআন আল্লাহর একটি সৃষ্টি এই মতবাদের বহিঃপ্রকাশ ইত্যাদি।
৭. নবুয়তের মিথ্যা দাবিদারদের আত্মপ্রকাশ। যেমন- মুসাইলামাতুল কাযযাব ও আসওয়াদ আনসি।
৮. হেজাযে আগুন বের হওয়া। সপ্তম শতাব্দীর মাঝামাঝি ৬৫৪হিঃ তে এই আগুন প্রকাশিত হয়েছে। এটা ছিল মহাঅগ্নি। তৎকালীন ও তৎপরবর্তী আলেমগণ এই আগুনের বিবরণ দিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। যেমন ইমাম নববী লিখেছেন- “আমাদের জামানায় ৬৫৪হিজরিতে মদিনাতে আগুন বেরিয়েছে। মদিনার পূর্ব পার্শ্বস্থ কংকরময় এলাকাতে প্রকাশিত হওয়া এই আগুন ছিল এক মহাঅগ্নি। সকল সিরিয়াবাসী ও অন্য সকল শহরের মানুষ তাওয়াতুর সংবাদের ভিত্তিতে তা অবহিত হয়েছে। মদিনাবাসীদের মধ্যে এক ব্যক্তি আমাকে এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, যিনি নিজে সে আগুন প্রত্যক্ষ করেছেন।”
৯. আমানতদারিতা না-থাকা। আমানতদারিতা ক্ষুণ্ণহওয়ার একটা উদাহরণ হচ্ছে- যে ব্যক্তি যে দায়িত্ব পালনের যোগ্য নয় তাকে সে দায়িত্ব প্রদান করা।
১০. ইলম উঠিয়ে নেয়া ও অজ্ঞতা বিস্তার লাভ করা। ইলম উঠিয়ে নেয়া হবে আলেমদের মৃত্যু হওয়ার মাধ্যমে। সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম এরসপক্ষে হাদিস এসেছে।
১১. ব্যভিচার বেড়ে যাওয়া।
১২. সুদ ছড়িয়ে পড়া।
১৩. বাদ্য যন্ত্র ব্যাপকতা পাওয়া।
১৪. মদ্যপান বেড়ে যাওয়া।
১৫. বকরির রাখালেরা সুউচ্চ অট্টালিকা নির্মাণ করা।
১৬. কৃতদাসী কর্তৃক স্বীয় মনিবকে প্রসব করা। এই মর্মে সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিমেহাদিস সাব্যস্ত হয়েছে। এই হাদিসের অর্থের ব্যাপারে আলেমগণের একাধিক অভিমত পাওয়া যায়। ইবনে হাজার যে অর্থটি নির্বাচন করেছেন সেটি হচ্ছে- সন্তানদের মাঝে পিতামাতার অবাধ্যতা ব্যাপকভাবে দেখা দেয়া। সন্তান তার মায়ের সাথে এমন অবমাননাকর ও অসম্মানজনক আচরণ করাযাএকজন মনিব তার দাসীর সাথে করে থাকে।
১৭. মানুষ হত্যা বেড়ে যাওয়া।
১৮. অধিকহারে ভূমিকম্প হওয়া।
১৯. মানুষের আকৃতি রূপান্তর, ভূমি ধ্বস ও আকাশ থেকে পাথর পড়া।
২০. কাপড় পরিহিতা সত্ত্বেও উলঙ্গ এমন নারীদের বহিঃপ্রকাশ ঘটা।
২১. মুমিনের স্বপ্ন সত্য হওয়া।
২২. মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া বেড়ে যাওয়া; সত্য সাক্ষ্য লোপ পাওয়া।
২৩. নারীদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া।
২৪. আরব ভূখণ্ড আগের মত তৃণভূমি ও নদনদীতে ভরে যাওয়া।
২৫. একটি স্বর্ণের পাহাড় থেকে ফোরাত (ইউফ্রেটিস) নদীর উৎস আবিষ্কৃত হওয়া।
২৬. হিংস্র জীবজন্তু ও জড় পদার্থ মানুষের সাথে কথা বলা।
২৭. রোমানদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া এবং মুসলমানদের সাথে তাদের যুদ্ধ হওয়া।
২৮. কনস্টান্টিনোপল বিজয় হওয়া।
২৯.নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ ‘‘কিয়ামতের অন্যতম আলামত হচ্ছে হঠাৎ করে মৃত্যুবরণকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে’’।
বর্তমানে এরকম ঘটনা প্রায়ই শুনা যায়। দেখা যায় একজন মানুষ সম্পূর্ণ সুস্থ। হঠাৎ শুনা যায় সে মৃত্যু বরণ করেছে। সুতরাং মানুষের উচিৎ মৃত্যু আসার পূর্বেই আল্লাহর কাছে তাওবা করা এবং সকল প্রকার পাপ কাজ থেকে বিরত থাকা।
৩০.কিয়ামতের অন্যতম আলামত হচ্ছে মানুষের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য ছড়িয়ে পড়বে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
بَيْنَ يَدَيِ السَّاعَةِ تَسْلِيمُ الْخَاصَّةِ وَتَفْشُو التِّجَارَةُ حَتَّى تُعِينَ الْمَرْأَةُ زَوْجَهَا عَلَى التِّجَارَةِ
‘‘কিয়ামতের পূর্বে কেবল পরিচিত লোকদেরকেই সালাম দেয়া হবে। ব্যবসা-বাণিজ্য ছড়িয়ে পড়বে। এমনকি স্ত্রীলোকেরা তাদের স্বামীদেরকে ব্যবসায়িক কাজে সহযোগিতা করবে’।
আরো পড়ুনঃ পায়ের আকার বলে দেবে আপনার ব্যক্তিত্ব বা আপনি কেমন মানুষ! মিলিয়ে নিন..
[1] বর্তমানকালে এই আলামতটি প্রকাশিত হয়েছে। শহরে, গ্রামে-গঞ্জে এবং রাস্তার দ্বারে দ্বারে ব্যাপকভাবে দোকাপাট বৃদ্ধি পেয়েছে। মহিলারাও এতে পিছিয়ে নেই। তারাও স্বামীদের সাথে ব্যবসা-বাণিজ্যে অংশ নিচ্ছে। ধন-সম্পদ উপার্জন ও সঞ্চয়ে একে অপরের সাথে প্রতিযোগীতায় লিপ্ত রয়েছে।
[1] – মুসনাদে আহমাদ, আহমাদ শাকের (রঃ) হাদীছটিকে সহীহ বলেছেন।