ঘরোয়া ভাবে দাগমুক্ত ত্বক পেতে যা করবেন!
মানুষ প্রাচীনকাল হতেই সৌন্দর্যপিপাসুম। নিজের মুখের ত্বকে ব্রণ ও ব্রণের দাগ কোনো মানুষের পছন্দ নয়। সবাই চায় দাগহীন কোমল ত্বক। তাই রূপচর্চার জন্য নিত্যনতুন প্রোডাক্টের চাহিদাও যেন দিন দিন বাড়ছে। তবে বাজারে পাওয়া প্রোডাক্টগুলো কেনার সামর্থ্য অনেকের থাকে না, আবার অনেক প্রোডাক্টেই থাকে বিভিন্ন রাসায়নিক কেমিক্যাল। কিন্তু, প্রাকৃতিক উপাদানে ঘরের জিনিস দিয়ে আপনি চাইলে ত্বকের যত্ন করতে পারেন। আজকে আমরা আলোচনা করবো— ঘরোয়া ভাবে দাগমুক্ত ত্বক পেতে যা করবেন!
বেশিরভাগ সময়ই মুখে দাগ হবার অন্যতম কারন হলো ব্রণ। এছাড়াও বিভিন্ন কারণে মুখে দাগ হতে পারে। বিশেষ করে রোদে পোড়া দাগ, বয়সের ছাপ, ইত্যাদি।
১) মুলতানি মাটি : মুলতানি মাটি বেশ ভালো একটি পরিষ্কারক। আমাদের মুখের ত্বকে অতিরিক্ত তেলের কারণে ব্রণ এর সমস্যা দেখা দেয়। তো মুলতানি মাটি এই তেল দূর করে ব্রণ ও ব্রণের দাগ হতে মুক্ত রাখে। এইজন্য আপনি পানি দিয়ে মুলতানি মাটি পেষ্ট বানিয়ে নিতে পারেন। এরপর মুখে লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন এবং ধুয়ে ফেলুন। এভাবে সপ্তাহে ৩-৪ দিন মুলতানি মাটি ব্যবহার করলে ভালো ফল পাবেন। এছাড়াও মুলতানি মাটি রোদে পোড়া দাগ দূর করে।
২) শসার রস : শসা খুবই উপকারি একটি সবজি বা ফল। যা খেলেও উপকার পাওয়া যায়,আবার ব্যবহার করলেও উপকার পাওয়া যায়। মুখের তৈলাক্ততা বা দাগ দূর করতে শসার রস অনেক কাযর্কর। সরাসরি শশার রস দিয়ে মুখ ধুয়ে পরিষ্কার করা যায়। আবার চাইলে,আইস কিউব বানিয়ে মুখে লাগাতে পারেন। এছাড়াও শশার রস দিয়ে স্ক্রাব তৈরি করে নিতে পারেন। এক্ষেত্রে শসার রস দিয়ে স্ক্রাব তৈরি করার জন্য এর সাথে চালের গুড়াঁ মিশিয়ে নিতে হবে। যদি আপনার মধুতে এ্যালার্জি না থাকে, তবে ২-৩ ফোটা মধুও মিশিয়ে নেওয়া যায়। আর এই স্ক্রাব সপ্তাহে ২ বার ব্যবহার করলে ব্ল্যাকহেডস ও হোয়াইটহেডস দূর হয়। তবে খেয়াল রাখবেন মুখে ব্রণ থাকলে স্ক্রাব ব্যবহার করা উচিত নয়।
৪) কাঁচা হলুদ এবং চন্দনের ফেস প্যাক : কাঁচা হলুদ ও চন্দন মুখের ত্বককে দাগমুক্ত রাখার জন্য খুবই উপকারী। দাগ দূর করতে সমপরিমান কাঁচা হলুদ ও চন্দন কাঠের গুঁড়ো পানি দিয়ে পেষ্ট বানিয়ে নিন। এরপর, মুখের দাগ বা ব্রণের ওপর এই পেস্টি লাগিয়ে ১০-২০মিনিট রাখুন। শুকিয়ে যাওয়ার পরে ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এটি শুধু মুখের দাগ ও ব্রণ দূর করে এমন না। সেইসাথে ত্বক উজ্জ্বল করে।
৫) আপেল এবং মধু দিয়ে ফেস প্যাক : আপেল ও মধুর মিশ্রণও ব্রণ বা মুখের দাগ দূর করার জন্য খুবই কার্যকর। এক্ষেত্রে প্রথমে আপেলের পেষ্ট বানিয়ে নিন,এরপর এতে ৪-৬ ফোটা মধু মিশিয়ে নিন। ভালো করে মিশানো হলে এ মিশ্রণটি ১০-২০ মিনিট ত্বকে লাগিয়ে অপেক্ষা করুন। তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এটি দাগ দূর করতে সাহায্য করবে সাথে ত্বকের টানটান ভাব বজায় রাখবে।সপ্তাহে ৫-৬ বার প্যাকটি ব্যবহার করা যাবে।
৬) তুলসি পাতার রস : আয়ুর্বেদিক গুণ সম্পন্ন তুলসি পাতার নানাবিদ উপকারিতা রয়েছে। তেমনি মুখের দাগ বা ব্রণের জন্যও তুলসী পাতা খুবই উপকারী। সরাসরি তুলসি পাতার রস বের করে শুধুমাত্র ব্রণ আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে রাখলে ভালো ফল পাওয়া যায়। তবে শুকানোর পরে হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। এতে তুলসী পাতার কার্যকারীতা অনেকাংশে বেড়ে যায়।
৭) চন্দনের ফেস প্যাক: চন্দনের ব্যবহার প্রাচীনকাল হতে হয়ে আসছে। চন্দনের প্যাকটি বানাতে যে উপকরণ গুলো লাগবে- চন্দন কাঠের গুঁড়ো, গোলাপজল ও লেবুর রস। প্রথমে চন্দন কাঠের গুঁড়োর সাথে গোলাপজল মিশিয়ে পেষ্ট বানাতে হবে। এরপরে এতে ২-৩ ফোটা লেবুর রস মিশিয়ে নিতে হবে এবং ত্বকে লাগিয়ে নিতে হবে। শুকিয়ে গেলে কুসুম গরম পানিতে ভালো করে ম্যাসাজ করে মুখ ধুয়ে নিন। তবে অনেকের ত্বকে গোলাপজল এডজাষ্ট হয় না। সেক্ষেত্রে তারা গোলাপ জলের পরিবর্তে মধু ব্যবহার করতে পারেন। আর এই প্যাকটি সপ্তাহে ৩-৪ দিন ব্যবহার করতে পারেন।
৮) দারুচিনি গুঁড়ো ও গোলাপ জলের ফেস প্যাক : দারুচিনি একটি মশলা হলে এটি রূপচর্চায় বেশ কার্যকরী একটি উপকরণ। দারুচিনি ও গোলাপজলের প্যাক ব্রণ, ব্রণের দাগ বা মুখের দাগ দূর করে। এক্ষেত্রে প্যাক বানাতে, প্রথমে দারুচিনি গুঁড়োর সাথে গোলাপজল মিশিয়ে পেষ্ট বানিয়ে নিন। এরপর এই পেষ্ট ব্রণ বা দাগের ওপর লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলুন। এতে ব্রণের সংক্রমণ রোধ হবে, চুলকানি দূর হবে ও ব্যাথা অনেকাংশ কমে যাবে। নিয়মিত গোলাপজল ব্যবহার করলে ব্রণের দাগ দূর করতে সাহায্য করে।
৯) ডিমের সাদা অংশ : ডিমের সাদা অংশ ত্বকের জন্য অনেক উপকারী। প্রতিদিন রাতে ডিমের সাদা অংশ ঘুমাতে যাওয়ার আগে ব্রণ আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে সারারাত রাখতে পারেন। অথবা এর সাথে ২-৩ ফোটা লেবুর রস মিশিয়ে লাগিয়ে রেখে আধ ঘণ্টা পর ধুয়ে ফেলতে পারেন। এটি আপনার ত্বকের খসখসে ভাব দূর করবে
১০) পেঁপে, চালের গুঁড়ো ও লেবুর রস : স্ক্রাবিং ত্বকের যত্নে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি ত্বক পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। ব্রণ বা দাগ হবার অন্যতম কারণ হলো অপরিষ্কার ত্বক। এক্ষেত্রে পাকা পেঁপের এক কাপ পরিমান পেষ্ট নিয়ে এর সাথে এক টেবিল চামচ লেবুর রস ও প্রয়োজন মত চালের গুঁড়ো মিশাতে হবে। মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে কিছু সময় অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলুন। পেঁপের পরিবর্তে ঘৃতকুমারীর বা এলোভেরার রস ও ব্যবহার করতে পারেন। মিশ্রণটি সারা শরীরে ও লাগাতে পারেন। ২০-২৫ মিনিট রেখে গোসল করে ফেলুন।
১১) মুলতানি মাটি ও নিমের প্যাক : ব্রণ বা দাগ দূর করতে নিম পাতা অনেক কার্যকর। ৫-৬ টা নিম পাতা পেষ্ট করে নিন।এর মধ্যে মুলতানি মাটি ও অল্প গোলাপ জল মিশিয়ে পাতলা করে প্যাক বানিয়ে নিন মুখে লাগিয়ে শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।এটি ত্বকের তৈলাক্তভাব ও ব্রণ দূর করে।
১২) পুদিনা পাতা : ব্রণ বা দাগ দূর করার আরেকটি কার্যকরী উপাদান হলো পুদিনা পাতা। অতিরিক্ত গরমে যে ব্রণ ও ফুসকুড়ি হয় তা দূর করতে ফ্রেস পুদিনা পাতা পেষ্ট বানিয়ে ব্রণের ওপর লাগিয়ে ২০-২৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।এটি ব্রণ দূর করতে অনেক সাহায্য করে।
এছাড়াও ব্রণ বা দাগ থেকে মুক্তি পেতে প্রতিদিন ৯-১০ গ্লাস পানি পান করুন। তেলযুক্ত বা ফাষ্ট ফুড জাতীয় খাবার পরিহার করুন।রাতের খাবারের পর যেকোনো ধরনের মৌসুমি ফল খান। এটি ত্বক সতেজ রাখবে। বাইরে থেকে বাসায় ফিরে ফেস ওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।হালকা গরম পানি দিয়ে স্টীম নিতে পারেন। এতে ত্বক পরিষ্কার হয়ে যাবে। অনেকেরই একটি বাজে অভ্যাস থাকে নখ দিয়ে ব্রণ খোটানোর। এটি পরিহার করতে হবে। এতে ব্রণের অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যাই।ব্রণ থাকা অবস্থায় মেকআপ করা যাবে না।
প্রিয় পাঠক, ওপরের বর্ণিত প্যাক বা টিপসগুলো মেনে চললে অনেকটাই দাগ বা ব্রণের সমস্যা হতে মুক্তি পাবেন। তাছাড়াও এগুলো ঘরোয়া ও প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি বলে এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ভয় থাকে না। তবে যদি বহুদিন ধরে ব্রণের বা দাগের সমস্যায় ভুগে থাকেন, তাহলে খুব দ্রুত অভিজ্ঞ ডাক্তারের শরনাপন্ন হোন। কেননা, অনেক সময় হরমোনাল সমস্যার জন্যও ব্রণ বা মুখে দাগ হতে পারে। যাই হোক, আজকের মতো এখানেই শেষ করছি ।নতুন নতুন টিপস পেতে অনুলিপির সঙ্গেই থাকুন।
বাংলাদেশেসহ বিশ্বের সকল খবর সবার আগে জানতে অনুলিপির সাথেই থাকুন।