বাচ্চার গলায় হঠাৎ কিছু আটকে গেলে তৎক্ষণাৎ যা করতে হবে।
বাচ্চার গলায় হঠাৎ কিছু আটকে গেলে আমাদের তখন কি করতে হবে তা নিয়ে আজকের আলোচনা আমরা অনেক সময় এই সমস্যায় পরি আর কি করবো বোজতে পারি না ...

অনুলিপি ডেস্কঃ ছোট শিশুদের সব কিছু মুখে দেওয়ার অভ্যাস একটা সহজাত প্রবৃত্তি। আপনি আপনার সন্তানকে সারাক্ষণ চোখে চোখে রাখতে পারবেন না, শিশুরা এটা ওটা মুখে দেয় তা-ও সবটুকু নজরে রাখা সম্ভব নয়। কিন্তু আপনি আগে থেকে সচেতন থাকতে পারেন এবং কোন ধরনের দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে তার সতর্ক ব্যবস্থাপনা ঘরে রাখতে পারেন। শিশু যদি ধারালো কিছু গিলে ফেলে বা শ্বাসনালীতে কোনো জিনিস আটকে যায় তাহলে এখনই চিকিৎসা সহায়তা নিন। কিছু জিনিস আছে শিশুরা খেলেও মলের সঙ্গে বের হয়ে যায়। কিন্তু যদি আপনার শিশুর দম বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে কার্ডিও-পালমোনারি রিসাসিটেশন (সিপিআর) এবং প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত থাকুন। আর একটু অসাবধান হলেই মুখে দেওয়া এই বস্তুটি শ্বাসনালিতে আটকে গিয়ে ঘটাতে পারে মারাত্মক দুর্ঘটনা। তবে এ ধরনের দুর্ঘটনা যত দ্রুত শনাক্ত করা যায় শিশুর জন্য ততই মঙ্গল।
দেরি না করে চলুন জেনে নেয়া যাক বাচ্চার গলায় কিছু আটকে গেলে তৎক্ষণাৎ যা করবেন- বাচ্চা একদম ছোট্ট বা ২ থেকে ৩ বছর বয়স হলে করণীয় বাচ্চাকে উল্টে নিজের বাম হাতের ওপর শোয়ান। পিঠের দিকটা একটু উঁচু হয়ে থাকবে এবং মুখের দিকটা নিচে। এবার আপনার ডান হাতের তালু দিয়ে বাচ্চার পিঠের ওপরের অংশে কাঁধের কাছে আস্তে আস্তে চাপড় মারুন। এতে মুখ দিয়ে গলায় আটকে যাওয়া খাবার বেরিয়ে আসবে। কীভাবে বোঝা যায় গলায় কিছু আটকালো> প্রথমত ঘটনার ইতিহাস সংগ্রহ করতে হবে। কোনো কিছু খেয়ে ফেলল কি না সে বিষয়ে সন্দেহ থাকতে হবে। কৃত্রিম দাঁতের ক্ষেত্রে দেখা যায় বেশি বৃদ্ধরা অনেক সময় রাতে ঘুমের মধ্যে হয়তো খুলে রাখতে ভুলে যান। রাতে হয়তো গিলে ফেলেন। এটি হয়তো আর ডাক্তারকে বলতে চান না। ডাক্তার সন্দেহবশত এক্স রে করালে দেখা যায় অন্ননালিতে কৃত্রিম দাঁত আটকে গেছে। বাচ্চাদের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটে। মা- বাবা কেউই বাচ্চা যেসব জিনিস নিয়ে খেলে সে বিষয়ে বলতে চান না। এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে কেউ কেউ উল্টো বলেন, না না আমার ছেলে / মেয়ে খুব শান্ত, ও কিছু মুখে দেয় না । কিন্তু বিষয়টি শিশু শান্ত বা অশান্ত, তার ওপর নির্ভর করে না। স্বভাবসুলভভাবেই শিশুরা এ সময় বিভিন্ন জিনিস মুখে নেয়, গিলে ফেলে, নাকের মধ্যে ঢোকায়, কানের মধ্যে ঢোকায়। এটি অস্বাভাবিক বা অতি দোষের কিছু নয়। বড়দের ক্ষেত্রে বিষয়টি অসাবধাণতা বশত হলেও শিশুরা কাজটি শিশুসুলভ স্বাভাবিক আচরণ থেকেই করে থাকে।
প্রতিকার: যদি গিলে ফেলা বস্তুটি আপনি খালি চোখে দেখেন এবং মনে করছেন বের করতে পারবেন, তাহলে হাত বা সহায়ক কোন কিছু দিয়ে তা বের করার চেষ্টা করুন। যদি মনে হয় তা বের করা কঠিন, বা বের করতে গিয়ে বাচ্চা কষ্ট পাচ্ছে, সেক্ষেত্রে ডাক্তারের শরনাপন্ন হোন। যদি বাচ্চা কাশি দেয়, তবে তাকে আরো জোরে কাশি দেয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করুন। অনেক সময় এটা কাজে দেয়। যদি বাচ্চা জ্ঞান হারিয়ে ফেলে বা অধিক কষ্টের ভঙ্গি করে, তবে দেরী না করে যে কোন হাসপাতালের জরুরী বিভাগে নিন। নবজাতক বা শক্ত খাবারে অভ্যস্ত বাচ্চার ক্ষেত্রে বাচ্চাকে কোলে নিয়ে পিঠে হালকা চাপড় দিতে থাকুন। দমবন্ধ অবস্থা সিরিয়াস না হলে এই পদ্ধতি ভাল কাজ করে। তবে বাচ্চার দমবন্ধ অবস্থা বেশ জোরালো বা সিরিয়াস হলে (যেমন বাচ্চা শ্বাস না নেয়া বা সাড়া না দেয়া) নিচের পদ্ধতি অনুসরণ করুন: বাচ্চাকে আপনার হাতের উপর উল্টো করে নিন, যাতে তার মাথা নিচের দিকে আপনার হাতের মুঠোয় থাকে, আর তার দেহ আপনার কনুইয়ে থাকে। চেয়ারে বসে আপনার হাতকে আপনার উরুর উপর বা কোন বালিশ দিয়ে সাপোর্ট দিন। বাচ্চার মাথা নিচের দিকে থাকবে। এরপর বাচ্চাকে তার পিঠে মোটামুটি জোরে ৫ বার চাপড় দিন যা হাতের শক্তিকে পিঠ থেকে মাথার দিকে প্রবাহিত করবে। কতটা জোরে দিবেন এটা আপনি নিজে ঠিক করুন। এতে যদি বাচ্চার শ্বাসনালি পরিষ্কার না হয় তাহলে বাচ্চা কাঁদবে না বা শব্দ করবে না। সেক্ষেত্রে বাচ্চাকে হাতে উল্টো করে নিন, তার বুকের হাড় যেখানে ভি আকৃতিতে চামড়ার সাথে মিশেছে সেখানে ৫বার আঙ্গুল দিয়ে চাপ দিন।
প্রতিরোধ: এই বিপদ থেকে বাচ্চাকে রক্ষার সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হলো এসব ক্ষুদ্র জিনিসগুলো বাচ্চার হাতের নাগাল থেকে দূরে রাখা। অনেক সময় এটা করা সম্ভব হবে না, বিশেষ করে যখন আপনার বাচ্চা খেলে এবং খেলনা ভাঙতে বেশি আগ্রহী। এক্ষেত্রে তার উপর ক্রমাগত নজরদারি করাই ভাল বিকল্প। আপনার শত সতর্কতা সত্ত্বেও বাচ্চা কোন কিছু গিলে ফেলতে পারে। হতে পারে এটা আপনার বা বাসার অন্য কারও চোখের সামনে বা অগোচরে। কিছু ক্ষেত্রে আমাদের খাদ্যনালী এধরনের বস্তু গিলে ফেলতে পারে, আর কিছু ক্ষেত্রে শিশু গলায় আটকে দমবন্ধ হওয়ার পরিস্থিতির শিকার হতে পারে। যদি শিশু অসুস্থতা ছাড়াই হঠাৎ কাশতে শুরু করে এবং তার মুখে দেয়ার অভ্যাস সম্পর্কে আপনি অবগত থাকেন, তাহলে মোটামুটি নিশ্চয়তাসহ ধরে নিন বাচ্চা এমন কিছু গিলে ফেলেছে যা তার করার কথা না।
আরো পড়ুন: ঠোঁটের কালচে ভাব দূর করার একদম সহজ উপায় তাও আবার ঘরে বসেই
গলার কোনো কিছু আটকালে কী করবেন> গলায় কোনো কিছু আটকালে তা নিজে নিজে বের করার চেষ্টা করা উচিত নয়। তাতে বিপত্তি বাড়বে। গলায় কিছু আটকে আছে সন্দেহ হলে সঙ্গে সঙ্গে মুখে কোনো কিছু খাওয়া বন্ধ করে দিতে হবে। প্রয়োজনে হাসপাতালে ভর্তি করে স্যালাইন দিয়ে রাখতে হবে। সেই সঙ্গে একজন নাক কান গলা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। বিষয়টি নিশ্চিত হলে মুখের ভেতর দিয়ে সেটি বের করে আনতে হবে। অনেক সময় এ জন্য অজ্ঞান করার দরকার হয়। বের করতে দেরি হলে জটিলতা দেখা দিতে পারে। তবে অন্ননালির নিচের দিকে আটকালে অনেক সময় বুক কেটে বের করতে হয়। গলার যে স্থানটি আটকে যায়> অন্ননালি বা ইসোফেগাসের শুরুতে যে স্ফিংটার বা স্থিতিস্থাপক পথবন্ধনী থাকে সেখানটায়। সাধারণত বড় জিনিস যেমন: পয়সা, কৃত্রিম দাঁত এই অংশে আটকায়। ইসোফেগাসের নিচের অংশে। এই অংশে সাধারণত ছোট জিনিসগুলো আটকায় যেমন- হাঁড়, কাঁটা ইত্যাদি। তবে কোনো বস্তু কোথায় আটকাবে তা বলা মুশকিল।
যেকোনো স্থানে যে কোনোটি আটকাতে পারে। তবে অন্ননালির যে অংশগুলো বেশি সরু কিংবা আঁকাবাঁকা সেই সব অঞ্চলে এ ধরনের জিনিস বেশি আটকায়।