তৃতীয় লিঙ্গের বা হিজরাদের জানাজা ও দাফন-কাফনের নিয়ম কী?

ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে আমরা যদি সচেতন থাকি, তাহলে হিজড়াদের জীবন আরো সুন্দর হয়ে উঠবে। মনে রাখতে হবে, এ বিশ্বজগৎ একমাত্র আল্লাহ তাআলারই খেয়াল-খুশি অনুযায়ী চলছে। ‘আল্লাহ, তিনি যা ইচ্ছা, যেমন করে ইচ্ছা সৃষ্টি করেন। [পবিত্র কোরআন—সুরা : শুরা, আয়াত : ৪৯]। তবে আল্লাহর সব ধরনের ইচ্ছা ও খেয়ালের পেছনে হেকমত ও তাৎপর্য আছে।
তিনি এমনি এমনি সব ইচ্ছা বাস্তবায়ন করেননি। তিনি একজনকে চোখ দেননি, এটা চোখওয়ালার জন্য একটি শিক্ষা, আল্লাহ বলছেন, তোমাকে আমি চোখ দিয়েছি, তুমি আমার সৃষ্টির সৌন্দর্য দেখতে পারছ; কিন্তু যে দেখতে পারে না তার কথা ভেবে দেখো, আমি তোমাকে কত করুণা করেছি। তেমনি আল্লাহ তাআলা একজনকে লিঙ্গ দেননি, আবার আরেকজনকে দিয়েছেন। যাকে দিয়েছেন, সে যেন তার লিঙ্গকে বৈধ পথে ব্যবহার করে, জেনা থেকে বেঁচে থাকে।
আর ভাবে, আমাকেও তো আল্লাহ লিঙ্গহীন করে বানাতে পারতেন। তাই এ দুনিয়ার সামান্য থেকে সামান্য, ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্র, কিছুর সৃষ্টিই মহান আল্লাহর হেকমতের বাইরে নয়। ‘তিনিই মহান সত্তা, যিনি মাতৃগর্ভে যেভাবে ইচ্ছা তোমাদের আকৃতি গঠন করেন। তিনি প্রবল পরাক্রমশালী এবং প্রজ্ঞাময়।’ [পবিত্র কোরআন, সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৬] আল্লাহ তাআলার কাছেও তাই বাহ্যিক আকার-আকৃতির কোনো মূল্য নেই।
আরও পড়ুন: কেয়ামতের যেসব আলামত সৌদি আরবে ইতিমধ্যে প্রকাশ পেয়েছে এবং পাবে
কারণ এ আকৃতি তার নিজের ইচ্ছায়ই হয়েছে, মানুষের এতে কোনো হাত নেই। হাশরের ময়দানে তিনি দেখবেন শুধু মানুষের আমল। [মুসলিম শরিফ, হাদিস নম্বর ৬৭০৮] মুসলিম তৃতীয় লিঙ্গ মারা গেলে তাদের গোসল দেওয়া, কাফন পরানো, দাফন করা ও জানাজার নামাজ পড়া বিষয়ে শরিয়তের বিধান সুস্পষ্ট। স্বাভবিক নারী-পুরুষ মারা গেলে যে নিয়ম-কানুন ও দোয়া-দরুদ পড়তে হয়, তৃতীয় লিঙ্গের বেলায়ও তা-ই করতে হয়।
তাদের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হলো-যে তৃতীয় লিঙ্গের বাহ্যিক অবয়ব পুরুষের মতো, মৃত্যুর পর তার লাশের ক্ষেত্রে পুরুষ মাইয়েতের বিধান প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ গোসল দেওয়া, কাফন পরানো, দাফন করা ও জানাজার নামাজসহ সবই পুরুষের মতো করতে হবে।
আর যে তৃতীয় লিঙ্গের অবয়ব নারী সদৃশ এবং তার মধ্যে মেয়েলি নিদর্শনই বেশি। তার মৃত্যুর পর উল্লেখিত সব ক্ষেত্রে নারী মাইয়েতের বিধান প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ গোসল দেওয়া, কাফন পরানো, দাফন করা ও জানাজার নামাজসহ সবই নারীর মতো করতে হবে।