দাম্পত্য সম্পর্ক মধুর করার উপায়!
পৃথিবীর সুন্দর সব সম্পর্কের মধ্যে অন্যতম হলো দাম্পত্য সম্পর্ক দুইজন অপরিচিত মানুষের হুট করে পরিচিত হওয়া, বন্ধুত্ব, খুনটুসি এবং মৃত্যু অবধি একে অপরকে আঁকড়ে বেঁচে থাকার লড়াই। তবে পৃথিনীর সব দাম্পত্য সম্পর্কই সুন্দর হয় না। যদি সুন্দর হতো তবে ডিভোর্স কিংবা বিচ্ছেদ হতো না। আমরা প্রত্যেকটা মানুষই আলাদা।
আলাদা সব চিন্তাধারা আমাদের। তবে দাম্পত্য শুরু হয় এক ভালো লাগা বা ভালোবাসা দিয়ে। কিন্তু হুট করে কেন সব ভালোবাসা উবে যায়? পানসে হয়! দেখুন, সম্পর্ককে আপনি স্বচ্ছ আয়নার সাথে তুলনা করতে পারেন। একটা আয়না যেমন রোজ পরিষ্কার না করলে একসময় সেখানে নিজের অবয়ব দেখা যায় না। ঠিক তেমনি একটি সম্পর্ককে প্রতিদিন যত্ন না করলে তা একসময় পরিত্যক্ত হয়ে ওঠে। তো চলুন আজকের আর্টিকেলে জেনে নেই —দাম্পত্য সম্পর্ক মধুর করার উপায়!
•সঙ্গীর ভালো শ্রোতা হয়ে উঠুন—আমরা অনেকে ভালো বক্তা হলেও শ্রোতা হতে পারি না। আমরা বলতে যতটা ভালোবাসি শুনতে ততটাই অপছন্দ করি। যেন, অন্যের কথা শোনাটা আমাদের সময়ের অপচয়। কিন্তু যদি দাম্পত্য সম্পর্ক সুন্দর, পরিপাটি ও মধুময় রাখতে চান, তবে নিজেকে একজন ভালো শ্রোতা হিসাবে গড়ে তুলতে। সঙ্গীর সকল কথা মনোযোগ সহকারে শুনতে হবে। কারণ অধিকাংশ মানুষ তার সঙ্গীকে অধীর আগ্রহ নিয়ে কথা বলে থাকে। সঙ্গী সেই কথার গুরুত্ব না দিলে তখন তা মনে বিরুপ প্রভাব ফেলে। তাই দাম্পত্য সম্পর্ক সুন্দর রাখার প্রথম শর্ত হলো সঙ্গীর ভালো শ্রোতা হওয়া।
•সঙ্গীর প্রশংসা করতে শিখুন—সব মানুষই নিজের কাজের বা নিজের প্রশংসা শুনতে বেশি পছন্দ করেন। বিশেষ করব প্রিয় জনের মুখে। আর এই প্রশংসা বিষয়টা দাম্পত্য জীবনকে সুখকর করতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তবে কেবল রুপের ময়, গুনেরও প্রশংসা করুন। ধরুন, আপনার সঙ্গী আপনার জন্য রান্না করেছে, কিন্তু খাবারটা অতোটা মজাদার হয়নি। আপনি তাকে তখন যদি বলেন, খাবার মজা হয়নি বা আগের চেয়ে খারাপ হয়েছে। তাতে তার মনে রিরুপ প্রভাব ফেলে। ভাবুন সে আপনার জন্য গরমে আগ্রহ নিয়ে রান্না করেছে। যত বিস্বাদই হোক, মুখে হাসি নিয়ে যদি বলেন মজা হয়েছে। তবে, তা সম্পর্কে জাদুর মতো কাজ করবে। আবার, ধরুন আপনার সঙ্গী একটি শাড়ি উপহার দিলো আপনাকে, সেই শাড়ির রঙ বা কোয়ালিটি হয়তো এতোটা ভালো না। এখন আপনি সেটা নিয়ে তাকে বললে, তখন সঙ্গী আপনাকে উপহার আনতে দ্বিধা করবে। এই ছোটো ছোটো বিষয়গুলো খুবই কাজে দেয়। একদিন সঙ্গীকে বলেই দেখুন, তোমাকে আজ সুন্দর লাগছে। দেখবেন সঙ্গী নিজেই আপনাকে মুগ্ধ করবে তার ভালোবাসায়।
•সঙ্গীকে শ্রদ্ধা করুন—অনেকে ভেবে থাকে, কেবল ভালোবাসার মাধ্যমেই দাম্পত্য সম্পর্ক সুন্দর হয়। যা একদমই ভুল। আপনি পাগলের মতো আপনার সঙ্গীকে ভালোবাসেন। অথচ, তাকে তার প্রাপ্য সম্মান দেন না, শ্রদ্ধা করেন না। তাহলে আপনার দাম্পত্য সম্পর্ক কখনোই ভালো হবে না। তাই দাম্পত্য সম্পর্ক সুন্দর রাখতে একে অপরকে শ্রদ্ধা করার বিকল্প নেই।
•সঙ্গীর মতামতের মূল্যায়ন করুন—আমাদের সমাজে দেখা যায়, সংসার পরিচালনা বা কোনো পরামর্শে নারীদের মতামত নিতে আগ্রহী নয়। দাম্পত্য জীবন দুইজন মানুষের জন্য হয়ে থাকে। তাই যদি একতরফা বার বার আপনার মতামত সঙ্গীর উপর চাপিয়ে দেন, তা সংসারে অশান্তি ঢেকে আনবে। তাই আপনার নিজের এক তরফা মতামত কখনো আপনার সঙ্গীর উপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবেন না। বরং সংসারে সুখ স্বাচ্ছন্দ্য বজায় রাখতে আপনার সঙ্গীর মতামতের যথাযথ মূল্যায়ন করুন।
•সঙ্গীকে সময় দিন—বেশির ভাগ দম্পতির অভিযোগ থাকে সঙ্গী সময় দেয় না। সারাদিন হয়তো আপনি অনেক ব্যস্ততায় কাটান। কিন্তু বাসায় ফিরে চেষ্টা করুন সঙ্গীর সাথে একান্তে সময় কাটাতে। যদি আপনি সঙ্গীর সাথে আড্ডা দেন, মুভি দেখেন, গান শুনেন বা গল্প করেন, তবে তা আপনাদের সম্পর্কের কাঠামো দৃঢ় করবে। দুজন কিছুটা সময় একান্তে কাটালে, দেখবেন সম্পর্কের অনেক ছোটখাটো সমস্যার সমাধান আপনারাই করে ফেলতে পারছেন। একে অপরকে সঠিক ভাবে বুঝতেও পারছেন।
•নিজ কাজের দায়ভার নিতে শিখুন—একসাথে বসবাস করতে গেলে সব সময় যে ভালো যাবে এমন নয়। অনেক সময় ঝগড়া বা খুনটুসিও হবে। বিভিন্ন সমস্যা হবে। তবে সমস্যা যাই হোক না কেন দ্রুত মিটিয়ে নিতে চেষ্টা করুন। কেবল সঙ্গীকে এক তরফা দোষারোপ করা থেকে বিরত থাকুন। যদি দাম্পত্য সম্পর্ক সুন্দর রাখতে চান তবে সঙ্গীর কাছে নিজের দোষ স্বীকার করুন, ক্ষমা চান এবং শক্তিকে বুঝতে দিন আপনি আসলে ইচ্ছে করে ভুল করেনি। দেখবেন তাহলে দিন দিন মনোমালিন্য হওয়া কমে গেছে।
•ছোটখাটো উপলক্ষগুলো উদযাপন করুন—দাম্পত্য সম্পর্ক মধুর রাখতে সামান্য কোন উপলক্ষ মিস করা যাবে না। হতে পারে সেটা আপনাদের প্রথম দেখা হওয়ার দিনটি, হতে পারে যেদিন আপনার সঙ্গী আপনাকে প্রপোজ করেছিলো অথবা যেদিন আপনারা একে অপরকে তুমি করে বলেছিলেন সেই দিনটি। উপলক্ষ যতোই ছোটো হোক না কেন আপনার সম্পর্কের মধুরতা বাড়াতে খুব কাজে দেবে।
•একে অপরের কাছে স্বচ্ছ থাকুন—বিশ্বাস সম্পর্কের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনার সঙ্গীর সেই বিশ্বাস অটুট রাখতে সব সময় একে অপরের কাছে স্বচ্ছ থাকুন। নিজেদের অনুভূতি, কষ্ট লাগা, চাওয়া-পাওয়া, প্রতিদিনের সকল বিষয় সঙ্গীর সাথে আলোচনা করুন, গল্প করুন। এইসব যতবেশি সঙ্গীর থেকে লুকোবেন সম্পর্কে ততবেশি দূরত্ব বেড়ে যাবে। তাই দু’জন দু’জনের কাছে স্বচ্ছ থাকুন। দেখবেন আপনাদের ছোট্ট সংসারটা কেমন স্বর্গে রূপান্তরিত হয়েছে।
•সম্পর্কে থার্ড পারসন প্রবেশ নিষিদ্ধ করুন—একটি সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার অন্যতম কারণ হলো থার্ড পারসন বা তৃতীয় ব্যক্তি। কোনো সমস্যা হলে সঙ্গীর সাথে মুখোমুখি বসে আলোচনা করুন। কোনো তৃতীয় ব্যক্তির পরামর্শ বা কথা শোনা হতে বিরত থাকুন।
•ঘরের কাজে সহায়তা করুন— দাম্পত্য সম্পর্ক মধুর করার জন্য একে অপরকে সহোযোগিতা করার বিকল্প নেই। হয়তো আপনারা দুইজনই বাইরে জব করেন, অথবা একজন করেন। কিন্তু, ঘরের কাজ একজনের উপরই করার দায়িত্ব থাকে। এই নিয়ম এখুনি পাল্টান। সঙ্গীকে নিজের প্রতিভা বিকাশ করতে দিন। সংসার দুইজনের হলে ঘরের কাজও দুইজনের। তাই দুইজনে ভাগ করে কাজ করুন বা হাতে হাতে কাজ করুন। এতে সম্পর্ক দৃঢ় হবে।
•সঙ্গীর সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ুন—দাম্পত্য সঙ্গী মানে সে আপনার জীবনসঙ্গী বা বন্ধু। তাই সঙ্গীর সাথে এমন সম্পর্ক গড়ুন যাতে সঙ্গী আপনাকে নিজের বন্ধু মনে করে। কেননা, একমাত্র মানুষ বন্ধুর সাথেই সকল কথা শেয়ার করতে স্বাচ্ছন্দ্যেবোধ করে। যখন আপনি সঙ্গীর বন্ধু হয়ে ওঠবেন, তখন আপনাদের সম্পর্কও অনাবিল সুন্দর হয়ে ওঠবে।
তাছাড়াও সম্পর্কে রোমাঞ্চ ধরে রাখতে আপনার সঙ্গীকে মাঝে মধ্যে চমক দিন। কারণ সারপ্রাইজড হতে প্রত্যেকটি মানুষই ভালোবাসে। মাঝে মাঝে উপহার দিন। দামী কিছু না হলেও একটি ফুল বা একটি কলম। তাকে বুঝিয়ে দিন সে আপনার কাছে কতোটা স্পেশাল। কারণে অকারণে আপনার প্রিয় মানুষটির কানে কানে বলুন ভালোবাসি কথাটি। ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি’ কথাটা একটা সম্পর্কে ভালোবাসার গভীরতা বাড়াই। সঙ্গী হয়তো জেদি, রাগী বা এখন আপনার সম্পর্ক বিষাদময়। ব্যাপার না। এখনই সঙ্গীকে গিয়ে জড়িয়ে ধরুন, তাতে দোষ যারই থাকুক। দেখবেন সম্পর্ক সুন্দর হয়েছে। আপনি একটু চাইলেই আপনাদের দুজনের জীবন রাঙিয়ে তুলতে পারেন ভালোবাসার শতরঙে, বাড়িয়ে তুলতে পারেন সম্পর্কের মিষ্টতা।
যাই হোক, আজকের মতো এখানেই বিদায় নিচ্ছি। আপনাদের দাম্পত্য জীবনের জন্য শুভকামনা। আর এই আর্টিকেলটি ভালো লাগলে অবশ্যই শেয়ার করবেন এবং এই ধরনের আরও আর্টিকেল পেতে অনুলিপির সাথেই থাকুন৷