স্বাস্থ্য

ভ্রমণে বমি হওয়া থেকে বাঁচতে যা করবেন।

আমরা অনেকেই ভ্রমণে করতে গিয়ে বিপদে পরে জাই কারণ অনেকেই গারিতে বমি করা নিয়ে বিপদে পরি, আজ আমরা জানবো ভ্রমণে বমি হওয়া থেকে বাঁচতে যা করনিয়

অনুলিপি ডেস্কঃ ভ্রমন করা অনেকের কাছে আনন্দদায়ক হলেও। অনেকের কাছে আবার বিরক্তের কারণও বটে। কারণ ভ্রমন করার সময় দূরের পথ হলে অনেক সময় গাড়িতে অবস্থান করতে হয়। বমি ব্যাপারটা হচ্ছে শরীরের একটা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। পেট যখন বুঝতে পারে সেখানে হজমের অনুপযোগী কোন বস্তু পাঠানো হয়েছে, তখন তা মস্তিষ্কে সিগন্যাল পাঠায় এবং মস্তিষ্ক তখন পাকস্থলী পরিষ্কার করার জন্য আপনাকে বমি করতে বাধ্য করে। গাড়ি চড়ার কারনে বমি হওয়া পুরোটাই মানসিক সমস্যা। আমাদের মস্তিষ্কে গন্ধ পেলে হরমোন ক্ষরনের সিগন্যাল পাঠায়। গাড়ির ধোঁয়ার কারনে আতংকগ্রস্থ মানুষের ব্রেইন চিন্তা করে পেটে কিছু রয়েছে এবং আইডেন্টিফাই না করতে পেরে বিভিন্ন হরমোন ক্ষরণ শুরু করে দেয়। অর্থাৎ বাজে গন্ধের কারণে বমি হতে পারে। গাড়িতে চড়লে অনেকেরই মাথা ঘোরে ও বমি হয়। এ সমস্যার কারণে কোথাও ভ্রমণকালে গাড়িতেই অসুস্থ হয়ে পড়েন অনেকেই। এ সমস্যাকে মূলত মেডিকেলের ভাষায় বলা হয় ‘মোশন সিকনেস’। এ ধরনের সমস্যা অনেকেই এড়িয়ে যান। ফলে দীর্ঘদিন এরকম সমস্যা নিয়েই অনেকেই যাতায়াত করেন। এ কারণে কেউ কেউ দূরের যাত্রাকে ভয়ও পান।

বাস, ট্রেন বা লঞ্চ ইত্যাদি যেকোনো যানবাহনে দীর্ঘসময় ভ্রমণ করলে অনেকেরই বিভিন্ন শারীরিক অস্বস্তি দেখা দেয়। যেমন- মাথা ঝিম ঝিম করা, মাথা ঘোরা, মাথা ব্যথা করা, বমিবমি ভাব লাগা বা বমি হওয়া ইত্যাদি। অনেকসময় দেখা যায় যে এসব শারীরিক অস্বস্তির জন্য ভ্রমণের আনন্দটাই মাটি হয়ে যায়। এমনকি অনেকে এই সমস্যার কারণে এসব যানবাহনে ভ্রমণ থেকে বিরতও থাকেন। যাত্রাপথের এই শারীরিক অস্বস্তি মোশন সিকনেস বা গতিজনিত অসুস্থতা নামে বহুল প্রচলিত। মোশন সিকনেস কেন হয়? আসলে গতি ও জড়তার ফলে মস্তিষ্কে সমন্বয়হীনতার বাহনগুলোতে বমির সমস্যা হয়ে থাকে। অন্তঃকর্ণ আমাদের শরীরের গতি ও জড়তার ভারসাম্য রক্ষা করে। যখন কেউ কোনো যানবাহনে চলাফেরা করেন তখন অন্তঃকর্ণ মস্তিষ্কে খবর পাঠায় যে সে গতিশীল। তবে চোখ বলে ভিন্ন কথা। কারণ তার সামনের বা পাশের মানুষগুলো কিংবা গাড়ির সিটগুলো থাকে স্থির। আমাদের চোখ আর অন্তঃকর্ণের এই সমন্বয়হীনতার কারণেই মোশন সিকনেস হয়। এছাড়া অ্যাসিডিটি, অসুস্থতা কিংবা গাড়ির ধোঁয়া কিংবা বাজে গন্ধের কারণেও গাড়িতে বমি হতে পারে।

মোসন সিকনেস প্রতিরোধে কী করণীয়?
১। যাত্রাপথে বাস, নৌকা, গাড়ি বা উড়োজাহাজ ইত্যাদি যানবাহনের সামনের আসনের দিকে না তাকিয়ে রাস্তার দিকে তাকিয়ে প্রাকৃতিক শোভা উপভোগ করুন। এতে গতিজনিত ভারসাম্য ও দৃষ্টির মাঝে সমন্বয়হীনতা বহুলাংশে কমে যাবে। এছাড়া একদম পিছনের সিটে বসা থেকে বিরত থাকবেন এবং যানবাহন যেদিকে যাবে, তার বিপরীত দিকে মুখ করে অর্থাৎ আপনার আসনে উল্টো হয়ে বসবেন না।
২। যাত্রা শুরুর আগে বা যাত্রা পথে বেশি ফ্লেভারযুক্ত খাবার, মশলাযুক্ত ঝাল খাবার, কোমল পানীয়, চিপস, কেক, সিগারেট, পান-সুপারি যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন। খেতে ইচ্ছা করছে না এমন খাবার গাড়িতে ওঠার আগে খাবেন না। ৪-৫ ঘণ্টার বেশি ভ্রমণকাল না হলে যাত্রাপথে খালি পেটে থাকা সবচেয়ে ভালো। তবে এর চেয়ে দীর্ঘ যাত্রাকাল হলে যাত্রা শুরুর আগে বা মাঝপথে হালকা সহজপাচ্য কিছু খাবার খাওয়া যেতে পারে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন পেট পুরে খাওয়া না হয়ে যায়। বেশি করে পানি পান করুন। পাশাপাশি লেবু, বড়ই, পেয়ারা বা অন্য টক খাবার খাওয়া যেতে পারে।

৩। লবঙ্গ: ১ চা চামচ লবঙ্গের গুঁড়ো ১ কাপ পানিতে ৫ মিনিট সিদ্ধ করুন। ঠাণ্ডা হয়ে গেলে আস্তে আস্তে এটি পান করুন। আপনার যদি এর স্বাদ কটু লাগে তবে এর সঙ্গে ১ চা চামচ মধু মিশিয়ে নিন। এ ছাড়া ১-২ টি লবঙ্গ কিছু ক্ষণ চিবিয়ে নিন। এটি সঙ্গে সঙ্গে বমি বমি ভাব দূর করে দেবে।
৪। যাদের এ সমস্যা আছে তারা গাড়ির উল্টো দিকের সিটে কখনো বসবেন না। কারণ উল্টোদিকে বসলে এতে বমিভাব বেশি হয়। চেষ্টা করবেন গাড়ির সামনের দিকে বসার। কারণ পেছনে বসলে গাড়িকে বেশি গতিশীল মনে হয়, ফলে দ্রুত ভারসাম্য নষ্ট হয় ও মোশন সিকনেস দেখা যায়।
৫। চেষ্টা করবেন জানালার পাশে বসার ও জানালা যেন খোলা থাকে। এসি পরিবহন হলে এক্ষেত্রে অবশ্য কিছু করার নেই। আর জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকার চেষ্টা করুন। এতে মোশন সিকনেস হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। বমি করার কথা চিন্তা করবেন না এতে বমির ট্রিগার হতে পারে। আপনার পাশে সহযাত্রী থাকলে তার সঙ্গে গল্প করুন, কথা বলুন। তবে খেয়াল রাখবেন অবশ্যই যাত্রাপথে কারো দেওয়া কোন খাবার গ্রহণ করবেন না। এতে বিপদ হতে পারে ও আপনার যাত্রা অনিরাপদ হতে পারে।

আরো পড়ুন: প্লাস্টিকের বোতল পানি পান করলে হতে পারে যেসব ক্ষতি

৬। চোখ বন্ধ রাখতে পারেন কিংবা ঘুমিয়ে পড়ুন। যাত্রার আগের দিন ঠিকমতো ঘুম হওয়া জরুরি। অনেক সময় ঠিকভাবে ঘুম না হওয়ার কারণে মাথাব্যথাও বমির কারণ হতে পারে।
৭। বমিরোধে কিছু সাধারণ ওষুধ সঙ্গে রাখতে পারেন। বাজারে জয়ট্রিপ নামে পাওয়া যায়। অথবা অনডেনসেট্রন জাতীয় ওষুধ গাড়িতে ওঠার আগে ও খাবার আগে খেয়ে নিতে পারেন। ডমপেরিডনজাতীয় ওষুধও খাওয়া যেতে পারে। তবে যে কোনো ওষুধ খাওয়ার আগে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নিন।
৮। জিরা: জিরা আরেকটি উপাদান যা আপনার বমি বমি ভাব নিমিষে দূর করে দিবে। কিছু পরিমাণ জিরা গুঁড়ো করে নিন, তারপর সেটি খেয়ে ফেলুন। মুহূর্তের মধ্যে বমি বমি ভাব দূর হয়ে যাবে।
৯। ভ্রমণের সময় ব্যাগে আপেল, জলপাই, আদা কুচি, পুদিনাপাতা, বিটলবণ, কমলা, লেবু ইত্যাদি রাখতে পারেন। এগুলো মোশন সিকনেস কমাতে সাহায্য করে।
১০। অন্য যাত্রীকে বমি করতে দেখলে অনেকসময় নিজেরও বমি আসতে পারে। এজন্য কেউ বমি করলে সেদিকে না তাকিয়ে থেকে নিজে খানিকটা পানি বা টকজাতীয় খাবার খেয়ে নিন।

Back to top button

Opps, You are using ads blocker!

প্রিয় পাঠক, আপনি অ্যাড ব্লকার ব্যবহার করছেন, যার ফলে আমরা রেভেনিউ হারাচ্ছি, দয়া করে অ্যাড ব্লকারটি বন্ধ করুন।