শিল্প ও সাহিত্য

স্মৃতিতে অমলিন ছেলেবেলার যত বই

ছেলেবেলায় পড়া নানান বইয়ের মধ্যে কিছু বই থাকে যা বড়ো হবার পরেও স্মৃতিতে অমলিন হয়ে রয়। যার কাহিনি, গল্প কিংবা চরিত্র বারেবারেই ফিরে আসে মনের গহীনে। সময় আর বয়স গড়ালেও যার রেশ কেটে যায় না।

সুখ কিংবা দুঃখে যেই বইগুলোই নতুন করে পড়ে দেখতে ইচ্ছে হয়, ইচ্ছে হয় ছুঁয়ে দেখে ছেলেবেলার সেইসব স্মৃতির রোমন্থন করতে। বারবার পঠিত এই বইগুলোর প্রতি আমার ভালোলাগা ভীষণ। আজ তাই ছেলেবেলার সেসব কয়েকটি বইয়ের উল্লেখ করছি।

বই: জার্মান রূপকথা

জার্মানির রূপকথা বইটি আমার পড়া অন্যান্য সকল দেশের রূপকথার বইগুলোর চাইতে সবার প্রথমে। নানান সব গল্প, কাহিনি নিয়ে সাজানো এই বই। প্রতিটি গল্প, চরিত্র আর কাহিনী যেন পাঠককে অন্য রাজ্যে নিয়ে যায়।

অনেকদিন আগে জার্মানির এক শহরে বাস করা দুই ভাই ছিল। যাদের নাম উইলিয়াম গ্রীম ও জেকব গ্রীম। যারা গল্প পড়তে ভীষণ ভালোবাসত। আর সেই ভালোবাসা থেকেই তারা জার্মানিতে সকলের লোকমুখে প্রচলিত ছড়িয়ে থাকা সমস্ত গল্পগুলো সংগ্রহ করতে লাগল।

দীর্ঘদিন ধরে তারা এই রূপকথার গল্পগুলো সংগ্রহ করে, অবশেষে যার লিখিত রূপ বেরোয় ১৮১২ সালে। তারপর থেকে বহুভাষায় এই জার্মানির রূপকথা গুলো অনূদিত হয়, যার রেশ এখনো নতুনের মতো আছে।

আরও পড়ুন:  সৌদামিনী মালো ও আত্মচরিত বই রিভিউ

বই: গল্পগুলো ইয়েতির

লেখক: আলী ইমাম

শিশুতোষ গল্পের বইয়ের মধ্যে আমার আরেকটি ভীষণ প্রিয় বই গল্পগুলো ইয়েতির।

শিশু সাহিত্য আর আলী ইমাম প্রায় দুটো সমার্থক শব্দ। আলী ইমাম, যিনি প্রায় ৪০ বছর ধরে নিরন্তর স্বপবিলাসী শিশুসাহিত্য রচনার এক দক্ষ রাজকুমার। কেবলই শিশুমানস, শিশুজগত, শিল্পকল্পনাকে ধারণ করে বহু বিচিত্র রচনা সম্ভারে সমৃদ্ধ করেছেন আমাদের শিশুসাহিত্য, বাংলা শিশুসাহিত্য। বাংলার  শিশুদের ছেলেবেলাকে উপভোগ্য আর আনন্দময় করে গড়ে তোলার পেছনে তার অবদান অনস্বীকার্য।

চিরায়ত রচনাভংগি, ধ্রুপদ কাহিনীনির্মাণ এবং ক্লাসিক্যাল শিশু সাহিত্যের মর্মকে তিনি কর্মে রুপান্তর করেছেন। শিশু সাহিত্য জগতের যাবতীয় অনুষঙ্গ ও কল-কব্জাকে তিনি সযত্নে আত্মস্থ করেছেন। শব্দজালে বন্দী করেছেন মধুর ও বিধুর রুপকল্পনাকে। পরিপূর্ণ শিশুসাহিত্যিক বলতে যা বোঝায় আলী ইমাম তাই একজন। শুধুই অর্থহীন কল্পনার উড্ডীন ফানুস নয় বরং আলী ইমামের রচনা বাস্তব ধূলিকণাকেও স্পর্শ করেছে। তার মূল ক্ষেত্র গদ্য- রচনা।

শিশু মানস অস্থির ও চঞ্চল। তার কৌতূহল আকাশের সীমানা পর্যন্ত বিস্তৃত। আলী ইমামও যেন তার ব্যাতিক্রম নন। যখন যা খুশি, যা নতুন, যা আগ্রহী করে তোলে শিশুদের তাই নিয়েই গড়ে তোলেন একেকটি গল্প।

রচনা নৈপুণ্যে, বিষয়বস্তুর অভিনবত্বে, অন্তর্নিহিত ভাবের দ্যোতনায় তার সমগ্র রচনাই যেন স্বার্থক। এ বইটিতে ভুটানের বিভিন্ন স্থান, চিত্রপট, সংস্কৃতির মিশেলে লেখা হয়েছে নানান গল্প। প্রতিটি গল্পই চমৎকার এবং পাঠক প্রিয়।

আরও পড়ুন: প্রোডাক্টিভ মুসলিম বই রিভিউ!

বই: রিপভ্যান উইনকল

রূপান্তর: হোসনে আরা শাহেদ

উত্তর আমেরিকার ছোট্ট একটি গ্রাম, গাছগাছালি আর সবুজ অরণ্যে ঘেরা। গ্রাম ছাড়িয়ে গেলে দূরে সবুজ বন। আর ঠিক তারপরেই আছে ক্যাটস্কিল পাহাড়ের সারি।

যে পাহাড়গুলো এতটাই উঁচু যেন আকাশ ছাড়িয়ে গেছে। এই ক্যাটস্কিলস সম্পর্কে প্রচলিত আছে নানান গল্প। বুড়ো-বুড়িদের মুখ থেকে আজকের তরুণরা এগল্পের সাক্ষী হয়ে আসছে। সেই গ্রামের এক ছেলে রিপভ্যান উইনকল। পাহাড়ের ভেতরে হারিয়ে যাওয়া তার জীবনের এতগুলো বছরের গল্প আর রহস্যই তুলে ধরা হয়েছে এই বইয়ে।

বইয়ের প্রতিটি ভাঁজেই আছে নতুনত্ব আর রহস্য। অবাক করা কাহিনি, যা রিপভ্যানের সর্বশেষ পরিণতি কী হয় তা নিয়ে ভাবতে ভাবতেই উত্তেজনার সৃষ্টি করে।

গ্রামের সকলের কাছে রিপভ্যানের পুনরায় আসন ফিরে পাওয়ার মধ্যে দিয়ে গল্পের শেষ হলেও রিপভ্যানের জীবনে দীর্ঘ সময়ে অবিশ্বাস্য ভাবে ঘটে যাওয়া সেইসব কাহিনিই এই গল্পের মূল উপজীব্য।

বই: পাখিদের নিয়ে

লেখক: আলী ইমাম

আলী ইমামের বই পড়ে ততদিনে মুগ্ধ হয়ে গেছিলাম, তাই তো তার যেকোনো বই নির্দ্বিধায় সংগ্রহ করতাম। সেবার কিনেছিলাম পাখিদের নিয়ে বইটি।

বইটিতে বাংলার সমস্ত পাখির পরিচয় এত সুন্দর করে গল্পের ছলে তুলে ধরা হয়েছে, যেন ভাবতেই ভালো লাগে। বাংলাদেশের বিলুপ্তপ্রায় পাখি থেকে শুরু করে অতিথি পাখি, কিংবা বর্তমানে কী কী পাখি আছে তার সমস্তটাই পুরো বইয়ে তুলে ধরা হয়েছে গল্পের মাধ্যমে।

এই এক বই পড়েই এত পাখির নাম, বাসস্থান, খাদ্যাভ্যাস, স্বরূপ জানা যাবে এটা যেন একদমই অবাক হবার মতো।

কন্ডর শকুন, তিলে মুনিয়া, হাঁড়ি চাঁচা, লালপিঠ ফুলঝুরি, নানারকম বক, নীলকন্ঠী পাখি, টুনটুনি, আলবাট্রস, জলকবুতর কিংবা বিলুপ্তপ্রায় নিউজিল্যান্ডের মোয়া পাখির সমস্ত তথ্য এই বইয়ে দেওয়া আছে সুনিপুণভাবে।

বইয়ের প্রতিটি পাতায় পাখিদের ছবি, পাখির বাসার ছবি যেন বইটিকে পড়তে আরও দ্বিগুণ আনন্দ বাড়িতে দিত।

আরও পড়ুন: বোবাকাহিনী বই রিভিউ

বই: আধ ডজন স্কুল

লেখক: মুহাম্মদ  জাফর ইকবাল

জাফর ইকবালের বই সেসময় বেশ কয়েকটাই পড়ে শেষ করেছি। তার মধ্যে ছিল দীপু নাম্বার টু, কাজলের দিনরাত্রি, হাত কাটা রবিন সহ আরও কত কী!

ততদিনে তার লেখার প্রতি আলাদা নেশা হয়ে গিয়েছিল। তার বই দেখলেই হুড়মুড়িয়ে কিনে পড়তাম। বইয়ের প্রতিটি পাতায় বুদ হয়ে ডুবে থাকতাম। আধ ডজন স্কুল বইটি তেমনই এক সময়ে কেনা। তার স্কুলজীবনের নিজস্ব স্মৃতি নিয়েই বইটি রচিত হয়েছে। এযাবৎকালে বইটির এগারোটি সংস্করণ হয়েছে। ঠিক পূর্ণাঙ্গ স্মৃতি হয়, দিন-তারিখবিহীন খন্ড খন্ড সব স্মৃতিই এই বইয়ের মূল উপজীব্য।

যা পড়তে গিয়ে কেবল নিজেদের স্কুল জীবনের দুরন্ত সময়ের সব স্মৃতি চোখের সামনে ভেসে ওঠে। মনে হয়, বইটি যেন নিজেদের কাহিনি নিয়েই লেখা হয়েছিল। আমাদের গোটা স্কুল জীবনের প্রতিচ্ছবিই এই বই।


প্রিয় পাঠক, এই ছিল- আমার স্মৃতিতে অমলিন ছেলেবেলার বইগুলোর গল্প! আপনার ছোটোবেলার পড়া এমন প্রিয় কোনো বই থাকলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন! ধন্যবাদ!

Back to top button

Opps, You are using ads blocker!

প্রিয় পাঠক, আপনি অ্যাড ব্লকার ব্যবহার করছেন, যার ফলে আমরা রেভেনিউ হারাচ্ছি, দয়া করে অ্যাড ব্লকারটি বন্ধ করুন।