এখনো যক্ষ্মা শনাক্ত হয় বছরে ৩ লাখ!
এখনো বাংলাদেশে যক্ষ্মা শনাক্ত হয় বছরে ৩ লাখ!
১৮ বছর বয়সি রুবেলের কাশি ও বুকে ব্যথা দেখা দেওয়ায় বছর দুয়েক আগে শরণাপন্ন হন চিকিৎসকের কাছে। পরীক্ষায় ধরা পরে যক্ষ্মা। চিকিৎসা নিয়ে কিছুদিন স্বাভাবিক থাকার পর সম্প্রতি আবারও দেখা দেয় সে যক্ষার সমস্যা। জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতালে আনা হলে দেখা যায় mdr-tb তে আক্রান্ত। এ পর্যায়ে কাজ করে না প্রচলিত ঔষধ। বিশেষ শক্তিশালী এ ঔষধ নিতে পারেন না অনেকেই। সরকারি তথ্যমতে, ২০১৯ সালে দেশে প্রায় ৩ লক্ষ ব্যক্তি আক্রান্ত হয়েছেন জটিল রোগ যক্ষায়। অর্থাৎ প্রতি বছরে এখনো যক্ষ্মা শনাক্ত হয় তিন লাখ করে, যা খুবই দুঃশ্চিন্তার ব্যাপার!
রুবেল বলেন, মাস তিনেক আগে সে ঠিক ছিল এখন আবার কাশি শুরু হয়েছে এবং বুকের ব্যথাও। এ ছাড়াও আরও একজন বলেন, তার বাবা আগে সুস্থ ছিল, পরে ঔষধ খাওয়ানোর পর আরও অসুস্থতা অনুভব করছেন। আরও বলেন, প্রথম পরীক্ষা করিয়েছি, প্রথমেই ধরা পড়েছে! তারপর আবার হাসপাতালে গিয়েছি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যথাসময়ে শনাক্ত না হলে আর মাঝপথে ওষুধ ব্যবহার বন্ধ করে দিলে বিপজ্জনক হতে পারে যক্ষ্মা। আর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হলে যক্ষ্মা প্রতিরোধ সম্ভব। জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি প্রতিবেদন অনুযায়ী এক দশক আগে যেখানে শনাক্ত রোগীর বিপরীতে সুস্থতার হার ছিল ৯২%; আর তা এখন ৯৬%। আর মৃত্যুর হার ২.৯০%।
ডা. আহমেদ পারভেজ জাবীন জানান, ২ সপ্তাহের বেশি কাশি হলে আমার যক্ষ্মা হতে পারে, এই ধারণাটা কিন্তু সত্যি। আর সে জন্য সে নির্দিষ্ট পরীক্ষাকেন্দ্রে যাবে, নিজের কফটা পরীক্ষা করবে এবং দেখবে যে তার যক্ষা রোগ আছে কিনা। একজন চিকিৎসক যখন তার চিকিৎসা শুরু করবে তখনই তাকে একটা হেল্থ এডুকেশন দেবে। এর জন্য কিছু সময় তার জন্য ব্যয় করতে হবে তাকে একটু বুঝিয়ে বলতে হবে যে চিকিৎসা চলাকালীন সময় আপনার কয়েকবার কফ পরীক্ষা করতে হবে, আপনি সুস্থ হচ্ছেন কিনা, ওষুধটা আপনার উপকার হচ্ছে কিনা, এইটা দেখার জন্য।
আরও পড়ুন: ডিপ্রেশন কী এবং ডিপ্রেশন থেকে বের হওয়ার উপায়!
আমরা সচরাচর ছয় মাস মেয়াদের জন্য চিকিৎসা নেওয়া, আর দুই মাসের পরে আমরা একটা পরীক্ষার কথা বলি। তারপর ৫ মাসের ও ৬ মাস পর বলি একটা করে তিনবার আমরা পরীক্ষা করি এর মধ্যে যদি দুইবার শেষেরটা সহ তার যদি ২বার কোনো জীবাণু ধরা না পড়ে তখন আমরা তাকে সম্পূর্ণ সুস্থ বলতে পারি।
অধ্যাপক ডা. শাহেদুর রহমান খান বলেন, সে গুলো ইনফেকশন হয়ে যায়, যদি দেরিতে নির্ণয় হয়! আর বলা হয় একটা রোগী দশজনকে ইনফেকশন করে দিয়ে এসে চিকিৎসা নিতে আসছে। আমরা যদি একটু আক্রান্ত হবার সাথে সাথে পরীক্ষা করাতে পারি তাহলে কিন্তুু নিজেও বাঁচা যায় অন্যকেও আক্রান্ত হওয়া থেকে রক্ষা করা যায়।
স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালে দেশের শনাক্ত মোট যক্ষ্মা রোগী ২৯৩০০০। পরীক্ষার বিপরীতে প্রতি লাখে শনাক্ত ২২১ জন আর মৃত্যু ২৪ জন। ২০৩৫ সালের মধ্যে মৃত্যুহার ৯৫% আর আক্রান্তের হার ৯০ শতাংশ কমিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। তবে এ কর্ম পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
যক্ষ্মা বাংলাদেশের প্রচলিত একটি রোগ। এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির লক্ষণ:
শরীরের যে জায়গায় এ ভাইরাস আক্রান্ত করবে সে জায়গা ফুলে উঠবে। এ ছাড়া গলায় ব্যথা অনুভব হবে। মেরুদণ্ড ও ফুসফুস ফুলে উঠবে। শরীরের যে অংশে ভাইরাস আক্রান্ত করবে সে অংশ ফুলে যাবে সেটা হোক হাত-পা পেট। এ ভাইরাস যদি পেটে সংক্রমিত হয় তাহলে পেটে পানি চলে আসে। আবার সেটা যদি মস্তিষ্কে আক্রান্ত হয়, তাহলে মাথায় পানি চলে আসবে।এ ছাড়াও ক্ষুধামন্দা। হাত পা ব্যথা। শরীরে জ্বর জ্বর অনুভব করা। এসব উপসর্গ দেখা দিলে পরীক্ষা করার মাধ্যমে যক্ষ্মা শনাক্ত করা যেতে পারে।
যক্ষ্মায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের বাড়তি সতর্কতার তাগিদ দেয় বিশেষজ্ঞরা। যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে এখনো রয়ে গেছে অনেক চ্যালেঞ্জ, তবে সাফল্যের হার কম নয়! বিশেষজ্ঞরা বলছেন প্রাণঘাতী আর সংক্রামক ব্যাধি হলেও সচেতনতা আর চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলার মাধ্যমে সম্ভব যক্ষ্মা থেকে রক্ষা পাওয়া।