জেনে নিন ব্ল্যাকহেডস দূর করার ঘরোয়া উপায়।
আজ আমরা জানবো জানবো ব্ল্যাকহেডস দূর করার ঘরোয়া উপায়। এমন ছোট ছোট সমস্যা নিয়ে আমরা অসেকেই সমস্যায় আছি জানতে হলে পড়োটা পড়ুন

অনুলিপি ডেস্কঃ সৌন্দর্যতা বৃদ্ধির জন্য কত কিছু করি আমরা সারাদিন। আমাদের মুখের সৌন্দর্য নষ্ট করার জন্য ব্ল্যাকহেডসই যথেষ্ট। নানা কারণে দেখা দিতে পারে ব্ল্যাকহেডস। যখন আমাদের ত্বকের লোমকূপগুলো তেল-ময়লা জমে বন্ধ হয়ে যায় তখনই দেখা দেয় ব্ল্যাকহেডস। ব্ল্যাকহেডস মূলত মৃত কোষের সমষ্টি যা বাতাসের সংস্পর্শে কালো হয়ে যায়। ছোট ছোট ব্ল্যাকহেডস দেখা দেয় কপালে, চিবুকে, গালে, নাকের দুই পাশে। সবার আগে আমাদেরকে জানতে হবে ব্ল্যাকহেডস কী। ব্ল্যাকহেডস আসলে কী? আমাদের ত্বকে রয়েছে অসংখ্য লোমকূপ যা দ্বারা ত্বক নিঃশ্বাস নেয়। কখনো কখনো মৃতকোষ ও ত্বক থেকে নিঃসৃত তেল লোমকূপের গোড়ায় জমে গোড়াগুলো বন্ধ হয়ে যায়, এভাবেই ব্ল্যাকহেডসের জন্ম হয়। ত্বকের স্বাভাবিক মেলানিন এবং তেল বাতাসের সংস্পর্শে এলে তা অক্সিডাইজ হয়ে কালো রঙ ধারণ করে। রঙ কালো দেখানোর কারণে অনেকেই ব্ল্যাকহেডসকে ময়লা ভেবে ভুল করেন। কিন্তু আসলে ময়লার সাথে ব্ল্যাকহেডসের কোনো সম্পর্ক নেই। আপনার চেহারায় ব্ল্যাকহেডস থাকা মানে এই নয় যে, আপনি অপরিচ্ছন্ন। ব্ল্যাকহেডস সাধারণত থুতনি, নাক ও নাকের আশপাশের অংশেই বেশি দেখা যায়। ব্ল্যাকহেডস অনেক সময় বংশগত কারণেও হয়ে থাকে। এ ছাড়া গর্ভাবস্থায়, টিনেজ বয়সে ব্ল্যাকহেডসের উপদ্রব হয়ে থাকে। বিভিন্ন ওষুধ যেমন করটিকস্টারয়েড, অ্যান্ড্রজেন বা জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল সেবন করলেও ব্ল্যাকহেডস হতে পারে। হতাশার কথা হলো, ব্ল্যাকহেডসের পেছনের সবগুলো কারণ এখনো পুরোপুরিভাবে আবিষ্কৃত হয়নি।
ব্ল্যাকহেডস দূর করার জন্য পার্লারে ছোটেন অনেকে। সেখানে ফেসিয়াল করার সময় ব্ল্যাকহেডস রিমুভ করে দেওয়া হয়। কিন্তু সেজন্য প্রয়োজন পড়ে বাড়তি খরচ আর সময়ের। এই সমস্যা সমাধানে আপনাকে পার্লারে না ছুটলেও চলবে। বাড়িতে থাকা পরিচিত কিছু উপাদানে দূর করতে পারবেন ব্ল্যাক হেডস। চলুন জেনে নেওয়া যাক ব্ল্যাকহেডস দূর করার ঘরোয়া উপায়। টমেটোতে দূর হবে ব্ল্যাকহেডস> আমাদের ত্বক ভালো রাখতে সাহায্য করে টমেটো। টমেটোতে আছে এনজাইম যা ত্বক এক্সফলিয়েট করে। ফলে দূর হয় মৃতকোষ এবং ব্ল্যাকহেডস। একটি টমেটোর খোসা ছাড়িয়ে চটকে নিন। এরপর পুরো মুখে রেখে দিন ঘণ্টাখানেকের জন্য। শুকিয়ে এলে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। আপনার ত্বক যদি সংবেদনশীল হয় তবে টমেটোর সঙ্গে পানি মিশিয়ে ব্যবহার করুন।
ওটস ব্য়বহার করুন এভাবে> এই ব্ল্যাকহেডস দূর করার জন্য আপনি আরও কয়েকটি ঘরোয়া উপাদান ব্যবহার করতে পারেন। যেমন ওটস ব্যবহার করুন। এর সঙ্গে মধু মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিতে পারেন। কীভাবে ব্যবহার করবেন? ব্ল্যাকহেডস দূর করতে কীভাবে কাজে লাগাবেন এই ওটসকে? একটি পাত্রে ওটস নিন পরিমাণ মতো। ওটসের গুঁড়ো নিন। কিংবা ওটস যেন সামান্য দানা দানা থাকে। তা ভালো করে মিশিয়ে নিন। এর সঙ্গে সামান্য জল এবং মধু মিশিয়ে নিন। ওটস আপনার ত্বককে এক্সফোলিয়েট করবে এবং মধু আপনার ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করবে। ব্ল্যাকহেডসের উপর এই প্যাক লাগিয়ে নিন। সামান্য ঘষে নিলেই হবে। তারপর জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
বেকিং সোডা, লেবুর রস ও কাঁচা দুধ> বেকিং সোডা ব্ল্যাকহেডস কমানোর ক্ষেত্রে খুবই কার্যকর। এটি ত্বকের ময়লা পরিষ্কার করতে সহায়তা করে। লেবুর রস ত্বকের উজ্জ্বলতা ফেরায়। কাঁচা দুধে ভিটামিন বি, আলফা-হাইড্রোক্সি অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। এটি ত্বকে ক্লিনজার হিসেবে কাজ করে। দুই টেবিল চামচ বেকিং সোডা, এক টেবিল চামচ লেবুর রস ও দুই টেবিল চামচ কাঁচা দুধ নিন। এবার সব উপকরণ মেশান। এরপর মুখে ভালোভাবে প্রয়োগ করুন। পাঁচ মিনিট রেখে দিন। তারপর এটি দিয়ে মুখে ভালোভাবে ম্যাসাজ করুন। এবার পানি দিয়ে ধুয়ে মুখে টোনার লাগান। সপ্তাহে অন্তত একবার এটি করুন। ভালো ফল মিলবে। স্যালিসাইলিক এসিডযুক্ত স্ক্রাব> স্যালিসাইলিক এসিডযুক্ত স্ক্রাব ব্যবহার করে আলতো করে ত্বকের উপরি ভাগ পরিষ্কার করতে হবে। স্ক্রাব করার ফলে ব্ল্যাকহেডস দূর হবে না কিন্তু ত্বকের মৃতকোষ দূর হবে, স্ক্রাবে থাকা স্যালিসাইলিক এসিড তখন পোরে ঢুকতে পারবে সহজেই। এতে পোরগুলো ভালোভাবে পরিষ্কার হবে। তবে মনে রাখতে হবে, তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারীদের সপ্তাহে তিনবারের বেশি স্ক্রাব ব্যবহার করা উচিত নয়। অন্য দিকে যাদের ত্বক শুষ্ক তারা সপ্তাহে দু’বার ও সেনসিটিভ ত্বকের অধিকারীরা সর্বোচ্চ একবার স্ক্রাব ব্যবহার করতে পারবেন।
আরো পড়ুন: বিরিয়ানি হাঁড়িতে লাল কাপড়ে বাধা থাকে কেন জানেন?
গরম পানির ভাপ নিন> ত্বকের যত্নে গরম পানির ভাপ নেয়ার পদ্ধতি নতুন নয়। এটি ত্বক ভেতর থেকে পরিষ্কার করতে কার্যকরী। একটি পাত্রে পরিষ্কার গরম পানি নিয়ে মিনিট দুয়েক ভাপ নিন। এরপর লেবুর রস, মধু ও চিনি দিয়ে একটি প্যাক তৈরি করে মুখে আলতোভাবে ঘষে ঘষে লাগান। এভাবে মিনিটখানেক ম্যাসাজ করুন। এরপর পরিষ্কার ঠান্ডা পানিতে মুখ ধুয়ে নিন। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে গরম পানির ভাপ নিলে ব্ল্যাকহেডস দূর হবে দ্রুত।
দারুচিনি, লেবুর রস ও মধু> দারুচিনি যেমন খাবারের স্বাদ বাড়ায়, তেমনই এর মধ্যে স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্যগুণ রয়েছে। এটিতে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা ব্রণ এবং ব্ল্যাকহেডস দূর করতে সহায়ক। দারুচিনি পাউডার বানিয়ে তাতে মধু ও লেবুর রস দিয়ে ভালো করে মেশান। এবার ত্বকে প্রয়োগ করুন। এভাবে ১৫ মিনিট রেখে দিন। তারপর ধুয়ে ফেলুন। ডিমের সাদা অংশ ও মধু> ডিমের সাদা অংশে ভিটামিন ও অ্যামিনো অ্যাসিড রয়েছে, যা ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। ডিমের সাদা অংশে এক চামচ মধু মিশিয়ে মুখে ভালো করে লাগান। শুকিয়ে গেলে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি প্রতিদিন প্রয়োগ করুন। দেখবেন ত্বক পরিষ্কার ও উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।
ব্ল্যাকহেডস দূর করবে অ্যালোভেরা> ত্বকের যত্নে অ্যালোভেরার ব্যবহার বেশ পুরোনো। উপকারী এই ভেষজ আমাদের ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখার ক্ষেত্রে বেশ কার্যকরী। ব্ল্যাকহেডস দূর করতেও কাজ করে অ্যালোভেরা। প্রথমে অ্যালোভেরার পাতার ভেতরের শাঁসটুকু বের করে নিতে হবে। এবার তা চটকে নিয়ে যেখানে ব্ল্যাকহেডস আছে, সেখানে ভালোভাবে লাগাতে হবে। শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। এরপর পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। এভাবে প্রতিদিন ব্যবহার করতে পারলে ব্ল্যাকহেডস দূর হবে, পাশাপাশি বাড়বে ত্বকের উজ্জ্বলতা। তবে কারও কারও ত্বকে অ্যালোভেরা ব্যবহার করলে অ্যালার্জি দেখা দিতে পারে। এমন কোনো সমস্যা হলে অ্যালোভেরা এড়িয়ে চলুন।