অর্থনীতিব্যবসা-বাণিজ্য

৬% বেড়ে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি!

চাহিদার যোগান দিতে আয় ও ব্যয়ের সমন্বয় জরুরী। সরকারের নানামুখী চেষ্টা সেটাকে এতদিন নিজেদের অনুকুলেই রেখেছিল। তবে চেষ্টার অংশ হিসেবে আমদানি কিছুটা কমানো গেলেও চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই বড় অঙ্কের বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্যে দেখা যায়, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট সময়ে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির পরিমাণ আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ২৪ শতাংশ বেড়েছে, সেখানে আমদানি বেড়েছে প্রায় ১৭ শতাংশ।

তবুও রপ্তানি আয়ের চেয়ে এই সময়ে ৪ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ডলার বেশি খরচ হয়েছে আমদানির পেছনে। ঘাটতির এই পরিমাণ আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি।

এই প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে অর্থনীতির এই গুরুত্বপূর্ণ সূচকে শিগগিরই কোনো সুখবর মিলবে না।

তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারের নানামুখী উদ্যোগে আমদানি চাপ কিছুটা কমে এসেছে। কিন্তু রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি সে তুলনায় যথেষ্ট নয়।

ইউক্রেইনের ওপর রাশিয়ার হামলার প্রভাবে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চ হারের মূল্যস্ফীতি দেখা দিয়েছে। সেখানকার মানুষ খরচ কমিয়ে দেওয়ায় বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি সেভাবে বাড়ছে না। ১৩ মাস পর তো অনেক কমে গেল।”

আরও পড়ুন : আবারও চিনির দাম বাড়াতে চায় ব্যবসায়ীরা!

উদ্ভুত এই পরিস্থিতিতে চলতি অর্থবছরের পুরোটা সময় বাণিজ্য ঘাটতির এই ধারাবাহিতা দেখতে হবে বলে মনে করছেন আহসান এইচ মনসুর। বিশেষভাবে উল্লেখ্য…

  • ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট মাসে ১২ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ, যা গত অর্থবছরের তুলনায় ১৬ দশমিক ৯৬ শতাংশ বেশি।
  • এ অর্থবছর জুলাই-আগস্ট মাসে পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৮ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলারের, যা গত অর্থবছরের তুলনায় ২৩ দশমিক ৯১ শতাংশ বেশি।
  • তুলনামূলক হিসাবে অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে বাণিজ্য ঘাটতি থাকছে ৪ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ডলার। যেখানে আগের অর্থবছরের জুলাই-আগস্টে পণ্য বাণিজ্যে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৪ দশমিক ২৮ বিলিয়ন ডলার।
  • জুলাই মাসে ২ বিলিয়নের সামান্য উপরে থাকা বাণিজ্য ঘাটতি আগস্ট শেষে দ্বিগুনের বেশি বেড়েছে।
  • ২০২১-২২ অর্থবছর ৩৩ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলারের রেকর্ড বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ে শেষ করেছিল বাংলাদেশ। তাতে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাব ভারসাম্যে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ১৮ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলার, যা বাংলাদেশের ইতিহাসের রেকর্ড।

উল্লেখ্য, বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে গত অর্থবছরের শেষে আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপ করার পাশপাশি ৩০ মিলিয়ন ডলার সম পরিমাণ বা তার চেয়ে বেশি পরিমাণ পণ্য আমদানিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদন নেওয়া বাধ্যতামূলক করে সরকার। এছাড়াও বিলাসী পণ্যর বিপরীতে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত এলসি মার্জিন ও কিছু পণ্য আমদানিতে ঋণ সুবিধাও বাতিল করা হয়।

তাতে সুফলও কিছুটা পাওয়া গেছে, নতুন এলসি খোলার পরিমাণ ৮ বিলিয়ন ডলার থেকে কমে ৬ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে এসেছে। একইভাবে কমে এসেছে এলসি নিষ্পত্তির পরিমাণও। কিন্তু তারপরও বাণিজ্য ঘাটতির চিত্রে খুব বেশি হেরফের দেখা যাচ্ছে না।

Back to top button

Opps, You are using ads blocker!

প্রিয় পাঠক, আপনি অ্যাড ব্লকার ব্যবহার করছেন, যার ফলে আমরা রেভেনিউ হারাচ্ছি, দয়া করে অ্যাড ব্লকারটি বন্ধ করুন।