ইসলামিক নিয়মে বিবাহ করার উপায়গুলো কী কী
রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম এর অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাবলি থেকে অন্যতম হচ্ছে বিয়ে, যা আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে একটি বিশেষ রহমত

ইসলামিক নিয়মে বিবাহ করার উপায়গুলো কী কী রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম এর অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাবলি থেকে অন্যতম হচ্ছে বিয়ে। যা আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে একটি বিশেষ রহমত। বিয়ে করা ইসলামে শরীয়তের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিধান। বিয়ে একটি অন্যতম হাতিয়ার, যার মাধ্যমে পুরুষ অথবা নারী আদর্শিক জীবন গঠন, চরিত্র, সামাজিক ও ধর্মীয় মর্যাদা জৈবিক চাহিদা সকল কিছুর পূর্ণতা পায়।
একটি ছেলে অথবা মেয়েকে পরিপূর্ণভাবে ইসলামের মধ্যে রাখতেই বিবাহ প্রথার জন্ম।ইসলামের যে কোন বিষয় মনের ইচ্ছা অনুযায়ী হয়ে থাকেন না। সবকিছু শরিয়া সম্মত হয়ে থাকে। তাই বিয়েও মনগড়া করা যাবে না ইসলামিক আইন মেনে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে পুরুষও নারীকে। তাহলে চলুন শরিয়াসম্মত ভাবে কিভাবে ইসলামিক নিয়মে বিবাহ করা যায় সেই উপায়গুলো জেনে নেই। ইসলামে বিয়ের যাবতীয় নিয়ম-কানুন এবং বিধান-শর্ত ও আনুসাঙ্গিক বিষয় নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলো।
১.পাত্র-পাত্রী নির্বাচন: ছেলে মেয়ের প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর। চতুর্দিক থেকে চারিত্রিক আক্রমণ হতে থাকে।
তাই সকল অভিভাবকদের উচিত ছেলে মেয়ে প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পর নজর রাখা। নিজের সন্তান যাতে যৌবনের তাড়নায় কোন খারাপ কাজে লিপ্ত না হয় সেদিকে খেয়াল রেখে বিভিন্ন কার্যকর নেওয়া উচিত। যদি কোনভাবেই আপনি ওই কাজের সফল না হতে পারেন তাহলে আপনার উচিত ছেলে মেয়েকে বিবাহ করিয়ে দেওয়া। যাতে সে হালাল উপায়ে তার যৌন চাহিদা মেটাতে পারে। এবং সমাজের বিভিন্ন খারাপ কার্যকলাপ থেকে মুক্তি পেতে পারে। আর যদি ছেলে মেয়ের তীব্র বিয়ের ক্ষুদা থাকা সত্ত্বেও অভিভাবকগণ বিয়ে না দেয়। এবং সে জৈবিক চাহিদা মেটাতে গিয়ে যে ধরনের অন্যায় কাজে লিপ্ত হবে।
হাদিসে এসেছে, সে পাপকে তার পিতা মাতার উপর বর্তাবে। আর অবশ্যই সন্তান যদি তার যৌবন কেহেফাজত করতে পারে। তাহলে অবশ্যই আপনি তার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারেন। একজন নারীকে বা পুরুষকে বিবাহ করার মাধ্যমে যেহেতু সে তার বাকি জীবনটা পরিচালিত করবে। তাই দেখেশুনে ভালো পরিবারের সাথে বিবাহ দেওয়া আপনার দায়িত্ব। হুটহাট করে সিদ্ধান্ত নেওয়া মুটেও উচিত নয়। আর রাসূল সাল্লাম বলেছেন, আমরা যখন বিয়ে করবে বা বসবে তখন যারা দ্বীনদার তাদেরকে প্রাধান্য দাও। পাত্র-পাত্রী নির্বাচনেরক্ষেত্রে লক্ষণীয় অনেক দিক রয়েছে।
সামাজিক, আর্থিক, ধর্মীয়, আচার-ব্যবহার, মন-মনন, যোগ্যতা শিক্ষা, গুণ, চরিত্র, খেদমত, মিযায, মানসিকতা শারীরিকগঠন, বুদ্ধিমত্তা, ভক্তি, রুচী, পরিবার, বংশ সৌন্দর্য, প্রভৃতি মানদণ্ডেপাত্র পাত্রী নির্বাচন করা যেতে পারে। এ সবের মধ্যে দ্বীনদারীর দিকটাপ্রাধান্য দিতে হবে।
২.মূল বিবাহ: পাত্র-পাত্রী নির্বাচন করার পর এবার বিবাহের পালা। উভয়ের অভিভাবকগণ মিলে একটি নির্দিষ্ট তারিখ ঠিক করবেন। ইসলামী শরীয়তে বিয়ের আগে কোন অনুষ্ঠান নেই। যদিও আমাদের সমাজে গায়ে হলুদ নামে একটি প্রথা রয়েছে। এই গায়ে হলুদের নামে আমাদের সমাজে অনেক অশ্লীলতা হয়ে থাকে। যেহেতু এই প্রথাটি ইসলামে নেই তাই আমাদের এটি পরিত্যাগ করা উচিত। এবং
বর এবং কনের উভয়ের বিয়ে নিয়ে সকল ধরনের প্রতিবন্ধকতা থেকে মুক্ত হতে হবে। বিয়ের মাঝে উভয়ের দ্বিমত থাকা যাবে না। দ্বিমত থাকলে আমাদের উচিত নয় তাদেরকে বিয়ে পরিয়ে দেওয়া।
৩.বিবাহের মোহর: মোহর বিবাহের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে পুরুষদেরকে বলেছেন তোমরা তোমাদের নারীদের মোহর বুঝিয়ে দাও। সর্বনিম্ন 10 দিরহামের কথা উল্লেখ রয়েছে। তাই ছেলে-মেয়ে উভয়ের সামর্থ্য অনুযায়ী মোহর দ্বারা উচিত। এমন মোহর ধরা উচিত নয় যা স্বামীর পক্ষে সারা জীবন আদায় করা সম্ভব নয়।
৪.ইজাব বা প্রস্তাবনা:অর্থাৎ এটা হচ্ছে মেয়ের পক্ষ থেকে তার কোন অভিভাবক ছেলের নিকট প্রস্তাব নিয়ে যাওয়া।যেমন আমি অমুক মেয়েকে তোমার নিকট বিয়ে দিলাম। এভাবে অন্য কিছু বলা যেতে পারে।
৫.কবুল বা গ্রহণ করা: কবুল বা গ্রহণ করা এটি হচ্ছে পরিবারের সম্মতিসূচক বাক্য। যেমন তারা বলতে পারে, কবুল, আলহামদুলিল্লাহ, অথবা আমি গ্রহণ করলাম,উভয় পরিবারের সম্মতিক্রমে অন্য কিছুও বলা যায়।
আরো পরুন: চাকমা বিবাহ বৈচিত্র্য!
৬.বিবাহ অনুষ্ঠান: এত বড় করে ধুমধাম অনুষ্ঠান করা ইসলামে উচিত নয়। যত ছোট পরিসরে বিবাহ করা যায়। বিয়ের দিন মেয়ের কোন খরচ নেই। ইসলামের শরিয়া অনুযায়ী যা খরচ করবে সব ছেলের পক্ষ করবে।
৭.ওলীমা: ওলিমার অনুষ্ঠান করার সুন্নত। এটাও সম্পূর্ণ ছেলের পক্ষ করবে। প্রত্যেকে নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী অনুষ্ঠান করবে। কোন ধরনের চাপ দেওয়া যাবে না। এ অনুষ্ঠান করার একমাত্র উদ্দেশ্য হতে হবে সুন্নাত আদায়। অনুষ্ঠান করে কোন ধরনের হাদিয়া নেওয়া যাবে না। এটার কারণে গরিবদের উপর অনেক চাপ পরে যায়। বিয়ের পর যেকোনো এক সময় এই অনুষ্ঠান করা যায়।
৮.যৌতুক: যৌতুক দেওয়া-নেওয়া ইসলামে হারাম। মেয়ের পক্ষ থেকে ইচ্ছা করে দিলে সেটা ভিন্ন বিষয়। কিন্তু আপনি ভিক্ষুকের নেয় খুজে নেওয়া ইসলামে হারাম।
সার্বিকভাবে ইসলামের এই সুন্দরনিয়ম ও অনুশাসন মতে বিবাহ সম্পন্ন হলে যেমন দাম্পত্য জীবনে শান্তি আসবে, তেমনি বিবাহ সংক্রান্ত মানবসৃষ্ট বহু জটিলতা অপসারিত হবে ইনশাআল্লাহ।