স্বাস্থ্য ও লাইফস্টাইল

হার্ট অ্যাটাকের এক মাস আগে থেকেই শরীর যে ৮ টি গোপন সিগনাল ও প্রাথমিক চিকিৎসা

হার্ট অ্যাটাক একটি ভীতিকর বিষয়। যার একবার হার্ট অ্যাটাক হয়ে যায় তাকে প্রায় সারাজীবনই বেশ সতর্কভাবে জীবনযাপন করতে হয়। হার্ট অ্যাটাক এক নীরব ঘাতক। যে কেউ যেকোনো সময় এর শিকার হতে পারেন। শরীরচর্চা না করা, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যগ্রহণ ও জীবনযাপনে অনিয়ম হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়। এর লক্ষণগুলো জানা থাকলে একটি জীবন হয়তো বাঁচিয়ে দেওয়া সম্ভব। সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে হার্ট অ্যাটাকের কিছু লক্ষণের কথা তুলে ধরেছে টাইমস অব ইন্ডিয়া।

১).শ্বাসকষ্ট: ফুসফুসে পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেন এবং রক্ত সরবরাহ না হলে এই ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। হার্টের সমস্যা থাকলে ফুসফুসে রক্ত চলাচল কমে যায়। আর শ্বাসকষ্ট বা শ্বাস ছোট হয়ে আসার মতো সমস্যা দেখা যায়।
২).অস্বাভাবিক রকমের শারীরিক দুর্বলতা: রক্তপ্রবাহ কমে গেলে এবং রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্ত হলে এমনটা হয়। রক্তের শিরা-উপশিরাগুলোতে চর্বি জমে বাধা সৃষ্টি করলে এবং মাংসপেশী দুর্বল হয়ে পড়লে হৃদরোগের প্রধানতম এই লক্ষণটি দেখা দেয়।
৩).বমি, বদহজম, তলপেটে ব্যথা: বমিভাব, বদহজম, বুক হৃৎপিণ্ডে জ্বালাপোড়া করা বা তলপেটে ব্যথাও অনেক সময় হার্ট অ্যাটাকের পূর্ব লক্ষণ হতে পারে। সুতরাং এই লক্ষণগুলো দেখা গেলেও হৃদরোগের ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করুন।
৪).ঠাণ্ডা বা ফ্লু: হার্ট অ্যাটাকের শিকার অনেককেই এক মাস আগে থেকে ঠাণ্ডা-সর্দি বা ফ্লু-তে আক্রান্ত হতে দেখা গেছে।
৫).বক ব্যথা: বুক, বাহু, পিঠ এবং কাঁধে ব্যাথা অনুভূত হলে দ্রুত ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। বুকে ব্যথা এবং সংকোচন হৃৎপিণ্ডের অসুস্থতার একটি বড় লক্ষণ।
৬).ঝিমুনি: দেহে রক্তের প্রবাহ কমে গেলে ঝিমুনিও দেখা দেয়। মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ কমে গেলে ঝিমুনির সৃষ্টি হয়।
৭).ঠাণ্ডা ঘাম: রক্তপ্রবাহ কমে গেলে দেহে ঘাম ঝরলে স্যাঁতসেতে ও ঠাণ্ডা ভাব অনুভূত হবে।
৮).হতাশা বা চিন্তা: মানসিক বিপত্তি ছাড়াও দেখা দেবে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যাও। হার্ট অ্যাটাক,ক্ষুধামান্দ্য থেকে শুরু করে নিদ্রাহীনতা, উচ্চরক্তচাপ, মাথাব্যথা, বহুমূত্র এমনকি হৃদ্‌রোগও দেখা দিতে পারে অতিরিক্ত হতাশা ও দুশ্চিন্তার কারণে। অনেকেরই ‘টেনশন হেডেক’ বা অতিরিক্ত মাথাব্যথা দেখা দেয়। যার ফলে আপনার ঘাড় ও চোখের ব্যথাও হতে পারে।

হার্ট অ্যাটাকের প্রাথমিক চিকিৎসা:
১).রোগীর মুখে কোনো খাবার দেয়া যাবে না। বুকে প্রচণ্ড ব্যাথা অনুভূত হবার সঙ্গে সঙ্গে রোগীকে সটান করে বিছানায় শোয়াতে হবে। এরপর সে আঁটসাট কোনো জামা পরা থাকলে তা ঢিলে করে দিতে হবে এবং যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে যেতে।
২).এই সময়ে রোগীর জীবনের প্রতিটি মুহূর্তই মহামূল্যবান। তাই যা-ই করার দ্রুত করতে হবে। তবে অতি দ্রুত কিছু করতে গিয়ে ভুল করলে রোগীর জীবন আরো শঙ্কটে পড়তে পারে। এই সময়ে রোগীকে একা ফেলে রাখা যাবে না। তার পাশে থাকতে হবে এবং চিকিৎসক না আসা পর্যন্ত তার প্রতিটি লক্ষণের ওপর নজর রাখতে হবে। তবে রোগীকে নিয়ে ঘরে বসে থাকাটা সবচেয়ে বিপজ্জনক।
৩).হাসপাতালে নিয়ে যাবার পথে রোগীর মুখে একটি অ্যাস্পিরিন জাতীয় ওষুধ দেয়া যেতে পারে। তবে তা রোগীকে চুষে বা চিবিয়ে খেতে হবে।
৪).রোগী যদি বেশি ঘামতে থাকে তাহলে তার জিবের নিচে এক চামচ গ্লুকোজ দেয়া যেতে পারে। কিন্তু ভুলেই কোনো ঠাণ্ডা এবং মিষ্টি পানীয় তার মুখে দেয়া যাবে না।
৫).রোগীর যদি শ্বাস নিতে কষ্ট হয় এবং শ্বাস ছোট হয়ে যায় তাহলে তাকে আধা শোয়া অবস্থায় বসিয়ে কাশি দেয়ার চেষ্টা করাতে হবে।

আরও পড়ুন: কিডনি রোগের ঝুঁকিতে বিশ্বে ১০ নাম্বার বাংলাদেশ

৬).রোগী অচেতন হয়ে গেলে এবং কোনো সাড়া না দিলে সিপিআর’র সাহায্য নিতে হবে। সিপিআর হলো হাত দিয়ে বুকে হালকা চাপের সৃষ্টি করা এবং মুখ দিয়ে রোগীর মুখে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থা করা।
৭).প্রাথমিক চিকিৎসার ফলাফলের ওপর নির্ভর না করে রোগীকে এমন কোনো হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে যেখানে আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন আইসিইউ আছে এবং পৃথক কার্ডিও বিভাগ আছে।
৭).স্থানীয় কোনো ডাক্তারের চেম্বারে গিয়ে সিরিয়ালে নাম না লিখিয়ে সরাসরি ভালো কোনো হাসপাতালের জরুরি বিভাগে রোগীকে ভর্তি করাতে হবে।
৮).এ সময় কোনো অবৈজ্ঞানিক এবং কুসংস্কারপূর্ণ চিকিৎসা রোগীর জীবনের জন্য হুমকি হিসেবে প্রমাণিত হতে পারে। তাই এই সময়টাতে আপনজনের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বিচক্ষণতার সঙ্গে প্রতিটি পদক্ষেপ নিন এবং তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেয়া ব্যবস্থা করুন।

Back to top button

Opps, You are using ads blocker!

প্রিয় পাঠক, আপনি অ্যাড ব্লকার ব্যবহার করছেন, যার ফলে আমরা রেভেনিউ হারাচ্ছি, দয়া করে অ্যাড ব্লকারটি বন্ধ করুন।