অনুলিপি ডেস্কঃ আইপিএল ইতিহাসের এই প্রথমবার বাংলাদেশের তিন ক্রিকেটার সুযোগ পেয়েছে। তার মধ্যে মুস্তাফিজুর রহমান এবং সাকিব আল হাসান কয়েক বছর ধরেই সুযোগ পাচ্ছেন। যদিও গত বছর আইপিএলে খেলা হয়নি বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের। তবে এতোদিনেও আইপিএলের সবচেয়ে দামি বাংলাদেশি খেলোয়াড়ের রেকর্ড তারা ভাঙ্গতে পারেননি। এমনকি এবার সুযোগ পাওয়া তিন ক্রিকেটারের মূল্য একসাথে করেও সেই রেকর্ড এর সমান হবে না। সবচেয়ে দামি বাংলাদেশি খেলোয়াড়ের রেকর্ড হয়েছিলো ২০০৯ সালে। সেই রেকর্ড এখনো অক্ষত আছে। বিশ্বের ফ্রাঞ্চাইজি লীগ গুলুর মধ্যে আইপিএল অন্যতম। যার অন্যান্য লীগের সাথে তুলনা চলে না। আইপিএল এমন একটি লীগ যেখানে খেলোয়াড়রা খেলতে পারলে নিজেকে গর্ববোধ মনে করে। ঝাকঝমক ভাবেই প্রতিবছর এটি আয়োজন হয়ে থাকে। আইপিএল কে যদি আমরা সব লীগ থেকে ব্যয়বহুল মনে করি তাও আমরা ভুল করবোনা। এখানে একটি খেলোয়াড়কে যত টাকা দিয়ে কেনা হয়। অন্যান্য দেশের পুরো টুর্নামেন্ট চালিয়ে দিতে পারে।
এখন পর্যন্ত যার ১৫ টি আসর মাঠে গড়িয়েছে। শুরু থেকেই ভারতের এই লীগে খেলেছেন বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি ক্রিকেটার। আইপিএলের প্রথম আসরে সুযোগ পান বাংলাদেশের স্পিনার আব্দুর রাজ্জাক। প্রথম আসরে নিলামে ছিলেন মাশরাফি মোর্তজা এবং মোহাম্মদ আশরাফুল। কিন্তু সে নিলামে কোন ফ্রাঞ্চাইজি তাদের প্রতি আগ্রহ দেখায়নি। রয়্যাল চ্যালেঞ্জারস বেঙ্গালুরু কিনে নেয় শুধু আব্দুর রাজ্জাককে। সেই সময় রয়েল চ্যালেঞ্জার বেঙ্গালুর নেতৃত্ব দেন রাহুল দ্রাবি। তার দলে ৫০ হাজার ডলারে এই স্পিনার কে দলে নিয়েছিল। মাশরাফি মুর্তজা এবং মোঃ আশরাফুল দল পেয়ে যান দ্বিতীয় নিলামে। দল পেয়েই বাজিমাত করেন মাশরাফি এবং আশরাফুল। নিলামের শুরু থেকেই এক প্রকার কারাকারি শুরু হয় দুজনকে নিয়ে। সে সময়ের বলিউডের অন্যতম অভিনেত্রী জুহি চাওলা কলকাতা নাইট রাইডার্সের মালিক ছিলেন। আরেক অভিনেত্রী প্রীতি জিনতা মালিক ছিলেন পাঞ্জাব সুপার কিংসের। দুই অভিনেত্রীর মাঝে কারাকারি শুরু হয় মাশরাফিকে নিয়ে। সেই আসরে মাশরাফির ভিত্তিমুল্য ছিলো মাত্র ৫০ হাজার ডলার। কিন্তু নিলামের টানাটানি তে তার মূল্য পৌছায় ৬ লক্ষ ডলারে। বর্তমান হিসাবে যা ৬ কোটি টাকার বেশি।
এখন পর্যন্ত আইপিলে কোন বাংলাদেশি খেলোয়াড়ের জন্য এটাই সর্বোচ্চ রেকর্ড।
সাকিব মুস্তাফিজরা তার আশেপাশেও আর পৌছাতে পারেননি। সে আসরে মাশরাফি ছিলেন আসরের মূল্যের দিক দিয়ে সেরা তালিকায়। তবে টুর্নামেন্ট শুরুর পর সেই উত্তেজনা আর থাকেনি। মাত্র এক ম্যাচে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন সাবেক বাংলাদেশি অধিনায়ক। এরপর তাকে আর মাঠে নামায়নি কলকাতা নাইট রাইডার্স। একই আসরে মোহাম্মদ আশরাফুল ও সুযোগ পেয়েছিলেন। ভিত্তিমুল্য ৭৫ হাজার ডলারেই তাকে দলে ভিড়িয়েছিলো মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। তবে মাঠের খেলায় তিনিও আলো ছড়াতে পারেননি। এক ম্যাচ খেলে করেছিলেন সাকুল্যে দুই রান। এরপরেই শুরু হয় বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের যুগ। ২০১১ সালে তাকে দলে ভিড়িয়েছিলো কলকাতা নাইট রাইডার্স। নিলামে সাকিবের জন্য তারা খরচ করেছিল ৪ লাখ ডলার। বাংলাদেশের খেলোয়াড়ের মধ্যে এটা এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মূল্য। বাংলাদেশের সেরা ওপেনার তামিম ইকবাল খেলেছিল ২০১২ সালের আইপিএলে। পুনে ওয়ারিওর্স ৫০০০০ ডলারে তাকে দলে নিয়েছিল।
তবে টুর্নামেন্টের কোন ম্যাচেই মাঠে নামার সুযোগ পাননি তিনি। এরপর ২০১৪ সালে নিলামে উঠে সাকিব আল হাসান এর নাম। সেবার ২ কোটি ৮০ লাখ রুপিতে তাকে আবারো দলে নেয় কলকাতা নাইট রাইডার্স। এরপর চলে আসা যাক ২০১৬ সালে। ২০১৬ তে সুযোগ পান বাংলাদেশের কাঠার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমান। তাকে নিয়েও নিলামে কাড়াকাড়ি হয়েছিলো। সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের সাথে রয়্যাল চ্যালেঞ্জারস বেঙ্গালুরুও তাকে পেতে চেয়েছিলো। সেই কারাকারীর পর জয়ী হয় হায়দ্রাবাদ। মুস্তাফিজের ভিত্তি মূল্য ছিল 50 লাখ রুপি। পরে সেটা বেড়ে দাঁড়ায় এক কোটি 40 লাখ রুপিতে। সে বছর হায়দ্রাবাদ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পিছনে বড় ভূমিকা পালন করেছেন কাটার মাস্টার মুস্তাফিজ। এর পরের আসরেও একই দলে খেলেছিলেন তিনি। ২০১৮ সালে দল পাল্টিয়ে ফেলে মুস্তাফিজ। সেইবার মুম্বাই ইন্ডিয়ানসে যোগ দেন। নিলামে তার মূল্য উঠেছিলো ২ কোটি ২০ লাখ রুপি। ২০২১ সালে চলে যান আবার রাজস্থান রয়েলসে। এক কোটি রুপিতে দলে বেড়ায় এ কাটার মাস্টার মুস্তাফিজকে।
আরো পড়ুন: জেনে নিন উচ্চতা অনুযায়ী ওজন কত হওয়া উচিত
সর্বশেষ ২০২২ সালের নিলামে দিল্লি ক্যাপিটালসে যোগ দেন মুস্তাফিজ। নিলামে তার মুল্য ছিলো দুই কোটি রুপি। ২০১৮ সালে দল পাল্টান সাকিব আল হাসান। নিলামে দুই কোটি রুপিতে তাকে কিনে নেয় সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ। ৩ কোটি ২০ লাখ রুপিতে কলকাতায় ফিরেন সাকিব ২০২১ সালে। ২০২২ সালের আইপিএলে সুযোগ পাননি তিনি। বাংলাদেশী বেটার লিটন দাস ২০২৩ সালের আইপিএলে প্রথমবারের মতো সুযোগ পেয়েছেন। তাইতো লক্ষ কোটি ভক্তদের এখন চোখ লিটন দাসের উপর। প্রথমবারের মতো তাকে সহ ৩ জন বাংলাদেশি এবার আইপিএলে খেলবেন। কলকাতা নাইট রাইডার্স ৫০ লাখ রুপিতে তাকে দলে ভিড়িয়েছে। একই দলে খেলবেন সাকিব আল হাসানও। সাকিব খেলবেন দেড় কোটি টাকার বিনিময়ে। আগের দিল্লি ক্যাপিটালসে খেলবেন মুস্তাফিজুর রহমান দুই কোটি রুপিতে। আগের দল যেহেতু তাকে ছাড়েনি তাই তাকে আর নিলামে তুলতে হয়নি। পূর্বের মূল্যতেই চূড়ান্ত মুস্তাফিজুর রহমান।