কবির ছন্দে কবিতায় কবিতা
কবির ছন্দে কবিতায় কবিতা
কবিতা সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ একটি শাখা। সকল কালের, সকল দেশের, সকল জাতির, সকল ভাষায় কোনো না কোনোভাবে কবিতার চর্চা হয়ে আসছে যুগে যুগে। যারা কবিতা লিখে থাকেন খুব স্বাভাবিকভাবেই তারা একই চিন্তায় বিস্তার করেন না। আর সেজন্য, কবিতাকে তারা সংজ্ঞায়িত করেন তাদের মনের ভাষায়, মনের কথায়, ব্যক্তিগত কোনো চিন্তার প্রেক্ষিতে। এই জায়গা থেকে বলাই যায়- কবিতা ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে তার স্বকীয়তা বহন করে চলে। তাই কোনো কবির কাছেও কবিতার সংজ্ঞা জানতে চাওয়া বিষয়টি পাবলো নেরুদার ভাষায় কোনো মহিলার কাছে তার বয়স জানতে চাওয়ার মতো। তবে কবিতা সম্পর্কে একটি কথা এরকম বলাই যায় যে- “কবিতা হলো কোনো কবির সৃষ্ট এমন এক ধরনের শিল্প যা কবির উপলব্ধি থেকে আগত এক বিশেষ এবং চমৎকার বহিঃপ্রকাশ”। তবে আজকের বিষয় কবিতা বিশ্লেষণ নয় আজকের বিষয় কবির ছন্দে কবিতায় কবিতা!
দুটি প্রেমের কবিতা:
পাথর
ভাবলাম আর বুঝলাম!
জীবন থেকে শিখলাম;
কী?
একটা সময় চলে যেতে হয়
দুই গাল ভরে কাঁদলাম।
হাত ধরে ধরে বললাম!
গুণকীর্তন করলাম ;
কার?
যে আমার প্রথম বেদনা
দূরে দূর আজ চললাম।
কতবার সব বুঝলাম!
ভুলগুলো মেরে ফেললাম;
কেন?
ভালোবাসি বলে কিছুই বলিনি
অভিমানগুলো বকলাম।
কত লোকছড়া কাটলাম!
একা একা বলে হাসলাম ;
তো?
একবার তবু হাসতে পারতে
এত করে আমি চাইলাম।
কবিতাকে শুধু চাইলাম!
পথ চেয়ে বসে রইলাম;
কেন?
একবার তুমি সুযোগ দেবে
বৃথা আশাই করলাম।
ভেজা চোখেই আমি রইলাম!
ব্যর্থতা বুঝে নিলাম;
কীসের?
চাওয়াগুলো যখন আকাশে আকাশে
পাখি হয়েও উড়লাম।
তুমি পাথর আজ বললাম!
তাও মনে মনে পুড়লাম;
তারপর?
এটাও আমার অভিমান ছিল
নিজেকেই তির মারলাম।
এরপরও বেঁচে থাকলাম!
স্বপ্নে খুঁজতে লাগলাম;
সেকি?
তাও তুমি বিরক্তই
তাই স্বপ্নকে মেরে ফেললাম।
ভালোবেসে যেতে লাগলাম!
সেই স্বপ্নের পিছু ছুটলাম;
তাই?
স্বপ্নবিহীন জীবিত মানুষ
মৃত্যুর স্বাদে ভুগলাম।
(কবিতা হলো আত্মা থেকে আত্মাতে সংযোগ স্থাপনকারী, যা একটি মন অথবা উভয় মনকে গেয়ে শুনায়- বেনামি)
আরও পড়ুন: বই এবং বই পড়া!
ফুল
বলে গেলে ফুল
হয়ে গেলে ফুল
ফুল হয়ে বেঁচে রইলে;
তুমিই সে ফুল
হৃদয়ে হৃদয়ে
হেসে হেসে গেঁথে রাখলে।
সাদা জবার
সাদা সাদা সাজে
তুমি বাস্তব হলে;
সেই সাজে আমি
বার বার ভাসি
বার বার রাখি আগলে।
চার পাপড়ির
রঙ্গন ফুলে
লালে লালে আমি শেষ;
এর চেয়ে তুমি
ভীষণ মনোহরা
ভাবতে হলো না বেশ।
কালো গোলাপের
তাৎপর্যরা
অনেক দীর্ঘ সময়;
তারচেয়ে তোমার
কেশ রহস্য
রুপাঞ্জল না হয়।
অপরাজিতার
গাঢ় নীল জানি
তোমাকে বিসর্জিতা;
সেই নীলকণ্ঠরা
বার বার বলে
তোমার কাছে বৃথা।
হলুদ ফুলের
ভীষণভাবে
তোমার প্রতিচ্ছবি;
এরূপ তোমার
চোখে পড়ে পড়ে
ভুলে গেছি আজ সবই।
(কবিতা কবির অনুভূতির এমন এক বহিঃপ্রকাশ যা কবির অভ্যন্তরীণ ও ব্যক্তিগত বিশ্বাস থেকে আসে এবং পাঠক সেটি নিজের হিসেবে গ্রহণ করে থাকে- স্যালভাটোর কোসিমোডো)
কবিতা শৈল্পিক যোগাযোগের অন্যতম সুন্দর মাধ্যম যা অসম্ভব শ্রুতিমধুর। কালের বিবর্তনে কবিতা আজ রাজসভা থেকে বেরিয়ে কোথায় বিস্তৃত এবং কতভাবে কতখানি সৌন্দর্য নিয়ে বিস্তার করছে তা গত শতাব্দীর কবিদের কবিতা পড়লেই বুঝা যায়। আর সবচেয়ে বড়ো বিষয় কবিতাকে সৌন্দর্যের একটিমাত্র দৃষ্টকোণ থেকে সংজ্ঞায়িত করতে আমরা অপার।
কবিতাকে ভালোবাসুন আর নিজেকে, জাতিকে, দেশকে তথা পুরো পৃথিবীকে কবিতার মাধ্যমে পড়তে থাকুন।
তানজীভ সারোয়ার
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়।