এএইচএম ফয়সাল, মুহাম্মদ বেলাল ও অমিত হাসান এর কবিতা!
এএইচএম ফয়সাল, মুহাম্মদ বেলাল ও অমিত হাসান এর কবিতা
লুণ্ঠিত নগরী
– এএইচএম ফয়সাল
আমি তোমাদের সমাজে বেঁচে থাকা এক কুৎসিত জীবন,
আমার সুখের সর্বস্ব এই কদাকার আয়োজন।
আমি তোমাদের সভ্যতায় বেড়ে ওঠা এক বিশ্রী জীবন,
লাল নীল বাতিগুলো আমার হিংস্র ক্ষুধার ভোজন।
রাতের নিয়ন আলোয় তোমাদের দেখা এই বিদগ্ধ শহর,
আমার আলোতে নগ্ন, অভুক্ত, কংক্রিটে আবদ্ধ এক লুণ্ঠিত নগর।
এ যেন, সর্বশান্ত হওয়া বিনিদ্র নগরে মৃতপ্রায় সভ্যতার আর্তনাদ।
আহত হৃদয়ের আর্তনাদে আত্মহনন করে খুন রাঙা- লালিমাখা বদন;
ধর্ষিত হয় বিবেক, আত্মসম্মান, ধব্জাধারী চেতনা;
তবুও, আমরা ভালো থেকে যাই তোমাদের অভাবী শহরের ইট, পাথর আর কংক্রিটে লেগে থাকা ধূলিকণা খেয়ে।
তাতে মিশ্রিত, আশ্রিত, প্রচণ্ড বিষাক্ত, তেমাদের পরিত্যক্ত অক্সাইড আমরা ভক্ষণ করি।
আহ্ কী স্বাদ! চরম উপাদেয়।
তোমরা তুলোর আদরে ঘুমাও,
আমি তবু স্টেশনে ঘুমাব।
তোমরা আবেগ উড়াও,
আমি তবু হাসি বেঁচে সুখ কিনব।
লুণ্ঠিত এ নগরে সভ্যতার পশ্চাতে রয়ে যাওয়া,
আমি এক পথশিশু বলছি,
আমি ঠিকানাহীন তোমার স্বদেশি ভাই বলছি।
আরও পড়ুন: বই এবং বই পড়া!
অপ্রস্তুত অসময়
– এএইচএম ফয়সাল
জলছবি স্মৃতি ছুঁয়ে থাকে হৃদয়াবেগ,
ধুয়ে গেছে ধ্বনি তার;
মুছে গেছে পদচিহ্ন,
শব্দহীন সময়ের পারাবার!
তবু কেন এত দ্বীর্ঘশ্বাস;
কেন এত চাপাস্বর-
কেন তবে না পাওয়ার এত আর্তনাদ?
হয়তো শব্দহীন গভীর রাতে,
নয়তো নিঃস্তব্ধ এক সন্ধ্যায়,
অস্থিরতা ঘিরে ধরবে,
মনে পড়বে নির্ঘুম চোখের কথা,
আলো হয়ে হাসবে আমাদের সেই চপলতা।
মনে হবে,
সবই কেমন দুঃসহ যন্ত্রণাময়,
সবই কেমন অসহ্য আর্তনাদ!
সবই কেমন অকারণে কারণ খোঁজা;
সবই অকারণ।
অসময়ের সময়ে আবার যদি মনে আসে সে কথা,
ভুলে যেয়ো স্মৃতিসব, সব চঞ্চলতা;
খুলে দিয়ো অশ্রুদ্বার ভেঙে সব নীরবতা।
**********
সৃষ্টিশীলতার অবকাশ
– মুহাম্মদ বেলাল
সৃষ্টিশীলতার অবকাশ ছুঁয়েছে
এক আকাশ, এক সমুদ্র
একটি নদী, একটি মরুভূমি
এক হিমালয়, একটি পাহাড় নির্জন কানন, একটি দ্বীপ।
আমি তাদের অন্তে খুঁজেছি, ক্ষণিকের দেখা সেই শব্দ
ইশারায় ডাকা সেই বর্ণমালা।
কোথাও পাইনি, কোথাও পাই না,
কোথাও নেই,
সেই নেশাধরা শব্দরাশি; রিনরিনিয়ে নৃত্য করা বর্ণমালা।
না বলে হারিয়ে যাওয়া শব্দ আর, বর্ণমালার বিষাক্ত ছুরির আঘাতে-মস্তিষ্ক রক্তক্ষরণের স্রোতে ভেসেও হাসে।
তীব্র কষাঘাতের যন্ত্রণায় কুঁকড়ে উঠে বসে, আগ্রহ শুষে নেয় নিঃশ্বাসে, অন্তঃপুরে।
দেখা মেলে নতুন দূর দিগন্তে
তারা পাখা ঝাপটায়, হেসে, খেলে নৃত্য করে বেড়ায়।
কাছে এসে দেখি
তারা নয়, যারা হারিয়েছে
দেখা দিয়ে শূন্যে মিলিয়েছে।
**********
কিন্তু আমি আর
– অমিত হাসান
তারপরও একদিন বাগানে ফুল ফুটবে,
গাছে-গাছে পাখিরা গান করবে,
রাত হলে আকাশে
পূর্ণিমার চাঁদ জ্বলজ্বল করবে।
কিন্তু আমি আর তোমাকে ভালোবাসব না।
হয়ত একদিন বেকারত্ব ঘুঁচে যাবে,
রুপমের চাকরি হবে,
বেলা বোসও বিয়ে করে নেবে।
কিন্তু আমি আর তোমাকে ভালোবাসব না।
আবার বসন্ত আসবে বলে
হয়ত কোনো এক পৌষের রাতে
কোকিল গান গাইবে তার লক্ষীটির তরে।
কিন্তু আমি আর তোমাকে ভালোবাসব না।
হতে পারে কোনো একদিন
এই কার্তিক নবান্নের দেশে,
বনলতাকে নিয়ে জীবনানন্দও ফিরতে পারে।
কিন্তু আমি আর তোমাকে ভালোবাসব না।
হয়ত একদিন
রফিক আজাদেরও প্রতীক্ষা শেষ হবে,
পেয়ে যাবে তার প্রিয়তমাকে।
কিন্তু আমি আর তোমাকে ভালোবাসব না।