ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশসহ যেসব দেশ!
ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশসহ আরো কয়েকটি দেশ। তার মধ্যে ভারত ও নেপাল রয়েছে ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে! বাংলাদেশের সিলেট থেকে চট্টগ্রাম অঞ্চলে..
ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ সহ আরো কয়েকটি দেশ। তার মধ্যে ভারত ও নেপাল রয়েছে ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে! বাংলাদেশের সিলেট থেকে চট্টগ্রাম অঞ্চলে কয়েকটি প্লেট থাকার কারণে এসব এলাকা ভূমিকম্পের বড় ঝুঁকিতে রয়েছে। সুনামগঞ্জ, জাফলং অংশে ডাউকি ফল্টের পূর্বপ্রান্তেও ভূমিকম্পের ঝুঁকি রয়েছে বলে বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন।
ভূমিকম্প কী?
ভূমিকম্প মানে ভূমির কম্পন। ভূ অভ্যন্তরে অর্থাৎ মাটির ভিতরে যখন একটি শিলা অন্য একটি শিলার উপরে উঠে আসে তখন ভূমি কম্পন হয়। পৃথিবীপৃষ্ঠের অংশবিশেষের হঠাৎ অবস্থান পরিবর্তন বা আন্দোলনই ভূমিকম্পন। হঠাৎ যদি ঘরের কোনো জিনিস দুলতে শুরু করে, যেমন: ওয়ালমেট, দেয়ালঘড়ি, টাঙানো ছবি বা খাটসহ অন্য যেকোন আসবাব—পত্র, বুঝতে হবে ভূমিকম্প হচ্ছে। সহজ কথায় পৃথিবীর কেঁপে ওঠাই ভূমিকম্প।
সারা পৃথিবীতে বছরে গড়ে ছয় হাজার ভূমিকম্প হয়। এগুলোর বেশিরভাগই মৃদু, যেগুলো আমরা টের পাই না। সাধারণত তিন ধরনের ভূমিকম্প হয়ে থাকে—প্রচণ্ড, মাঝারি ও মৃদু। আবার উৎসের গভীরতা অনুসারে ভূমিকম্পকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়: অগভীর, মধ্যবর্তী ও গভীর ভূমিকম্প। ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ভূ-পৃষ্ঠের ৭০ কিলোমিটারের মধ্যে হলে অগভীর, ৭০ থেকে ৩০০ কিলোমিটারের মধ্যে হলে মধ্যবর্তী এবং ৩০০ কিলোমিটারের নিচে হলে তাকে গভীর ভূমিকম্প হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
মাটির ভিতরে স্থিত গ্যাস যখন ভূ-পৃষ্ঠের ফাটল বা আগ্নেয়গিরির মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে তখন সেই গ্যাসের অবস্থানটি ফাঁকা হয়ে পড়ে আর পৃথিবীর উপরের তলের চাপ ওই ফাঁকা স্থানে দেবে গিয়ে ভারসাম্য বজায় রাখে। তখনই ভূ-পৃষ্ঠে প্রবল কম্পনের অনুভব হয় যা ভূমিকম্প নামে পরিচিত।
ভূমিকম্প হয় কেন?
সাধারণত তিনটি প্রধান কারণে ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়ে থাকে:
১.ভূ-পৃষ্ঠের হঠাৎ পরিবর্তন জনিত কারণে
২.আগ্নেয়গিরি সংঘটিত হওয়ার কারণে ও
৩.শিলাচ্যুতি জনিত কারণে।
মৃদু থেকে হালকা ও মাঝারি ধরণের ভূকম্পন মাঝে-মধ্যেই অনুভূত হচ্ছে। বাংলাদেশসহ আশপাশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের ভূ-পাটাতন (টেকটোনিক প্লেট) ও ভূ-ফাটল (ফল্ট) লাইনগুলো একযোগে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। প্রাকৃতিক এই প্রবণতা বা প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকায় ভূতাত্ত্বিক বিশেষজ্ঞগণ যে কোন সময়ই বাংলাদেশসহ আশপাশ অঞ্চলে শক্তিশালী এমনকি প্রলয়ংকরী মাত্রায় ভূমিকম্প সংঘটিত হতে পারে, এমনটি জোরালো আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন।
সম্ভাব্য তীব্র ভূমিকম্পের উচ্চঝুঁকির আওতায় রয়েছে দেশের সর্বাপেক্ষা ঘনবসতিপূর্ণ মধ্যাঞ্চলসহ বৃহত্তর ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট এবং বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুরসহ উত্তরাঞ্চল। বাংলাদেশ-ভারত-মিয়ানমার এই ত্রিদেশীয় সীমান্ত এলাকায় এবং এর সন্নিহিত ভূটান নেপাল, চীনসহ বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ঘন ঘন মৃদু, হালকা ও মাঝারি মাত্রায় ভূমিকম্প সংঘটিত হয়েছে।
ভূতাত্ত্বিক বিশেষজ্ঞরা আশংকা করছেন, এ অঞ্চলে সহসা যে কোন সময়ই সম্ভাব্য শক্তিশালী ভূমিকম্পের আগে বর্তমান সময়ে এ ধরনের উপর্যুপরি ভূকম্পনগুলোকে প্রি-শক, ‘ওয়েক আপ কল’ কিংবা আগাম সংকেত ও বড় ধরনের বিপর্যয়ের পদধ্বনি হিসেবেই দেখতে হবে। ইন্দো-বার্মা-হিমালয়ান, ইউরেশীয় একাধিক ভূ-ফাটল লাইনের বিস্তার ও অব্যাহত সঞ্চালনের কারণে এ অঞ্চলটি বিশ্বের অন্যতম সক্রিয় ভূকম্পন বলয় হিসেবে চিহ্নিত।
বার বার ছোট বা মাঝারি মাত্রায় ভূকম্পনের কারণে এ অঞ্চলের ভূ-ফাটল লাইনগুলো নাজুক ও শিথিল হয়ে পড়েছে। যা অদূর ভবিষ্যতে প্রবল ভূমিকম্পের আলামত বহন করে। তাছাড়া একশ’-দেড়শ’ বছর অতীতে এ অঞ্চলে রিখটার স্কেলে ৭ থেকে ৮ মাত্রায় তীব্রতাসম্পন্ন ভূমিকম্প সংঘটিত হয়েছিল।
আরো পড়ুন: অসম্ভব হলেও সত্য, মাথা ছাড়াই ১৮ মাস বেঁচে ছিলেন এই মুরগি
পৃথিবীর ভূ-কম্পনপ্রবণ এলাকাগুলোতে সাধারণত ৫০, ৭০, ১০০, ১৫০ বছর অন্তর শক্তিশালী ভূমিকম্পের পুনরাবৃত্তি ঘটে। বাংলাদেশ ও এর সন্নিকটে উত্তর-পূর্ব ভারতের ভূকম্পন প্রবণ অঞ্চলে বিগত ১৫০ বছরে রিখটার স্কেলে ৭ ও ৮ মাত্রায় ৭টি ভূমিকম্প এবং একাধিক ভয়াল সুনামি আঘাত হানে। এর মধ্যে ২টির উৎপত্তিস্থল (ইপি সেন্টার) ছিল বাংলাদেশ ভূখ-ের ভেতরেই এবং অপর ৫টির উৎস ছিল রাজধানী ঢাকা থেকে মাত্র ২৫০ কিলোমিটার পরিধির মধ্যে।
পার্বত্য অঞ্চল তথা স্থলভাগ ছাড়াও সাম্প্রতিককালে বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন আন্দামান নিকোবরে দফায় দফায় ভূকম্পন হয়েছে। বাংলাদেশের বৃহত্তর ঢাকাসহ মধ্যাঞ্চল, ময়মনসিংহ, সিলেট, রংপুর, বগুড়া, বৃহত্তর চট্টগ্রাম পার্বত্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, কুমিল্লা অঞ্চল ভূমিকম্পের জন্য সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে বিবেচিত।