ঘুমানোর সময় মোবাইল মাথার কাছে রেখে ঘুমানো কতটা ক্ষতিকর জানেন?
আজ আমরা জনবো ঘুমানোর সময় মোবাইল মাথার কাছে রেখে ঘুমানো কতটা ক্ষতিকর জা না জানার কারণে আপনার অজান্তেই বিশাল ক্ষতির মোখে পরছেন

অনুলিপি ডেস্কঃ মানুষের প্রতিদিনের সঙ্গী মোবাইল ফোন। ঘুম থেকে উঠে আবার ঘুমাতে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সারাদিন আপনার পাশে আর কেউ থাকুক বা না থাকুক মোবাইল ফোন আপনার পাশে থাকবে। আপনি হয়তো জানেন না মোবাইল ফোন আমাদের সাথে সারাদিন থাকার কারণে আমাদের কি ক্ষতি হচ্ছে। বর্তমানে বেড়েছে মোবাইল ফোনের ব্যবহার। আজকাল মোবাইল ছাড়া মানুষ এক মুহূর্তও চলতে পারেনা। বিনোদন থেকে শুরু করে বিশ্বের সব খবরও আমরা মোবাইলের মাধ্যমে পেয়ে থাকি। বলা চলে, বিজ্ঞান পুরো বিশ্বকেই আমাদের হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে। মোবাইলের অধিক ব্যবহার এখন আমাদের একটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। তাইতো মোবাইলটাকে আমরা সব সময় নিজের সঙ্গে রাখতে পছন্দ করি, এমনকি ঘুমের সময়ও।আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে মানুষ দ্রুত যোগাযোগের জন্য মোবাইল ফোন ব্যবহার করে থাকেন।সম্প্রতি চীনের সিনহুয়া ইউনিভার্সিটি আর আমেরিকার ইনস্টিটিউট অফ এনবিসি ডিফেন্স-এর গবেষকরা দুটি পৃথক গবেষণায় দেখিয়েছেন, মোবাইল ফোনের সার্বক্ষণিক সঙ্গ, বিশেষত রাত্রে ঘুমনোর সময়ে শরীরের কাছাকাছি মোবাইল ফোন রাখা অত্যন্ত বিপজ্জনক। এই অভ্যাস প্রাণঘাতীও হতে পারে।
আসুন জেনে নেই ঘুমানোর সময় মাথার কাছে মোবাইল ফোন রেখে ঘুমালে আমাদের কি ক্ষতি হতে পারে:- অনেকেই মোবাইল ফোনে গান চালিয়ে তা শুনতে শুনতে ঘুমান। দেখা যায়, মোবাইল ফোনের সঙ্গে হেডফোন লাগিয়ে তা কানে দিয়ে ঘুমানোর আগে গান চালান অনেকেই। অনেকেই ফেসবুক চালাতে চালাতে ফোন চালু রেখেই ঘুমিয়ে যান। আবার অনেকেই ঘুমানোর আগে দীর্ঘ সময় মেইল ব্যবহার করেন বা গেম খেলেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের অভ্যাস ঘুমানোর জন্য মোটেও ভালো নয়। এতে মানসিক চাপ বাড়তে থাকে। আপনার ফোন ব্যবহার সীমিত করুন। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ফোন নিয়ে যাবেন না। হাতের কাছে ফোন থাকলে তা বারবার ব্যবহার করার আগ্রহ বাড়বে। আপনার ফোন রাখার জন্য একটি নির্দিষ্ট জায়গা বরাদ্দ রাখুন। যেখানে চার্জার, হেডফোন বা অন্যান্য টুকিটাকি দরকারি জিনিসপত্র রাখেন, আপনার মোবাইল ফোনটিও সেখানেই রেখে দিতে পারেন। যাতে মস্তিষ্ক কিছুতেই বিক্ষিপ্ত না হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, ফোন ও মস্তিষ্কের মধ্যে অল্প তফাৎ থাকলে তা ঘুমের পরিমাণ ও ঘুমের মান দু’য়ের ওপরেই প্রভাব ফেলে৷ ফোন কাছে নিয়ে শুলে তা আমাদের স্নায়ুকে উত্তেজিত রাখে৷ অবচেতনে আমরা পরের ফোন অথবা ম্যাসেজের জন্য অপেক্ষা করে থাকি, যা আমাদের বেশিক্ষণ চোখ বন্ধ করে রাখতে দেয় না৷ রাতের অন্ধকারে ফোনের স্ক্রিনের আলো মানুষের চোখের রেটিনার পক্ষে ক্ষতিকারক৷ এই আলোই আমাদের মস্তিষ্ককে জানান দেয় ফোন অথবা ম্যাসেজ আসার প্রাথমিক খবর৷ এই আলো তন্দ্রার জন্য প্রয়োজনীয় হরমোনকে নিঃসরণ হতে বাধা দেয়৷ গবেষকরা বলছেন, আজ কাল অধিকাংশ মোবাইল ফোনেই ব্যবহৃত হয় লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি। এই ব্যাটারি থেকে স্বাভাবিক অবস্থায় প্রায় ১০০টি গ্যাস নির্গত হয়, যেগুলি মানব শরীরের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর। এই সমস্ত গ্যাসের মধ্যে রয়েছে কার্বন মনোক্সাইডের মতো বিষাক্ত গ্যাসও।
আরো পড়ুন: খালি পেটে ভু’লেও যে তিন কাজ করবেন না
এই কার্বন মনোক্সাইড যদি অতিমাত্রায় শরীরে প্রবেশ করে তাহলে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তবে গবেষকরা জানাচ্ছেন, সাধারণভাবে মোবাইলের ব্যাটারি থেকে যে পরিমাণ গ্যাস নির্গত হয় তা প্রাণঘাতী মাত্রার নয়। তবে বিষয়টি সম্পর্কে মোবাইল গ্রাহকদের সচেতনতা অবশ্যই প্রয়োজন। বিশেষত যারা রাত্রে ঘুমানোর সময়ে মোবাইল ফোনটিকে শোয়ার ঘরেই মাথার কাছে রেখে দেন, সেইসঙ্গে ঘরের জানলা-দরজাও বন্ধ রাখেন, মোবাইলের প্রভাবে তাদের শরীরে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। মোবাইলের ব্যাটারি-নির্গত গ্যাসের প্রভাবে মানুষের চোখ, নাক ও গলা জ্বালার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
যারা রাত্রে ঘুমানোর সময়ে মোবাইলটিকে চার্জে বসিয়ে রাখেন, তাদের শারীরিক ক্ষতির সম্ভাবনা বেশি। কাজেই গবেষকদের পরামর্শ, রাত্রে ঘুমনোর সময়ে চেষ্টা করুন মোবাইলটিকে অন্য ঘরে রাখতে। চার্জ দিনের অন্য সময়ে দিন। আর একান্তই যদি মোবাইলটিকে শোয়ার ঘরে রাখতে হয়, তা হলে চেষ্টা করুন ঘরের অন্তত একটি জানলা খোলা রাখতে। অবশ্য গবেষকরা জানিয়েছেন, শুধু রাত্রে নয়, মোবাইলের সান্নিধ্য দিনের যে কোনও সময়েই ক্ষতিকর। এবং মোবাইল বা ট্যাবের ব্যাটারি যদি নিম্নমানের হয়, তাহলে তা থেকে নির্গত গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, ফলে শারীরিক ক্ষতির সম্ভাবনাও বাড়ে। গবেষকরা এও জানান, যেসব মোবাইল বা ট্যাবলেটের ব্যাটারি চার্জিং-এর সময়ে গরম হয়ে যায়, সেগুলি সাধারণত বেশি ক্ষতিকর হয় শরীরের পক্ষে। এছাড়া অনেক সময় মোবাইলের ব্যাটারি বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটতে দেখা গেছে।