লোডশেডিং এর সময়টা উপভোগ্য করে তুুলুন!
লোডশেডিং এর সময়টা করুন উপভোগ, দিনকে দিন প্রযুক্তি এতটাই উন্নত হয়েছে, এই শহরে প্রজন্ময়ের অনেকেই জানে না লোডশেডিং ঠিক কবে হয়েছে
লোডশেডিং এর সময়টা করুন উপভোগ! দিনকে দিন প্রযুক্তি এতটাই উন্নত হয়েছে, এই শহরে প্রজন্ময়ের অনেকেই জানে না লোডশেডিং ঠিক কবে হয়েছে, এর ভোগান্তি কতটুকু! সারাদিন মোবাইল ফোন, নয়তো টিভি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, গেম খেলেই সময় কাটে এই শহুরে প্রজন্মের।সবকিছুই বিদ্যুতের কল্যাণে সম্ভব হয়েছে। যদিও এখনো কিছু গ্রামে প্রযুক্তির সম্পূর্ন স্পর্শ পায়নি। শহরের জঞ্জাল ও কংক্রিটের জীবনে এতদিন সবকিছু ঠিক ভাবেই চলছিলো । কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় শুরু সেই পুরোনো দিনের মতো লোডশেডিং। আর তখনই লোডশেডিংকে ভুলতে বসা শহরবাসী পড়েছে বিশাল বিপাকে। অন্ধকার ঘরে অনেকেই অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেছে, কিছুই যেন করার নেই। সময়টা যেন কাটতেই চায়না। আজকের এই আর্টিকেলটার মাধ্যমে আপনাকে ঘুরিয়ে আনবো শৈশবে বা আপনার পিতা মাতার শৈশবে। তো চলুন জেনে নেই- লোডশেডিং এর সময়টা কীভাবে উপভোগ করবেন! কীভাবে বিরক্ত মনকে করবেন শান্ত।
আগে লোডশেডিং হলেই যেন প্রতিটি মহল্লায় উৎসব নামতো। একটা মোমবাতি কিংবা কুপি বা হারিকেনের টিপ টিপ আলোয় জলসা হতো, গল্প হতো কত! কেউ কেউ বেড়িয়ে পড়তো বন্ধুদের সাথে খেলতে বা আড্ডা দিতে, কেউ অপেক্ষা করতো লোডশেডিং এর, কেউ গল্প জুড়তো শীতল পাটি মেলে, সেই সোনালী দিনগুলো বর্তমানে কই যেন হারিয়ে গিয়েছে। সবই যেন স্মৃতি হয়ে আছে নব্বই শতকের বাচ্চাদের মাথায়। হয়তো সেই গল্পই আজকের প্রজন্ম শোনে অধীর আগ্রহ নিয়ে, অথবা প্রযুক্তির কল্যাণে সেই গল্পটাই করা হয় না পরিবারের সদস্যদের সাথে। পাশের বাসার মানুষকেও অনেকেই চিনে না। সেই আন্তরিকতা, প্রাণের যে সম্পর্কের টান , সবই যেন আজ মেকি! যাই হোক, কথা না বাড়িয়ে চলুন জেনে নেওয়া যাক লোডশেডিং এর সময়টা উপভোগ করার উপায়সমূহ-
১) বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে পারেন: আজকাল আমরা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিলেও মুখোমুখি আড্ডা যেন দেওয়াই হয় না। তাই বন্ধুত্বের গভীরতাও যেন দিনকে দিন পানসে হয়ে যাচ্ছে। লোডশেডিং এর সময়টা বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে কাটাতে পারেন। যদি আপনার নিকটস্থ জায়গায় কোনো বন্ধু থাকে, তার সাথে মুখোমুখি বসে আড্ডা দিতে পারেন। সেই আড্ডা চাইলে ছাদে খোলা আকাশের নিচেও দিতে পারেন, সাথে এক কাপ চা কিংবা গিটার , গান গাইতে পারেন।
২) পরিবারের সাথে সময় কাটান: ব্যস্ততার জন্য বর্তমানে আমাদের ঠিকমতো পরিবারের সাথে পযার্প্ত সুন্দর সময় কাটানো হয় না। এই লোডশেডিং এর সময়টা পরিবারের সাথে কাটাতে পারেন। বাসার ছাদে বা ড্রয়িং রুমের ফ্লোরে পাটি বিছিয়ে গোল হয়ে বসে গল্প করুন, সবার কথা শুনুন। আবার এমন কিছু খেলাও খেলতে পারেন, যা পরিবারের ছোটো সদস্যদের জন্য উপকারি।
৩) গল্প শুনতে পারেন: গল্পের বই পড়ার পাশাপাশি গল্প শুনতেও পারেন। যদি আপনার বাসায় বয়স্ক দাদা-দাদী বা নানা-নানী থাকে । তবে এই সময়টা তার কাছ থেকে শুনতে পারেন পুরোনো দিনের গল্প। আর যদি এমন সুযোগ না থাকে, তবে আজকাল অনেক গল্পের অডিও বুক পাওয়া যায়, এগুলো শুনতে পারেন।
৪) হাঁটতে যেতে পারেন: আমাদের অনেকেরই রাতে হেঁটে হেঁটে নিজের শহর দেখা কম হয়। রাতের পরিবেশ অনেকটাই ভিন্ন ,আর যদি হয় লোডশেডিং! তাই এই সময়টা হেঁটে আসতে পারেন। এতে শরীর যেমন ভালো থাকবে, তেমনি মন হবে প্রফুল্ল।
৫) ঘরের কাজ এগিয়ে রাখতে পারেন: লোডশেডিং এর সময়টাতে এগিয়ে রাখতে পারেন ঘরের কাজকর্ম। সবাই মিলে একত্রে কাজ করলে পারিবারিক বন্ধন ও দৃঢ হয়ে ওঠবে। যদিও কম আলোয় কাজ করা কষ্ট সাধ্য, তবে এমন সব কাজ করতে পারেন যা কম আলোতে করা সম্ভব।
৬) প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন: যদিও শহরে প্রায় সব কিছুই কৃত্রিম। তবুও আপনি ছাদে গিয়ে আকাশ দেখতে পারেন, চোখ বুঝে প্রাকৃতিক শব্দ শুনতে পারেন। এতে মন শান্ত হবে, পাশাপাশি প্রকৃতির কাছাকাছি যেতে পারবেন।
৭) ব্যায়াম বা মেডিটেশন করতে পারেন: অন্ধকারে বসে না থেকে যোগব্যায়াম বা মেডিটেশন করতে পারেন। আমরা জানি, সুস্থ জীবনে ব্যায়াম বা মেডিটেশনের ভূমিকা বলে শেষ করা যাবে না।
৮) সৃজনশীল কাজে মনোনিবেশ করতে পারেন: কম আলোতে করা যায় এমন সব সৃজনশীল কাজ করতে পারেন। এতে আপনার মেধার বিকাশ ঘটবে, সেই সাথে সময়টাও দারুন কাটবে।
৯) পোষা প্রাণির সাথে সময় কাটান- সারাদিনের ব্যস্ততায় ঠিক ভাবে পোষা প্রাণির সাথে সময় কাটানো হয় না? চিন্তা নেই, এই লোডশেডিং এর সময়টা কাটান আপনার পোষা প্রাণির সাথে। তার সাথে খেলুন , কথা বলুন, সময়টা ভালো কাটবে।
আরো পরুন:
১০) গাছের যত্ন নিতে পারেন- এই সময় গাছের আগাছা পরিষ্কার করতে পারেন, আর দিন হলে গাছে পানি দিতে পারেন। টব পরিষ্কার করতে পারেন।
১১) খাবার খেতে পারেন- লোডশেডিং অথচ আপনার কিছুই করার নেই। ঝটপট ফ্রিজ হতে আইসক্রিম ,চকলেট ,ইত্যাদি খাবার বের করে খেতে পারেন। এতে খাবার নষ্টও হবে না, আবার আপনার পেট ও শান্ত।
১২)পুরনো স্মৃতি ঘাটতে পারেন- হয়তো অনাদারে আলমারি কিংবা বুক সেলফের এক কোনায় পরে আছে ফটো এলবাম বা কিছু চিঠি। এই লোডশেডিং এর সময় এসব খুলে দেখে বা পড়ে মনে করতে পারেন পরোনো সেই দিনের কথা।
১৩) প্রিয়জনের সাথে কথা বলতে পারেন- অনেক দিন একান্তভাবে প্রিয়জনের সাথে কথা হয় না। এই লোডশেডিং এর সময়টা প্রিয়জনের সাথে কথা বলতে পারেন। এতে দুরুত্ব ও ঘুচবে।
এছাড়াও লোড শেডিং এর সময় কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নিতে পারেন, শুয়ে শুয়ে গান শুনতে পারেন, পুরোনো দিনের মতো এফেওএম রেডিয়ো শুনতে পারেন। আর যদি আপনার বাসায় বাচ্চা থাকে, তাকে পাশের বাসার বাচ্চাদের সাথে খেলাধুলা করতে দিতে পারেন, এতে আপনার বাচ্চার মানসিক বিকাশ ঘটবে। চাইলেও আপনিও পাশের বাসার ভাবি বা আন্টির সাথে আড্ডা দিন, এতে সামাজিক বন্ধন দৃঢ় হবে। আপনার লোডশেডিং এর সময় কাটুক আনন্দে।