গোপাল ভাঁড় কে যে কারণে ফাঁসির আদেশ দিয়েছিলেন নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা

গোপাল ভাঁড় ছিল মধ্যযুগের নদীয়া অঞ্চলের একজন প্রখ্যাত মনোরঞ্জনকারী ব্যক্তি। তার আসল নাম গোপাল চন্দ্র প্রামাণিক। গোপাল ছিলেন কৃষ্ণনগরের রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের সভাসদ। আসর জমাতে পটু ছিলেন। বুদ্ধির খেলা দেখিয়ে জয় করে নিতেন সবার মন। ভাঁড়ামি, মানে হাস্যকৌতুকে তো জুড়ি ছিলই না। তাই নামের সঙ্গে ভাঁড় জুড়ে গেল।
পুরো কৃষ্ণনগরের বিনোদনের গুদামঘর ছিলেন তিনি। তবে মানুষটার জীবনে কিন্তু দুঃখ ছিল। বাংলা ছাড়া হতে হয়েছিল তাঁকে। শোনো সে কাহিনি। ১৭৫৭ সাল। বাংলা, বিহার ও ওড়িশার নবাব তখন সিরাজউদ্দৌলা। নবাবের বিরুদ্ধে চারদিকে তখন ষড়যন্ত্র। পরিবারের লোকজন আর বন্ধুদেরও অনেকে হাত মিলিয়েছে ইংরেজের সঙ্গে। রাজা কৃষ্ণচন্দ্রও নবাবকে সিংহাসনচ্যুত করতে হাত মেলান ইংরেজদের সঙ্গে। কৃষ্ণনগরের সব সভাসদ সমর্থন দেয় রাজাকে; কিন্তু গোপাল দেননি। উল্টো গোপাল রাজাকে বোঝাতে গেলেন।
বললেন, ইংরেজরা গায়ে সুচ হয়ে ঢুকে ফাল হয়ে বের হবে। রাজা ও সভাসদরা গোপালকে নিয়ে হাসাহাসি করতে লাগল। মজা করে আরো বললেন রাজা, যদি গোপাল নবাবকে গিয়ে ভেংচি কেটে আসতে পারে তবেই শুধু ইংরেজদের পক্ষ ছাড়বেন। গোপাল কিন্তু সিরিয়াস। ছুটলেন মুর্শিদাবাদ। কিন্তু প্রাসাদরক্ষীরা কী আর গোপালকে ছাড়ে? শেষে উপায় না পেয়ে গোপাল এক রক্ষীর হাতে দিলেন কামড়। তবেই না গোপালকে ধরে নিয়ে যাওয়া হলো নবাবের কাছে।
শুনেটুনে নবাব বললেন, ‘কে তুমি? কোথা থেকে এসেছ?’ গোপাল প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে শুধু ভেংচি কাটতে লাগলেন। নবাব নির্দেশ দিলেন, ‘ওকে গারদে পোড়ো।’ আরো বললেন, ‘তোমার বিচার হবে আগামীকাল।’ এসবের মধ্যেই গোপাল মীরজাফরকে বললেন, ‘শোনো আমি এসেছিলাম তোমাদের সবার ষড়যন্ত্র নবাবের কাছে ফাঁস করে দিতে। কিন্তু আমি তা করব না। কারণ সব ফাঁস করে দিলে রাজা কৃষ্ণচন্দ্র বিপদে পড়ে যাবেন। নবাব তাঁকে সরিয়ে অন্য কাউকে ক্ষমতায় বসাবেন।
আরো পড়ুন: আপনার হাতে টাকা থাকবে না যে ৪টি বদ অভ্যাসের কারণে!
আমি চাই না কৃষ্ণচন্দ্র তাঁর ক্ষমতা হারাক। কারণ তিনি যে আমার অন্নদাতা, আমার রক্ষক।’ এসব শুনে মীরজাফর গেল ঘাবড়ে। নবাবকে গিয়ে দ্রুত গোপালের বিচারের আরজি জানাল। বলল, ‘গোপালকে ফাঁসি দেওয়া হোক।’ পরদিনই গোপালের ফাঁসির ব্যবস্থা করা হলো। কিন্তু গোপালের কোনো হেলদোল নেই। সে ভেংচি কেটেই চলেছে।
এবার নবাব চিন্তায় পড়ে গেলেন। ভাবলেন, এ তো উন্মাদ। তিনি গোপালকে মুক্তি দিয়ে দিলেন। গোপাল ফিরে এলেন কৃষ্ণনগরে। কিন্তু কৃষ্ণচন্দ্র কথা রাখলেন না। মনে খুব কষ্ট পেলেন গোপাল। ঠিক করলেন, আর যাবেন না রাজার দরবারে। রাতের অন্ধকারে সপরিবারে কৃষ্ণনগর ছেড়ে চলে গেলেন। এর পর থেকে গোপালকে কৃষ্ণনগরে আর কখনোই দেখা যায়নি।
বাংলাদেশেসহ বিশ্বের সকল খবর সবার আগে জানতে অনুলিপির সাথেই থাকুন।