সন্দেশ

নবীজি (সা.) দেখতে কেমন ছিলেন

আজ আমরা আলোচনা করবো নবীজি (সা.) দেখতে কেমন ছিলেন এবং নবীজি (সা.) কে নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো তিনি আমাদের জন্য অনুকরণীয় আদর্শ রেখে গেছেন...

নবীজি (সা.) দেখতে কেমন ছিলেন? দুনিয়ার সর্বকালের সেরা মানব হিসেবে যিনি স্বীকৃত, তিনি হলেন আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহম্মদ (সা.)। জীবনের সর্বক্ষেত্রে তিনি আমাদের জন্য অনুকরণীয় আদর্শ রেখে গেছেন। মহান রাব্বুল আলামিন আসমান, জমিন, গ্রহ-নক্ষত্রসহ আমাদের সবাইকে সৃষ্টি করেছেন, সেই মহান সৃষ্টিকর্তা তাঁর প্রিয় বন্ধুকে কিভাবে সৃষ্টি করেছেন, তিনি দেখতে কেমন ছিলেন, প্রতিটি মুমিনেরই তা জানতে ইচ্ছা করে। আজকে আমরা হাদিসের আলোকেই জানার চেষ্টা করব যে আমাদের প্রিয় নবীর দৈহিক গঠন কেমন ছিল।

চেহারা মোবারক: হযরত মোহাম্মদ সাঃ ছিলেন অত্যন্ত সুন্দর মনের মানুষ। তাকে দেখতে যতটা সুন্দর দেখাতো, ঠিক তেমনি তার ভেতরটা অনেক সুন্দর ছিল। তিনি এমন সুন্দর ছিলেন যার সাথে কোন কিছু তুলনা করা বোকামি হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু সালামের সৌন্দর্য তার কাছে আকাশের চাঁদও হার মানতো।

বিশিষ্ট তাবেয়ী আবদুল্লাহ ইবনে কাআব (রহ.) বলেন,আমি আমার পিতা থেকে বর্ণনা করতে শুনেছি তাবুক যুদ্ধে না যাওয়ার ঘটনা। কাআব ইবনে মালিক (রা.) বলেন,আমি একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সালাম করলাম। রাসূল সাল্লাহু (সা) খুশিতে তার চেহারার ঝলমল করে উঠলো। তাঁর চেহারা আনন্দে এমনই টগবগ করত, মনে হতো যেন চাঁদের একটি টুকরা। তাঁর মুখমণ্ডলের এ অবস্থা থেকে আমরা তা বুঝতে পারতাম।’। অন্য আরেকটি হাদিস রয়েছে। হাদিসটি হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বর্ণনা করেন,তিনি বলেন, রাসুল (সা.)- এর দুই পা ছিল মাংসপূর্ণ। চেহারা ছিল অত্যন্ত সুন্দর। আমি তারপরে আর কোন দ্বিতীয় ব্যক্তিকে এরকম দেখিনি।

উচ্চতা মোবারক: রাসূল সাল্লাল্লাহু সাল্লাম এমন এক উচ্চতার নবী ছিলেন। যাকে দেখামাত্রই মানুষ ভালবাসত। তবে মদিনার কিছু ইহুদি নাসারারা তাদের বাপ দাদার ধর্ম অনুসরণ করে রাসূলের উপর আক্রমণ করত। কিন্তু লোকালয়ে ঠিকই তারা নবীজিকে ভালোবাসতো। তার দিক দিয়ে তিনি ছিলেন মাঝারি গড়নের। মানুষকে বেশি লম্বা দেখালে সুন্দর দেখা যায় না। আবার বেশি খাটো হলেও সুন্দর দেখা যায় না। তাইতো রাসূল সাল্লাল্লাহু সাল্লাম কে আল্লাহ তাআলা সুন্দর করে মাজার এই ধরনের নবী ও রাসুলহিসেবে প্রেরণ করেছেন উচ্চতার দিক থেকে তিনি ছিলেন মাঝারি গড়নের। বেশি লম্বাও না, আবার একদম খাটো না। যে উচ্চতা ও শারীরিক গঠন একজন মানুষকে আকর্ষণীয় করে তোলে, তিনি ছিলেন ঠিক সেই গঠনেরই। বারাআ ইবনে আজিব (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) ছিলেন মাঝারি গড়নের। (বুখারি, হাদিস : ৩৫৫১)

চোখ মোবারক: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চোখ ছিল অত্যন্ত সুন্দর। যার মত চোখ দুনিয়ায় আর কারো নেই। একজন সাহসী ব্যক্তির চোখ যেমন থাকা প্রয়োজন ঠিক তেমনি ছিল। তাঁর চোখের শুভ্রাংশের রক্তিমতা তাঁর চোখের সৌন্দর্যকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছিল।

বিখ্যাত সাহাবী জাবের ইবনে সামুরা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মুখ বেশ দীর্ঘ ও প্রশস্ত ছিলো। লাল বর্ণ ছিল তার চক্ষুদ্বয় ,এবং পায়ের জঙ্ঘা ছিল শীর্ণকায়। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৬৪৬)

দাড়ি মোবারক: বিশিষ্ট সাহাবী জাবির ইবনে সামুরাহ (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, মুহাম্মদ (সা) দাড়ি এবং চুল মোবারকের সামনের কিছু অংশ সাদা হয়ে গিয়েছিল। তিনি যখন তার চুলে তেল মালিশ করতেন তখন তার চোখ দেখা যেত না। যখন নবীজির চুল এলোমেলো হয়ে যেত তখন চুল দেখা যেত। তার চেহারা ছিল সূর্য চন্দ্রের মত উজ্জ্বল। আমি তাঁর পিঠের উপরিভাগে কবুতরের ডিমসদৃশ নবুয়তের মোহর দেখেছি। এটির রং ছিল তাঁর গায়ের রঙের মতো।

হাত মোবারক: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাতগুলো ছিল অত্যন্ত সুন্দর। সারা হাতে ছিল গোশতে ভরপুর। দুনিয়াতে মানুষ তার বডিকে সিক্স প্যাক বানানোর জন্য জিম সেন্টারে গিয়ে শারীরিক ব্যায়াম করে। কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু (সা) কে আল্লাহ তায়ালা জন্মগতভাবেই তাদের চেয়ে সুন্দর দেহের অধিকারী করে দিয়েছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম এর সেবক আনাস (রা.) বলেন,রাসুল (সা.)-এর হাত গোশতে পূর্ণ ছিল। তাঁর পরে আমি কোনো লোককে এমন দেখিনি। আর রাসুল (সা.)-এর চুল ছিল মাঝারি ধরনের, অধিক কোঁকড়ানোও না, অধিক সোজাও না।

আরো পড়ুন: প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর সংক্ষিপ্ত জীবনী

রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লামের হাত পা গুলো দেখতে শক্ত দেখালেও তার হাত পা ছিল অত্যন্ত নরম। রাসূল সাল্লাল্লাহু সালামের সাথে দীর্ঘ সময় পার করে দিয়েছেন হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু। আমি রাসেলের কাছ থেকে কোনদিন খারাপ আচরণ পাইনি। আনাস (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) ছিলেন শুভ্র উজ্জ্বল বর্ণের। রোদে গেলে আমাদের শরীর থেকে দুর্গন্ধযুক্ত ঘাম বের হয়। কিন্তু রাসূল সাঃ যখন ঘেমে যেতেন। তখন তার ঘাম মোবারক নেওয়ার জন্য সাহাবিদের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলত। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু (সা.) এর ঘাম যেন মুক্তার মতো। তার ঘামে ছিল সু-ঘ্রান। সাহাবীরা আতরের পরিবর্তে নবীজির ঘাম মোবারক ব্যবহার করত। আনাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু আরো বলেন, হাঁটার সময় সব সময় নিম্নগামী হয়ে চলতেন। সামনের দিকে ঝুঁকে চলাফেরা করতেন। এমনকি তার হাতের তালু এতটাই নরম ছিল যে, নরম কাপড় বা রেশমকেও হার মানাত। রাসুল সাঃ এর শরীরের যে সুগন্ধ পাওয়া যেত মিশক ও আম্বরের মধ্যেও সে ঘ্রাণ পাওয়া যেত না।

পা মোবারক: পা গুলো তার হাতের ন্যায় সুন্দর ছিল। তাঁর মাথা থেকে পা পর্যন্ত পুরো দেহই যেমনটা মানানসই হওয়া প্রয়োজন, ঠিক তেমনই ছিল। হাতের মতো তাঁর পাও ছিল সুন্দর। তাঁর মাথা থেকে পা পর্যন্ত পুরো দেহই যেমনটা মানানসই হওয়া প্রয়োজন, ঠিক তেমনই ছিল। তার সেবক আনাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম ততটা শুকনো ছিলেন না যতটা শুকনো দেখতে খারাপ দেখা যায়। পা থেকে মাথা পর্যন্ত তার শরীরে মাংস পরিপূর্ণ ছিল। তিনি আরো বলেন, আমার এ জীবনে তার আগে এবং পরে তার মত আর কোন ব্যক্তি দেখিনি। তার হাতের তালু বলেছিল কিছুটা প্রশস্ত। সর্বশেষ কথা হলো, রাসূল সাল্লাল্লাহু সালাম এমন একজন ব্যক্তি ছিলেন যার সাথে অন্য কারো আর তুলনা হয় না। এবং তাকে নিয়ে বর্ণনা করলেও শেষ হবে না কারণ, তিনি যে আল্লাহ তায়লা প্রিয় বন্ধু। মুসলিম উম্মার শ্রেষ্ঠ নবী ও রাসূল।

Back to top button

Opps, You are using ads blocker!

প্রিয় পাঠক, আপনি অ্যাড ব্লকার ব্যবহার করছেন, যার ফলে আমরা রেভেনিউ হারাচ্ছি, দয়া করে অ্যাড ব্লকারটি বন্ধ করুন।