কচু শাকের উপকারিতা ও অপকারিতা!

কচু শাক বাঙালী রসনা বিলাসে জনপ্রিয় এক পদ। এই কচু রাস্তায় আনাচে-কানাচে খুব অবহেলায় জন্মে। তবে, বেশ কিছু জাত আবার চাষ করতে হয়, প্রয়োজন হয় সঠিক পরিচর্যার।
আজকে আমরা জানব, কচুশাক কী? কচু শাকের পুষ্টি উপাদান! কচু শাকের ব্যবহার! কচু শাকের উপকারিতা ও অপকারিতা!
কচু হলো আর্কিয়া ( Araceae) গোত্রের এক রকমের কন্দ জাতীয় উদ্ভিদ। কচুকে মানুষ প্রাচীন কাল থেকে চাষ করে আসছে। কচু সাধারণত নানা জাতের হয়। তবে, বনে-জঙ্গলে অনাদরে জন্মানো কচুকে বলে বুনো কচু। বুনো কচুর অবশ্য অনেকগুলো জাত খাওয়ার উপযোগী। আবার, অনেকগুলো খুবই বিষাক্ত।
এছাড়াও খাবার উপযোগী বেশ কিছু জাত হলো— মুখী কচু, পানি কচু, পঞ্চমুখী কচু, পাইদনাইল, ওলকচু, দুধকচু, মানকচু, শোলকচু, ইত্যাদি। তবে, রাস্তার ধারে পাওয়া ছোট ছোট কচুকে বলা হয় গুড়ি কচু শাক বা কচু শাক। আমরা মূলত এই কচু শাক নিয়েই আলোচনা করবো। তবে সব ধরণের কচুর উপকারিতা প্রায় একই রকম, শুধু স্বাদেই ভিন্নতা পাওয়া যায়।
*কচুর পুষ্টি উপাদান: কচু এমন একটি উদ্ভিদ যার উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। কচুতে মূলত প্রধান উপাদান হিসাবে থাকে আয়রন। এছাড়াও কচু শাকে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, শর্করা, চর্বি, ক্যালসিয়াম ও খাদশক্তি পাওয়া যায়। এছাড়াও প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ সহ বিভিন্ন ভিটামিন উপস্থিত থাকে। থাকে বিভিন্ন খনিজ উপাদান। তবে, কচুতে অক্সালিক নামক এসিডের উপস্থিতি থাকায় তা গলায় বা হাতে লাগলে চুলকায়।
*কচু শাকের ব্যবহার: কচু শাক বা কচুকে কেবল সবজি হিসাবেই খাওয়া হয় না৷ এর কিছু কিছু প্রজাতি সৌন্দর্যবর্ধক হিসাবে টবে বা ছাদে কিংবা বাড়ির আনাচে-কানাচে লাগানো হয়। কেননা, অনেক প্রজাতর আছে বাহারি পাতা, আবার বিভিন্ন ঢংয়ের ফুল।
*কচু শাকের উপকারিতা :
১| রক্ত শূন্যতা দূর করে: আমরা জানি,কচু শাকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে। যা রক্তশূন্যতা দূর করতে বেশ কার্যকরী। আমাদের দেশের নারীরা বেশি রক্তশূন্যতায় ভোগেন। তাদেরকে চিকিৎসরা কচু শাক খাওয়ার পরামর্শ দেন৷ তবে, অবশ্যই এর সাথে লেবু বা টকজাতীয় কিছু খেতে হবে। তাহলেই পর্যাপ্ত উপকারিতা পাওয়া যাবে।
২|দাঁত, হাঁড় ও ক্ষয়রোগ প্রতিরোধ করে: কচু শাকে থাকা ক্যালসিয়াম, ম্যাংগানিজ, ম্যাগনেসিয়াম ও ফসফরাস আমাদের দাঁত ও হাঁড়ের গঠন ভালো রাখে এবং ক্ষয় রোগ প্রতিরোধ করেন। তাই, নিয়মিত কচুর শাক খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন ডাক্তাররা।
৩|কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে: কচু শাক কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। কেননা, কচু শাকে রয়েছে প্রচুর ফাইবার বা আঁশ। যা সহজে হজম করতে সহায়তা করে।
৪| ক্ষত সারায়: ভিটামিন সি এর অন্যতম উৎস কচু শাক। তাই কচু শাক খেলে লৌহ উপাদান শরীরে খুব সহজে আত্তীকরণ হয়। এছাড়াও এই ভিটামিন সি দেহের কোথাও কেটে গেলে তা দ্রুত সারায় অর্থাৎ ক্ষত সারায়।
৫|রাতকানা ও চোখের অসুখ সারায়: কচু শাকে আয়রনের পাশাপাশি প্রচুর ভিটামিন এ উপস্থিত থাকে। এই ভিটামিন এ রাতকানা, ছানি পড়াসহ চোখের নানাবিধ রোগের প্রতিকার করে। দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সহায়তা করে।
৬| উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখে: মূলত রক্তে কোলেস্টেরলের কারণেই উচ্চরক্ত চাপ দেখা যায়। তো, কচু শাক খেলে কোলেস্টেরল কমে এবং উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
৭|ক্যান্সার প্রতিরোধ করে: কচু শাকে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা বিভিন্ন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। বিশেষ করে কোলন ক্যান্সার ও ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকিও কমায়।
৮|গর্ভবতী নারীর আয়রন ও ভিটামিনের চাহিদা পূরণ করে: আমরা আগেই জেনেছি যে, কচু শাকে বিভিন্ন ভিটামিন, আয়রন ও খনিজ উপাদান থাকে। তো গর্ভবতী নারীদের প্রচুর পুষ্টির দরকার পড়ে। এই কচু শাক গর্ভাবস্থায় খেয়ে সেই চাহিদা অনেকটাই পূরণ হয়।
৯| অক্সিজেন সবারহ সচল রাখে: কচু শাকের অন্যতম একটি কার্যকরী ভূমিকা হলো এটি আমাদের দেহে অক্সিজেন সবারহ সচল রাখে। যেহেতু কচু শাকে আয়রন ও ফোলেট আছে, এইগুলো রক্তের পরিমাণ বাড়ায় এবং অক্সিজেন সংবহন করে পর্যাপ্ত। এছাড়া এতে থাকা ভিটামিন এ রক্তপাতের সমস্যা দূর করে।
১০| হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়: কচু শাকে থাকে পটাসিয়াম হৃদরোগ ও স্ট্রোকের সম্ভাবনা কমায়।
১১| হিমোগ্লোবিনের অভাব দূর করে: কচুশাক আমাদের শরীরের রক্তে হিমোগ্লোবিনের অভাব হলে তা দূর করে।
১২| চুল পড়া রোধ ও চুলের ভেঙে যাওয়া আটকায়: কচু শাকে ভিটামিন, আয়রন, প্রোটিনসহ বিভিন্ন উপাদান রয়েছে যা চুল পড়া রোধ করে এবং পাশাপাশি চুলের ভেঙে যাওয়া আটকায়।
১৩| ত্বক ভালো রাখে: কচু শাকে থাকা পুষ্টি উপাদান শরীর পুষ্ট রাখে, এছাড়াও শুক্র বৃদ্ধি করে। কচুর শাক কান, গলার রুক্ষতা দূর করে।
১৪|আমাশয় রোধ করে: যাদের আমাশয়ে সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত কচুশাক খেলে আমাশয় থেকে রেহাই পায়৷
১৫|পিত্তের সমস্যা দূর করে: কচু শাক পিত্তের প্রকোপ দূর করে। কচু শাকের সাথে জিরা মিশিয়ে খেলে এই উপকার পাওয়া যায়।
১৬|মায়ের দুধ বাড়াতে: সন্তান জন্মদানের পর দেখা যায় অনেক মায়ের পর্যাপ্ত দুধের উৎপাদন হয় না, সন্তান পর্যাপ্ত দুধ পায় না। তো কচু শাক খেলে মায়ের দুধের উৎপাদন বাড়াতে সহায়তা করে।
১৭|প্রসাবের সমস্যা দূর করে: অনেক সময় প্রসাবে জ্বালাপোড়াসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। এই কচুর শাক খেলে এই সমস্যা থেকে রেহাই মেলে।
আরো পড়ুন: ঈদে কেনাকাটা যে বিষয়গুলোতে সতর্ক থাকা জরুরি
*কচু শাকের অপকারিতা: কচু শাকের এত উপকারিতার মাঝে বেশকিছু অপকারিতাও রয়েছে। কচু শাকের অপকারিতা
*কচু শাকে অক্সালিক এসিড থাকে, যার জন্য কচু শাক খেলে গলা চুলকায়। তবে যদি রান্নার সময় লেবুর রস, ভিনেগার, তেঁতুল বা টকজাতীয় কোনো ফল ব্যবহার করা হয় তবে এই চুলকানির সমস্যা থেকে রেহাই মেলে।
* কচুতে অ্যালার্জির সমস্যা বাড়ায়। তাই যাদের এই সমস্যা রয়েছে তারা কচু শাক বা কচু জাতীয় কোনো কিছু না খাওয়াই ভালো।
* কচুশাক খেলে মাঝে মাঝে যে সমস্যাটা দেখা যায় তা হলো গ্যাসট্রিকের সমস্যা। যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা রয়েছে তারা কচু শাক না খাওয়াই উত্তম।
প্রিয় পাঠক এতক্ষণ আমরা জানলাম কচু শাকের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। আশাকরি আপনাদের কাজে লাগবে৷ তবে, কারো যদি কুষ্ট, রক্তবাহ, এলার্জি থাকে তারা কচুর শাক খাওয়া আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন। ধন্যবাদ।